উদ্বিগ্ন হলেন ডাক্তার। দুঃখিত। বিছানার পাশে রসিকতা না করে আমি থাকতে পারি না।
পেশি ঢিল করল পিট, ধীরে ধীরে ব্যথা গেল।
ওঁরা সবাই অপেক্ষা করছেন, বলে ইঙ্গিতে দরজাটা দেখিয়ে দিলেন ওয়েস্টার। আমি তাহলে যাই এখন।
ধন্যবাদ, ড. ওয়েবস্টার।
চোখ মটকে মাথা ঝাঁকালেন ভদ্রলোক, দরজার কাছে পৌঁছে কবাট খুলে সরে দাঁড়ালেন একপাশে। হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে পড়লেন সবাই।
প্রথমে ঢুকলেন সিনেটর পিট। তার পেছনে হে’লা কামিল, কর্নেল হোলিস ও ক্যাপটেন কলিন্স।
হে’লা চুমো খেল ওর কপালে।
আশা করি, আমার জাহাজে আপনার সেবা-যত্নের কোনো ত্রুটি হচ্ছে না, মি. পিট? জানতে চাইলেন কলিন্স।
স্বর্গে আছি, ক্যাপটেন…, শুরু করল পিট।
আর মাত্র নব্বই মিনিটের জন্য, ভারী গলায় বললেন সিনেটর পিট। তুমি, আমি আর মিস কামিল পান্টা অ্যারেনাস থেকে এয়ারফোর্সের একটা প্লেনে করে ওয়াশিংটন যাচ্ছি।
ওঁরা ভেতরে ঢোকার পর এক মিনিটও পেরোয়নি, নিজের গরজেই কাজের কথা পাড়ল কর্নেল হোলিস। সুলেমান আজিজকে আবার দেখলে আপনি চিনতে পারবেন, মি. পিট?
পারব, সংক্ষেপে বলল পিট। কেন, ঘুমিয়ে পড়ার আগে আপনাকে তো আমি সুলেমান আজিজের চেহারা সম্পর্কে বলছি। সে ধরা পড়েনি?
কর্নেল হোলিস ওর হাতে কয়েকটা ফটো ধরিয়ে দিল। জাহাজের ফটোগ্রাফার তুলেছে এগুলো, বন্দি ও নিহত হাইজ্যাকাদের লাশ। দেখুন তো, এদের মধ্যে আল সুলেমান আজিজ আছে কি না?
ফটোগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখল নারা। না, নেই।
নিঃশব্দে আরও একটা ফটো পিটের দিকে বাড়িয়ে দিল কর্নেল। এটা দেখুন।
অন্যগুলোর চেয়ে আকারে বড় ফটোটা। একবার চোখ বুলিয়েই মুখ তুলল পিট। কী শুনতে চান আপনি?
ফটোর লোকটা কি সুলেমান আজিজ?
কর্নেলের হাতে ফটোটা ফিরিয়ে দিল পিট। আপনি খুব ভালো করেই জানেন, ওটা সুলেমান আজিজের ফটো। তা না হলে এমন নাটকীয় ভঙ্গিতে আমাকে দেখাতেন না।
হোলিস আসলে চেপে রাখার চেষ্টা করছে যে, বললেন সিনেটর, মৃত বা জীবিত সুলেমান আজিজকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জেনারেল ফ্রাঙ্ক ডজ সুলেমান আজিজকে এই ফটোটা রেডিওতে পাঠিয়েছেন, বলল কর্নেল। আমার পরবর্তী অ্যাসাইনমেন্ট তাকে খুঁজে বের করা।
ধরা যখন পড়েনি, বলল পিট, নিশ্চয়ই তার লোকজন তাকে দ্বীপে কোথাও কবর দিয়েছে। লক্ষ্য ব্যর্থ হয়নি আমার। কাঁধে আর মুখে তিনটে গুলি লেগেছে। পড়ে যাবার পর তাকে নিরাপদ আড়ালে টেনে নিয়ে গেছে এক লোক। হাচার ক্ষমতা তার ছিল না।
