টেবিলে নিস্তব্ধতা নেমে এল।
প্রথম নড়ে উঠলেন প্রেসিডেন্ট, তাঁর ভ্রু প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো কুঁচকে আছে। কার কথা ভাবছ তুমি?
মিসরের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবু হামিদ।
তোমার ধারণা, তিনি ক্ষমতা দখল করবেন?
উপযুক্ত সময়ে, হ্যাঁ, ভরাট গলায় ব্যাখ্যা করলেন ডগলাস ওটস্। তার হাতে রয়েছে সামরিক বাহিনীর শক্তি। নরম ও মধ্যপন্থী মুসলিম মৌলবাদীদের সমর্থন আদায়ের জন্যও কৌশলে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।
তা যদি ঘটেও অর্থাৎ আবু হামিদ যদি ক্ষমতা দখল করেন, বললেন মারটিন ব্রোগান, আমেরিকার স্বার্থে বিঘ্ন ঘটবে বলে আমি মনে করি না। মিসরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছি আমরা, আর অনেকের মতো তিনিও তার কিছুটা ভাগ পাবার চেষ্টা করেননি, এমন নয়। মৌলবাদীদের শান্ত করার জন্য তিনি হয়তো মাঝে-মধ্যে আমেরিকাকে গালিগালাজ করবেন, তবে আমাদের সাথে সম্পর্ক ভালো না রেখে তার উপায় নেই।
ডেইল নিকোলাস বললেন, তাছাড়া, হে’লা কামিলের সাথে তার সুসম্পর্ক আমাদের জন্য সুসংবাদ।
হাতের গ্লাসটা উঁচু করে ধরলেন প্রেসিডেন্ট। মিসরের সাথে অব্যাহত বন্ধুত্বের উদ্দেশ্যে।
হিয়ার হিয়ার, অ্যালান মারসিয়ার ও মারটিন ব্রোগান একযোগে বলে উঠলেন।
মিসরের উদ্দেশ্যে, বিড়বিড় করলেন ডগলাস ওটস্।
এবং মেক্সিকোর উদ্দেশ্যে, জুলিয়াস শিলার নিজের গ্লাস উঁচু করলেন।
হাতঘড়ির ওপর চোখ বুলিয়ে চেয়ার ছাড়লেন প্রেসিডেন্ট, তার সহকর্মী ও উপদেষ্টারাও দাঁড়ালেন। বৈঠক ছোট করে আনার জন্য দুঃখিত, তবে ট্রেজারি। কর্মকর্তাদের সাথে জরুরি মিটিং আছে আমার। জিম্মিদের যারা উদ্ধার করেছেন, তাদের সবাইকে আমার অভিনন্দন জানাবেন। ওটস্-এর দিকে ফিরলেন তিনি। ফেরা মাত্র সিনেটর পিটের সাথে দেখা করতে চাই আমি, সাথে তুমিও থাকবে।
প্রেসিডেন্ট হাসানের সাথে তাঁর কী কথা হলো জানতে চান, মি. প্রেসিডেন্ট?
আমি বরং শুনতে আগ্রহী প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জোর সাথে তার কী কথাবার্তা হলো। আমাদের দক্ষিণ সীমান্তে একটা সঙ্কট মাথাচাড়া দিচ্ছে, কেউ যেন অবহেলা না করি। মিসর আমাদের দ্বিতীয় সমস্যা, প্রথম সমস্যা মেক্সিকো। আখমত ইয়াজিদকে মোটামুটি একটা ব্যবস্থা হয়েছে। এখনও বিপজ্জনক হুমকি হয়ে রয়েছে টপিটজিন। তার ওপর নজর দিন, জেন্টলমেন। মেক্সিকোকে যদি শান্ত করতে না পারি, সামনে খারাপ দিন আসছে।
.
৬৩.
