আজও যদি থিয়োডোসিয়াস বেঁচে থাকেন, আমার গর্দান নেয়া হবে। তবে শেষবার আমার পরিবারের সাথে মিলিত হবার জন্য খুশি মনে ঝুঁকিটা নেব আমি।
আমার অস্তিত্ব বিলীন হবার পর, যারা এই লেখা পড়বে, তাদেরকে বলছি, শিল্পকর্ম ও বই সম্পদ পাহাড়ের ভেতর বিশাল একটা চেম্বারে রাখা হয়েছে। সুড়ঙ্গ পথ আছে। উত্তরে দাঁড়াও, সোজাসুজি দক্ষিণে তাকাও, নদীর পাড় লক্ষ্য করে।
জুনিয়াস ভেনাটর।
১০ আগস্ট, তিনশো আটানব্বই খ্রিস্টাব্দ।
.
তার মানে ইন্ডিয়ানদের হামরা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন ভেনাটর, সাত বছর পর রোমে ফেরার পথে মারা যান, বলল পিট।
কিংবা রোমে হয়তো ঠিকই তিনি পৌঁছেছিলেন, তাঁর মৃত্যুদণ্ড চুপচাপ সেরে ফেলা হয়, বললেন অ্যাডমিরাল।
না, মাথা নেড়ে বলল লিলি। থিয়োডাসিয়াস মারা গেছেন তিনশো পঁচানব্বই সালে। ভেবে আশ্চর্য লাগছে, এত বছর, ধরে মেসেজটা পথে আছে এখানে, অথচ নকল বলে অগ্রাহ্য করা হয়েছে!
ভ্রু কুঁচকে স্যাম জানতে চাইল, তোমরা এই ভেনাটর ভদ্রলোককে চেনো নাকি?
আমরা তার খোঁজ করছিলাম, বলল পিট।
চেম্বারটা কখনও খুঁজেছেন আপনি, মি. স্যাম? জিজ্ঞেস করলেন অ্যাডমিরাল।
বুড়ো স্যাম গম্ভীর হলো। এদিকের সব কটা পাহাড় খোঁড়াখুঁড়ি করেছি। পাবার মধ্যে, এখানে যা কিছু দেখছেন।
কতটা গভীর?
বছর দশেক আগে ছমিটার গভীর একটা গর্ত করেছিলাম, ওই যে-শুধু একটা স্যান্ডেল পেয়েছি-কেসের ভেতর দেখতে পাচ্ছেন।
পাথর আর শিল্পকর্মগুলো যেখানে পেয়েছেন, জায়গাটা আমাদেরকে দেখাতে পারবেন?
প্রশ্নটা পিট করলেও, বুড়ো স্যাম ডক্টর হার্বের দিকে তাকাল। কোনো অসুবিধা নেই তো হার্ব?
এদের তুমি বিশ্বাস করতে পারো, স্যাম কাকা। এরা তোমার শিল্পকর্ম চুরি করতে আসেনি।
ঠিক আছে, ঠিক আছে, ঘন ঘন মাথা ঝাঁকালো স্যাম ট্রিনিটি। চলো তাহলে, এক্ষুনি রওনা দিই। বাইরে আমার জিপ আছে।
.
মেঠো পথ ধরে ছুটল স্যামের পুরনো জিপ। কয়েকটা আধুনিক বাড়িকে পাশ কাটিয়ে এল ওরা। সামনে পড়ল কাটাতারের দীর্ঘ রেড়া জিপ থেকে নেমে গিয়ে হুক খুলে বেড়ার একটা অংশ সরাল স্যাম, সামনের পথটা ঝোঁপ-ঝাড়ে প্রায় ঢাকা পড়ে আছে।
খানিক পর একটা ঢাল বেয়ে উপরে উঠে এল জিপ, ইঞ্জিন বন্ধ করে স্যাম জানাল, এই জায়গা। গনগোরা হিল। অনেক দিন আগে কে যেন বলেছিল আমাকে, পাহাড়টার নাম রাখা হয়েছ সপ্তদশ শতাব্দীর এক স্প্যানিশ কবির নামে। আবর্জনার এক স্তূপ কেন একজন কবির নাম পেল, ঈশ্বরই বলতে পারবেন।
উত্তর দিকে চারশো মিটার দূরে একটা পাহাড়ের দিকে ইঙ্গিত করল পিট। ওই রিজটাকে কী নামে ডাকা হয়?