মরে গিয়ে না থাকলে সুলেমান আজিজ আপনার জন্য একটা দুঃসংবাদ, মি. পিট, শান্ত গলায় বলল কর্নেল। কারণ, তা না হলে, সে তার পরবর্তী খুনের তালিকায় সবার উপরে লিখবে-ডার্ক পিট।
ডার্ক অত্যন্ত দুর্বল, দুহাত দুদিকে বাড়িয়ে পিটকে যেন আগলানোর চেষ্টা করলেন হে’লা কামিল। ভালো খাবার দরকার ওর, বিশ্রাম দরকার। মাত্র এক ঘণ্টার মতো সময় আছে, আমাদের উচিত ওকে একটু একা থাকতে দেয়া।
ফটোগুলো এনভেলাপে ভরে পিটের দিকে তাকাল কর্নেল। পিটের দিকে একটা হাত বাড়াল সে।
তাহলে এক্ষুনি আপনাকে শুভেচ্ছা জানাতে হয়, মি. পিট। সুলেমান আজিজকে খোঁজার জন্য সান্টা ইনেজ দ্বীপে যেতে হবে আমকে, একটা হেলিকপ্টার অপেক্ষা করছে।
মেজর ডিলিঞ্জারকে আমার ধন্যবাদ জানাবেন, বলল পিট।
জানাব। এক মুহূর্ত ইতস্তত করল কর্নেল, যেন অস্বস্তি বোধ করছে, তারপর বলল, আপনার ও আপনার বন্ধুদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী, মি. পিট। খুবই দুঃখের বিষয় আপনাদেরকে আমি ছোট করে দেখেছিলাম। যদি কখনও নুমা থেকে স্পেশাল অপারেশনস ফোর্সে বদলি হতে চান, আইন বাধা না হলে, সবার আগে আমি সই করব সুপারিশে।
আমি ঠিক যোগ্য বলে বিবেচিত হব না, নিঃশব্দে হাসল পিট। ওই যে, অ্যালার্জি আছে-কারও হুকুম মানতে পারি না।
হ্যাঁ, তা আপনি প্রমাণ করেছেন, ক্ষীণ হেসে বলল কর্নেল।
পিটের ঘাড়ের ওপর প্রায় চড়াও হয়ে সিনেটর পিট জানালেন, তোমার সাথে ডেকে দেখা হচ্ছে আমার।
আমিও আপনাকে ওখানে বিদায় জানাব, বললেন কলিন্স।
হে’লা কামিল কিছুই বললেন না। দুদিকে দুহাত মেলে দিয়ে তিনি সবাইকে প্রায় তাড়িয়ে নিয়ে গেলেন দরজার দিকে। সুইট থেকে ওরা বেরিয়ে যাবার পর দরজাটা বন্ধ করে দিলেন তিনি, ফিরে এসে বিছানার পাশে দাঁড়ালেন।
একটা জিনিস দেওয়ার আছে আমার, ফিসফিস করে বললেন তিনি, স্কুলে পড়া মেয়ের মতো দুষ্টামিভরা হাসি খেলে গেল আয়ত চোখে।
পিট ভাবে, সেলাই কেটে গেলে ডাক্তার ওয়েবস্টার ওকে কাঁচা গিলে খাবে।
জ্ঞান ফেরার পর চারদিকে অন্ধকার দেখতে পেল সুলেমান আজিজ। তার কাঁধে যেন জ্বলন্ত একটুকরো কয়লা চেপে ধরা হয়েছে। হাত দুটো মুখে তোলার চেষ্টা করল সে, একটা হাত যেন বিস্ফোরিত হলো অসহ্য ব্যথায়। তারপর মনে পড়ল, কাধ আর কবজিতে বুলেট ঢুকেছে। অক্ষত হাতটা তুলল বটে, কিন্তু চোখের জায়গায় শক্ত করে বাধা কাপড়ে ঠেকলো আঙুলগুলো। চোখ, কপাল, মাথা, সবই ব্যান্ডেজে মোড়া।
জানে, চোখ দুটো রক্ষা পাবে না। অন্ধ হয়ে বেঁচে থাকা … না, সে তা মানবে না। যেকোনো একটা অস্ত্র দরকার তার। হাতড়াতে শুরু করল। আত্মহত্যা করা ছাড়া পথ নেই।
স্যাঁতসেঁতে, ঠাণ্ডা পাথুরে মেঝে ছাড়া কিছুই ঠেকল না হাতে।