অনেক বয়স স্যামের, পঁচাত্তরের কম নয়, চামড়ায় প্রচুর ভাজ আর রেখা, কিন্তু তার পেশিতে সামান্যতম ঢিল পড়েনি। এমন চটপটে, এখনও যেন তরতাজা যুবক সে। গাঢ় সবুজ রঙের শার্ট পরে আছে, হলুদ স্ন্যাকস, পায়ে লিজার্ড গলফ শু, মাথায় সাদা ক্যাপ। হাতে একজোড়া গলফ ক্লাব নিয়ে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।
হেলিকপ্টার থেকে প্রথমে হার্ব গাঁজা নামল।
এই যে, স্যাম কাকা, তোমার মাটি আঁচড়ানোর কাজ কেমন চলছে?
আরে, এ যে দেখছি আমাদের মাটি মাপার ঠিকাদার হার্ব গার্জা। তা কেমন আছ হে? বুড়ো স্যাম ভাঙা দাঁত বের করে হাসল।
স্যামের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিল হার্ব গার্জা, তবে ভাব দেখে বোঝা গেল খেয়াল করে শুনছে না সে। বাতাসে হাত ঝাঁপটা নিয়ে হার্বকে থামিয়ে লি বুড়ো, বলল, আপনারা আসায় আমি খুশি হয়েছি। স্যামস রোমান সার্কাসে আপনাদেরকে স্বাগতম জানাই। হঠাৎ পিটের মুখের দিকে চেয়ে থমকে গেল সে। একি, ভাগ্নে, লরির তলায় পড়েছিলে নাকি?
হেসে ফেলে পিট বলল, ঘাতক ট্রাক-হা, ঠিকই ধরেছেন।
এখানে গলফ খেলেন কোথায়? জিজ্ঞেস করলেন অ্যাডমিরাল। দুপা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।
রিয়ো গ্র্যান্ড সিটি গলফ কোর্সে, গর্বের সাথে জবাব দিল স্যাম। কয়েকজন বুড়ো আর্মি অফিসার আছে, আমার বন্ধুবান্ধব, তাদের সাথে খেলি। এই তো ফিরলাম।
হার্ব গাঁজা বলল, স্যাম কাকা, আমরা তোমার মিউজিয়ামে একবার উঁকি দিতে চাই।
ভারি মিশুক লোক, বিড়বিড় করে বললেন অ্যাডমিরাল।
আপনি যদি ভালো হন, নিচু গলায় জবাব দিল হার্ব গার্জা। আর যদি ওর কমতি করার চেষ্টা করেন, আপনার লাইফ স্রেফ হেল করে ছেড়ে দেবে।
দোকানের ভেতর দিয়ে ওদেরকে মিউজিয়ামে নিয়ে এল সে। ঘরটা বড়ই, পাশাপাশি দুটো গাড়ি রাখা যাবে। কাঁচমোড়া অনেক বাক্স দেখা গেল। অসংখ্য মামের তৈরি পুতুল রয়েছে, রোমান যুগের পোশাক পরা। শিল্পকর্ম রাখা হয়, তাই ধুলো ঠেকানোর জন্য জানালা আর দরজায় কাঁচ আছে। প্রতিটি শিল্পকর্ম চকচক করছে, একটাতেও মরচে ধরেনি।
লিলির সাথে একটা অ্যাটাশে কেস রয়েছে। সেটা থেকে ছবি বহুল মোটা একটা বই বেরোলো। স্যামের শিল্পকর্মগুলো ছবির সাথে মেলাতে শুরু করল সে।
লক্ষণ তো ভালোই মনে হচ্ছে, কয়েক মিনিট মিলিয়ে দেখার পর বলল সে। তলোয়ার আর বর্শার মাথাগুলোর সাথে চতুর্থ শতাব্দীর রোমান অস্ত্রের মিল আছে।
উত্তেজিত হবেন না, সতর্ক করে দিল হার্ব গার্জা। স্যাম কাকা সম্ভবত নিজের হাতে তৈরি করেছে ওগুলো, রোদে ফেলে রেখে আর এসিড ঢেলে বয়স বাড়িয়েছে।
উঁহু, উনি এগুলো তৈরি করেননি, স্পষ্ট করে বললেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার।
চোখে কৌতূহল নিয়ে তার দিকে তাকাল হার্ব গার্জা। কীভাবে বলেন, অ্যাডমিরাল? গালকে প্রি-কলোম্বিয়ান কন্ট্যাক্টের কোনো রেকর্ড নেই।
এখন আছে।
আমার জন্য একটা বিস্ময়কর খবর, স্যার!
