রিয়ে গ্র্যান্ড। শব্দটা ধীরে ধীর কয়েকবার উচ্চারণ করল পিট। নদীটাকে খুঁজে বের করতে এত বেগ পেতে হয়েছে সে সত্যি ওটা পাওয়া গেছে বলে বিশ্বাস করতে পারছে না ও।
সত্যি অত্যন্ত দুঃখজনক একটা ঘটনা, হঠাৎ বিষণ্ণ সুরে বলল ইয়েজার।
কী ব্যাপার, এ কথা বলছ কেন?
মাথা নাড়তে নাড়তে ইয়েজার বলল, টেক্সানরা কেমন তা তো জানো তুমি। যখন জানবে ষোলোশো বছর ধরে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির ওপর বসে আছে ওরা, কোনো ভদ্রলোকের পক্ষে ওদের সাথে বসবাস করা সম্ভব হবে?
৬৫. এয়ার স্টেশনে ল্যান্ড করার পর
৬৫.
পরদিন দুপুরে, কর্পাস ক্রিস্টি ন্যাভার এয়ার স্টেশনে ল্যান্ড করার পর, নুমার ওশেন রিসার্চ সেন্টার থেকে পাঠানো একজন সিম্যান ফার্স্ট ক্লাস পিট, লিলি ও অ্যাডমিরাল স্যানডেকারকে গাড়িতে তুলে নিল। লম্বা একটা ডকের পাশে কংক্রিট প্যাডে অপেক্ষারত হেলিকপ্টারে কাছে থামার নির্দেশ দিলেন অ্যাডমিরাল। মাথার ওপর কোনো মেঘ নেই, গোটা আকাশে একাই রাজত্ব করছে সূর্য। তাপমাত্রা সামান্য, তবে আর্দ্রতা যথেষ্ট, গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে ঘামতে শুরু করল ওরা।
হাত নেড়ে ওদের দিকে সাহায্যে এগিয়ে এল নুমার চিফ ভূ-তত্ত্ববিদ, হার্ব গার্জা। তেমন লম্বা নয় সে, মুখে দুএকটা বসন্তের দাগ, গায়ের রং তামাটে, মাথায় চকচকে কালো চুল। লাল আর উজ্জ্বল হলুদ সুতি কাপড়ের শার্ট পরে আছে সে। ড. হার্ব ভারী গলায় বললেন অ্যাডমিরাল। আবার তোমার সাথে দেখা হওয়ায় খুশি হ মি।
আপনাদের আসার অপেক্ষায় ছিলাম, বাদাম চিবাতে চিবাতে বলল হার্ব গার্জা। এক্ষুনি আপনারা রওনা হতে পারেন। জো মিনি, পাইলটের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল সে, লোকটা স্মাইলিং জ্যাক সানগ্লাস পরে আছে।
ডক্টর হার্বের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকায় কিছুদিন কাজ করেছে পিট, সময়টা ওদের ভালোই কেটেছিল।
কদ্দিন হলো বলো তো, হার্ব? তিন, নাকি চার বছর? কে হিসাবে রাখে? করমর্দনের সময় চওড়া হাসি উপহার দিল হার্ব গার্জা। তোমার সাথে আবার জোট বাঁধতে রীতিমতো রোমাঞ্চ অনুভব করছি।
ড. লিলি শার্পের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি?
সম্ভমের সাথে বাউ করল হার্ব গার্জা। সমুদ্রবিজ্ঞানী?
মাথা নাল লিলি। ল্যান্ড আর্কিওলজি।
চেহারায় কৌতূহল নিয়ে অ্যাডমিরালের দিকে তাকাল হার্ব গার্জা। এটা কি ফি প্রজেক্ট, অ্যাডমিরাল?
না, হার্ব। সবটা তোমাকে জানানো হয়নি বলে দুঃখিত। কি জানো, আমাদের আসল উদ্দেশ্য কিছুদিন গোপন রাখতে হবে।
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকাল হার্ব গার্জা। আপনি হলেন বস।
আমাকে শুধু একটা দিক বলে দিন, বলল জো মিফিন।
দক্ষিণ, জানাল পিট। দক্ষিণে রিয়ো গ্র্যান্ড নদী।
.