ওটার কোনো নাম আছে বলে আমার জানা নেই।
পাথরটা আপনি কোথায় পান? লিলির প্রশ্ন।
দাঁড়াও, আরেকটু সামনে। ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে ঢাল বেয়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করল স্যাম, ঘন ঝোঁপগুলোকে সাবধানে এগিয়ে যাচ্ছে। মিনিট দুয়েক ঝাঁকি খাবার পর অগভীর বড়সড় একটা গর্তের পাশে থাকল জিপ। নিচে নেমে কিনারায় গিয়ে দাঁড়াল সে, ঝুঁকে নিচে তাকাল। ঠিক এখানে পেয়েছি। একটা কোণ পার থেকে বেরিয়ে ছিল।
গর্তের দিতে ইঙ্গিত করল পিট। এই শুকনো গর্ত, বলল ও, গনগোরা আর দূরের ওই পাহাড়ের মাঝখানে জোরাল বাতাস থাকায় তৈরি হয়েছে।
মাথা ঝাঁকাল বুড়ো স্যাম। হ্যাঁ, কিন্তু ওখান থেকে গনগোরার নিচের ঢালে পাথর নেমে আসার কোনো উপায় নেই, যদি না কেউ টেনে আনে।
এলাকাটা সমতল নয় যে বন্যা হতে পারে, বললেন অ্যাডমিরাল। অবশ্য। দীর্ঘদিন তুমুল বৃষ্টি হলে গণগোরার চূড়া থেকে পঞ্চাশ মিটার নেমে আসা বিচিত্র কিছু নয়, কিন্তু পরবর্তী চূড়ার আধ কিলোমিটারের মধ্যে এনে ফেলা সম্ভব নয়।
আর সব শিল্পকর্ম? প্রশ্ন করল লিলি। ওগুলো কোথায় পেয়েছেন?
নদীর দিকে হাত তুলল স্যাম। ঢালের আরও খানিক নিচ থেকে শহরের মাঝখান পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল ওগুলো।
জায়গাগুলো চিহ্নিত করেছেন?
দুঃখিত, মিস, আমি তো আর আর্কিওলজিস্ট নই।
হতাশ বোধ করলেও চুপ করে থাকল লিলি।
আপনি নিশ্চয়ই মেটাল ডিটেকটর ব্যবহার করেছেন?
পিটের দিতে ফিরল স্যাম। নিজেই ওটা তৈরি করে নিই। আধ মিটার দূরে একটা পেনি পড়ে থাকলেও ধরা পড়ে।
জায়গাটার মালিক কে?
টেক্সাস রিপাবলিক হবার সময় থেকে বারোশো একর আমার, পারিবারিক সূত্রে।
আইনগত ব্যাপারে ঝামেলা হবে না, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন অ্যাডমিরাল।
হাতঘড়ি দেখল পিট। পাহাড়ে ওদিকে ঢলে পড়েছে সূর্য। ইন্ডিয়ান আর রোমান ঈজিপশিয়ানদের তুমুল যুদ্ধটা নদী ও প্রাচীন জাহাজগুলোর দিকে সরে যাচ্ছে, মনের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করল ও। আহত মানুষদের কাতর চিৎকার, অস্ত্রের ঝনঝনানি, সবই যেন শুনতে পাচ্ছে। কত শত বছর আগের ঘটনা অথচ মনে হলো গতকাল ঘটেছে, ওর চোখের সামনে। লিলির প্রশ্ন শুনে বাস্তবে ফিরে এল পিট।
আশ্চর্য, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আপনি কোনো হাড় খুঁজে পাননি?
স্প্যানিশ নাবিকরা, স্যামের বদলে জবাব দিল হার্ব গার্জা, টেক্সাস গালফ কোস্টে যাদের জাহাজডুবি ঘটে, অল্প দুচারজন দেশে ফিরতে পেরেছিল, মেক্সিকো সিটিতে ফিরে গিয়ে নরখাদক ইন্ডিয়ানদের গল্প করেছে তারা।
শিউরে উঠে লিলি বলল, নিহত লোকগুলোকে খেয়ে ফেলা হয়েছে, এ কথা আপনি জোর গলায় বলতে পারেন না।