ডিনার খাওয়ার কথাটা কিন্তু বেমালুম ভুলে গেছেন।
সময় করে কায়রোতে একবার আসুন না, প্লিজ। আগেই বলে রাখছি, বিল কিন্তু আমি দেব।
ওদের কথা শুনতে পেয়ে এগিয়ে এলেন সিনেটর পিট। কায়রো, মিস কামিল, নিউ ইয়র্ক নয়?
হে’লা কামিলের নয়, হাসিটা যেন রানী নেফারতিতির। বললেন, না, নিউ ইয়র্কে নয়, কায়রোয়। মহাসচিবের পদে ইস্তফা দিয়ে দেশে ফিরে যাচ্ছি শীঘই। গণতন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে মিসরে। ওটাকে রক্ষার জন্য নিজের লোকদের মধ্যে থেকে অনেক বেশি সাহায্য করতে পারব আমি।
কিন্তু আখমত ইয়াজিদ?
প্রেসিডেন্ট হাসান আমাকে কথা দিয়েছেন,তাকে গৃহবন্দি করা হবে।
চিন্তার রেখা ফুটল সিনেটর পিটের কপালে। সাবধান থাকবেন। গৃহবন্দি অবস্থায়ও বিপজ্জনক একটা পশু সে।
হয় আখমত ইয়াজিদ, নয়তো তার মতো আর কেই বা সব সময়েই আশপাশে থাকবে, হেলার হাসিতে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠল। ওদেরকে ভয় করা কাজের লোকের সাজে না। মার্কিন প্রশাসনে আপনার অনেক বন্ধু আছেন, দয়া করে ওঁদের জানাবেন, মিসর কোনো দিনই মৌলবাদীদের খেলনার সামগ্রী হবে না।
ছোট্ট করে মাথা ঝাঁকালেন সিনেটর পিট।
আবার মাথা ঝাঁকাতে গিয়ে স্থির হয়ে গেলেন সিনেটর পিট। তিনি দেখলেন, পিটের চেয়ারের হাতল ধরে ওর দিকে ঝুঁকে পড়লেন হে’লা কামিল, চুমো খেলেন পিটের কপালে।
সিধে হলেন তিনি, একটা হাত বাড়িয়ে এলোমেলো করে দিলেন পিটের চুল। আমাকে ভুলে যাবেন না, বলে চেয়ারটাকে ঘুরে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলেন প্লেনে। তাঁর গমনপথের দিকে তাকিয়ে থাকল পিট।
ওরা তোমার জন্য একটা অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছে, সিনেটরের কথায় সংবিৎ ফিরল পিটের।
অ্যাম্বুলেন্স? হাসপাতালে যেতে হবে? কিন্তু, … কথা শেষ না করে মুখ আর মাথার ব্যান্ডেজ খুলে ফেলে দিল ও। আমি তো সম্পূর্ণ সুস্থ বোধ করছি
বেশি বাড়াবাড়ি করছে বলে মনে হচ্ছে না?
জানি, গম্ভীর সুরে বললেন সিনেটর পিট। সেজন্যই তো ফেরত পাঠিয়েছি অ্যাম্বুলেন্স। তুমি নুমা হেডকোয়ার্টারে যাচ্ছ।
তুমি হোয়াইট হাউসে যাবে কীভাবে?
অপেক্ষারত একটা হেলিকপ্টারের দিকে ইঙ্গিত করলেন সিনেটর পিট। প্রেসিডেন্ট আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
যাবার পথে আমাকে একটু নামিয়ে দেবে নুমা হেডকোয়ার্টারে?
এসো, তোমাকে হেলিকপ্টারে তুলি, বলে পিটের চেয়ারটা নিজেই পেছন থেকে ঠেলতে শুরু করলেন সিনেটর পিট।
.