ইন্টারকোস্টাল ওয়াটারওয়ে বরাবর উড়ে চলল হেলিকপ্টার। সাউথ পাদ্রী দ্বীপের হোটেল আর বাড়িঘর ছাড়িয়ে এল ওরা, হেলিকপ্টারের নাক ঘুরে গেল পশ্চিম দিকে। নিচে এল এল পোর্ট ইসাবেল, ওখানে রিয়ো গ্র্যান্ড-এর পানি গালফ অভ মেক্সিকোতে গিয়ে মিশেছে।
নিচের দ্বীপটায় ঝোঁপ-ঝাড় আর মরুভূমি পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে। চাতালের মতো সমতল, বড় বড় গাছের পাশে ক্যাকটাস গজিয়েছে। একটু পরই সামনে দেখা গেল ব্রাউনসভিল শহর। ব্রিজের কাছে সরু হয়ে গেছে নদীটা। ব্রিজের ওপারে মাটামোরোস, মেক্সিকো।
কী সার্ভে করতে হবে, আমাকে বলা যায়? জিজ্ঞেস করল হার্ব গার্জা।
তুমি তো রিয়ো গ্র্যান্ড উপত্যকায় মানুষ হয়েছ, তাই না? জবাব না দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন অ্যাডমিরাল।
লরেডো নদীর উজানে জন্মেছি, বড় হয়েছি। লেখাপড়া শিখেছি ব্রাউনসভিল কলেজে। এইমাত্র ছাড়িয়ে এলাম ওটকে।
রোমার চারপাশের জিওলজি সম্পর্কে তুমি তাহলে পরিচিত।
এলাকাটায় কয়েকবারই সার্ভের কাজ করেছি, হ্যাঁ।
আলোচনায় যোগ দিল পিট, আজকের তুলনায় যিশু খ্রিস্টের কয়েকশো বছর পর নদীটা কত দূরে ছিল?
পানির প্রবাহে খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি, বলল হার্ব গার্জা। তবে, অবশ্যই, বন্যার কারণে পানির গতিপথ বদলেছে দু-মাইলের কিছু বেশি। কয়েকশো বছরে কয়েকবারই পুরনো গতিপথে ফিরে এসেছে নদী। তখনকার দিনে রিয়ো গ্র্যান্ড সম্ভবত অনেক উঁচু ছিল। মেক্সিকোর সাথে যুদ্ধের আগে নদীটা চওড়া ছিল দুশো থেকে চারশো মিটার। মেইন চ্যানেল ছিল খুবই গভীর।
প্রথম একজন ইউরোপিয়ান কবে ওটাকে দেখে?
পনেরোশো উনিশ সালে এই নদীতে জাহাজ নিয়ে এসেছেন আলোনজা ডি পিনেড়া।
মিসিসিপির সাথে ওটার কী সম্পর্ক ছিল সেই আমলে?
এক মুহূর্ত ভেবে নিল হার্ব। আসলে নীল নদের সাথে বেশি সম্পর্ক ছিল নদীটার।
এঁকেবেঁকে এগিয়েছে নদী। ঢেউ খেলানো দুচারটে পাহাড় দেখা গেল। সীমান্তের ওপারে, মেক্সিকোয় দেখা গেল ছোট ছোট কয়েকটা শহর, ধুলোয় প্রায় ঢাকা পড়ে আছে। কিছু ঘরবাড়ি পাথরে তৈরি, কিছু ইট দিয়ে গাথা, মাথার ওপর লাল টালি। শহরের বাইরে কুঁড়েঘর। নদীটা কোথাও গভীর নয়, পানির রং গাঢ় সবুজ।
রিয়ো গ্র্যান্ড সম্পর্কে ওদের আগ্রহ আছে বুঝতে পেরে অনেক কথাই বলে গেল হার্ব গার্জা। প্রাচীন যুগেও নদীটায় জাহাজ চলাচল করত। বসতি স্থাপনকারীরা নদীটার দুই তীর ধরে আসা-যাওয়া করেছে। একসময় ঘোষণা করল সে, রোমার ওপর চলে আসছি আমরা। নদীর ওপারে মিগুয়েল এলমান, রোমার সিস্টার সিটি বলা হয়। নামকাওয়াস্তে শহর, ট্যুরিস্টদের জন্য দুএকটা অ্যান্টিকস শপ ছাড়া তেমন কিছু নেই ওখানে। রাস্তার ওপর স্রেফ একটা বর্ডার ক্রসিং, রাস্তাটা চলে গেছে মন্টেরিরর দিকে।