ধীরে ধীরে ঘুম ভেঙে অচৈতন্য অন্ধকার জগত থেকে চৈতন্যের আলোকিত জগতে প্রবেশ করল পিট। সারা শরীরে আড়ষ্ট ভাব আর ব্যথা অনুভব করে ইচ্ছে হলো আবার ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু নড়ে উঠে আপনা থেকেই খুলে গেল চোখের পাতা, পুরোপুরি সচেতন হয়ে উঠল ও। দেখল হাসিখুশি লাল একটা মুখ ঝুঁকে রয়েছে ওর মুখের ওপর।
দারুণ, দারুণ-উনি জ্যান্ত প্রাণিজগতে ফিরে এসেছেন। খুশিমনে চিৎকার করল ফাস্ট অফিসার মাইকেল ফিনি। যাই, ক্যাপটেনকে খবরটা দিই।
মাইকেল ফিনি দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবার পর মাথা না ঘুরিয়ে এদিক-ওদিক তাকাল পিট। কাছেই একটা চেয়ারে বসে নিঃশব্দে হাসছেন এক ভদ্রলোক। চিনতে পারল ও, জাহাজের ডাক্তার। দুঃখিত, ডাক্তার সাহেব, আপনার নামটা আমার মনে পড়ছে না।
হেনরি ওয়েবস্টার, সহাস্যে বললেন ভদ্রলোক। কোথায় রয়েছেন বলুন তো? লেডি ফ্ল্যামবোরোর সবচেয়ে সুন্দর স্যুইটে। সাউন্ডার টো করে নিয়ে যাচ্ছে লেডি ফ্ল্যামবোরোকে, পান্টা অ্যারেনাসে পৌঁছুতে খুব বেশি দেরি নেই?
ধন্যবাদ, ডাক্তার সাহেব, কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?
কর্নেল হোলিসের সাথে আপনি কথা বলছিলেন, আমি আপনার ক্ষতগুলো পরীক্ষা করছিলাম। একটু পরই ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়াই আপনাকে। হাতঘড়ি দেখলেন ডাক্তার। বারো ঘণ্টা।
তাই তো বলি, পেট চোঁ চোঁ করছে কেন!
চেয়ার ছাড়লেন ভদ্রলোক। আপনাকে পরিবেশনের জন্য তৈরি হয়ে আছে শেফ,
আমার বন্ধুরা কেমন আছে? জিজ্ঞেস করল পিট। জিওর্দিনো আর ফিনলে?
শরীর থেকে চারটে বুলেট বের করা হয়েছে, তবে তার কোনো অঙ্গহানি ঘটেনি, সেরে উঠতে খুব বেশি সময় নেবে না। ফিনলের ফুসফুস আর কিডনির কাছাকাছি আটকে আছে কয়েকটা বুলেট। যতটুকু করা সম্ভব করা হয়েছে, ওয়াল্টার রিড মেডিকেল সেন্টারে তার অপারেশন করা হবে।
পিটকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়াবার পরপরই হেলিকপ্টারে তুলে পাল্টা অ্যারেনাসে পাঠানো হয় জিওর্দিনো আর ফিনলেকে, একট প্লেন তাদেরকে ওয়াশিংটনে নিয়ে গেছে। পিটের চেয়ে ওদের দু’জনের অবস্থা খারাপ, তাই ওদের সাথে রুডি গেছে।
কথা শেষ করে পিটের মুখে একটা ডিজিটাল থার্মোমিটার গুঁজে দিলেন হেনরি ওয়েবস্টার। রিডিংয়ে চোখ বুলিয়ে খুশি হয়ে উঠলেন তিনি। জ্বর নেই। প্রায় সেরে উঠেছেন বলা যায়। কেমন বোধ করছেন?
এক্ষুনি ম্যারাথনে যোগ দিতে পারব না, স্লান হাসল পিট। তবে বাড়িতে ডাকাত পড়লে ধাওয়া করতে পারব।
আপনি আসলে ভাগ্যবান, বললেন ওয়েবস্টার। একটা বুলেটও বোন, আর্টারি বা ইন্টারনাল অরগান স্পর্শ করেনি। আপনার ঘাড় আর পা সেলাই করে দিয়েছি আমি। চোয়ালের উপরটাও। তবে ওখানে প্লাস্টিক সার্জারি লাগবে, যদি না দাগটাকে বিউটি স্পট হিসেবে রেখে দিতে চান-অনেক মেয়ে কিন্তু পছন্দ করে।
হাসল পিট, সাথে সাথে আড়ষ্ট হয়ে উঠল ব্যথায়।