উত্তেজনা বাড়তে বাড়তে টান পড়া গিঁটের মতো অনুভূতি হলো পিটের তলপেটে। এলিভেটরে দাঁড়িয়ে আছে ও, সংখ্যাগুলোকে উঠে যেতে দেখছে নুমার কাম্পউটর কমপ্লেক্সে। দরজা খুলে গেল, খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরোবার সময় আউটার অফিসে লিলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল ও। হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে আছে মুখ।
পিটের বিধ্বস্ত চেহারা দেকে ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে গেল হাসিটা। পিটের চোয়ালে এখনো প্লাস্টার লাগানো রয়েছে, বসের কাছ থেকে ধার করা সোয়েটারের ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে সাদা ব্যান্ডেজ, হতে ছড়ি থাকলেও একটু একটু খোঁড়াচ্ছে। তারপর, পিটের কথা ভেবে, ওকে সাহস দেয়ার জন্য, উজ্জ্বল হাসিতে আবার চেহারাটা উদ্ভাসিত করে তুলল লিলি। ওয়েলকাম হোম, সেইলর!
সামনে এগিয়ে এসে হাত দুটো পিটের গলার দুপাশে ছুঁড়ে দিল সে। কুঁকড়ে গেল পিট, নিঃশ্বাসের সাথে গুঙিয়ে উঠল।
লাফ দিয়ে সের যাবার চেষ্টা করল লিলি। ওহ দুঃখিত।
তাকে আঁকড়ে ধরল পিট। হয়ো না, বলে তার ঠোঁটের ওপর নিজের ঠোঁট দুটো রাখল সে। লিলির নরম মসৃণ চামড়ায় খোঁচা খোঁচা শক্ত দাড়ি বিধে গেল, পুরুষ সুলভ গন্ধ ঢুকল নাকে।
ছাড়া পেয়ে, প্রথম সুযোগেই অভিযোগের সুরে লিলি বলল, যেসব পুরুষ সপ্তায় এতবার বাড়ি ফেরে তাদের সম্পর্কে কিছু বলার আছে।
আর যেসব মেয়েরা অপেক্ষা করে তাদের সম্পর্কেও কিছু বলার আছে। পিছিয়ে গেল পিট। চারদিকে তাকাল। আমি যাবার পর কী আবিষ্কার করলে তোমরা?
ইয়েজারের মুখ থেকেই শোনা, চাপা উত্তেজনার সাথে বলল লিলি, পিটের হাত ধরে টেনে নিয়ে বলল কম্পিউটর সেকশনের দিকে।
নিজের অফিস থেকে ছুটে বেরিয়ে এল ইয়েজার। পিটের চেহারা দেখে তার কোনো প্রতিক্রিয়া হলো না। অভিনন্দন বা সহানুভূতি জানানোর কথাও মনে থাকল না। প্রায় নাচতে শুরু করল সে, চিৎকার করে ঘোষণা করল, পেয়ে গেছি! পেয়ে গেছি!
নদীটা? ব্যগ্রতার সাথে জানতে চাইল পিট।
শুধু নদীটা নয়। যে গুহার ভেতর শিল্পকর্মগুলো রাখা আছে, তোমাকে আমি তার দু-মাইলের মধ্যে পৌঁছে দিতে পারি।
কোথায়?
টেক্সাস! ছোট্ট একটা সীমান্ত শহর রোমায়।
ইয়েজার আর লিলির কাঁধে ভর দিয়ে অফিসে ঢুকছে পিট, জানতে চাইল, ঠিক তো?
একশো ভাগ ঠিক, পিটের কানের কাছে মুখ এনে গলা ফাটাতে শুরু করল ইয়েজার। সাতটা পাহাড়ের নামকরণ করা হয় রোম। তেমন উঁচু নয় কোনোটাই, প্রায় কোনো গুরুতুই বহন করে না, স্বীকার করছি। কিন্তু রিপোর্ট আছে, অনেক দিন আগে থেকেই এলাকার মাটি খুঁড়ে রোমান শিল্পকর্ম উদ্ধার করা হচ্ছে। বড় বড় নামকরা আর্কিওলজিস্টরা ভুয়া বলে অগ্রাহ্য করেছেন, কিন্তু তারা কি জানেন?
তাহলে নদীটা হলো…?
রিয়ো ব্র্যাভো, স্প্যানিশ ভাষায় এই নামেই ডাকা হয়, মাথা ঝাঁকাল ইয়েজার। সীমান্তের এদিকে সবাই ওটাকে রিয়ো গ্র্যান্ড বলে।