ঘটনাটা ঘটেছিল তিনশো একানব্বই সালে, ব্যাখ্যা করল পিট। জাহাজের একটা বহর রিয়ো গ্র্যান্ড ধরে এসেছিল। আজ যেখানে রোমা, সেখানে। শহরের পেছনে কোনো একটা পাহাড়ে, রোমান মার্সেনারি, তাদের ক্রীতদাস ও মিসরীয় পণ্ডিতরা আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির বিশাল সংগ্রহ লুকিয়ে রেখে গেছে।
জানতাম! আমি জানতাম! খোলা দরজা থেকে উল্লাসে চিৎকার করে উঠল বুড়ো স্যাম। হাতের ট্রে একটুর জন্য পড়ল না। রোমানরা অবশ্যই টেক্সাসের মাটিতে পা রেখেছিল।
আপনার বিশ্বাসই ঠিক, মি. ট্রিনিটি, অ্যাডমিরাল বললেন। বাকি সবাই ভুল করেছে।
কয়েক যুগ ধরে চিৎকার করছি আমি, কেউ আমার কথা শোনেনি! গলা খাদে নামিয়ে বিড়বিড় করে বলল বুড়ো স্যাম। ছলছল করছে চোখ। জানেন, পাথরের লেখাগুলো যখন দেখালাম, বলে কিনা এগুলো আমি নিজে লিখেছি!
পাথর? পাথরের ওপর লেখা? কোথায়? তীক্ষ্ণ কণ্ঠে জানতে চাইল লিলি।
ওই কোণে, খাড়া করে রাখা আছে। অনেক কষ্টে লেখাটা আমি অনুবাদও করি। অফিসাররা দেখে হেসেই অস্থির, বলে তোমার ল্যাটিন তো চমৎকার, স্যাম, চালিয়ে যাও, বুড়ো বয়েসে দুপয়সা কামালে আমরা কেন বাধা দিতে যাই। ওদের ধারণা আমি নকল করেছি।
অনুবাদ করা মেসেজের কোনো কপি আছে? জিজ্ঞেস করল লিলি।
ওদিকে দেয়ালে পাবে। টাইপ করিয়ে, কাঁচ দিয়ে বাধিয়ে রেখেছি।
বাঁধানো ফ্রেমটার সামনে দাঁড়িয়ে পড়তে শুরু করল লিলি, সবাই তার দুপাশে ভিড় করল।
.
আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি আমি লুকিয়ে রেখেছি। এই পাথরে তার সূত্র থাকল।
অসভ্যরা আমার জাহাজ বহরে আগুন ধরিয়ে দিল, আমি পানিতে নেমেও অবশিষ্ট একমাত্র জাহাজটাকে ধরতে পারলাম না। তবে, কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে গেলাম, দক্ষিণ দিকে যাত্রা করে আশ্রয় পেলাম প্রাচীন পিরামিড গোষ্ঠীর কাছে, তারা আমাকে উদ্ধারকর্তা ও প্রেরিত পুরুষ হিসেবে গ্রহণ করল।
নক্ষত্র এ বিজ্ঞান সম্পর্কে যা কিছু জানি, সব ওদেরকে শেখালাম আমি। কিন্তু আমার শিক্ষা কর্মক্ষেত্রে খুব কমই ব্যবহার করল ওরা। ওরা বরং মূর্তিপূজা বেশি পছন্দ করে, অজ্ঞ ওঝাদের পরামর্শমতো মানুষ বলি দেয়।
এখানে আশ্রয় পাবার পর সাতটি বছর পেরিয়ে গেছে। ফিরে এসে দেখি আমার পুরনো বন্ধু-বান্ধবদের হাড়গোড় চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। আমি সেগুলো মাটি চাপা দেয়ার ব্যবস্থা করলাম। আমার জাহাজ তৈরি হয়ে গেছে। শিগগিরই রোমের উদ্দেশে যাত্রা করব আমি।