মেজর তাই করলেন। এছাড়া উপায়ই-বা কি? দোকানে গিয়ে কড়া মদ খেলেন দু গ্লাস, সঙ্গে স্যান্ডউইচ। তারপর আবার সেই ফু-দের ঠাণ্ডা গদি ঘরে।
আপনার এই চমৎকার বাট দুটোর নাড়ি-নক্ষত্র জেনে নিয়েছি। এদের অতীত ইতিহাস জানার জন্য নিশ্চয়ই আগ্রহ হচ্ছে আপনার?
মেজর বললেন, নিশ্চয়ই, খুব আগ্রহ হচ্ছে।
বাট দুটো জার্মানির, মেজর। এতে শতকরা দশ ভাগ সীসে আছে দেখে সেটা ধরা গেল। হিটলারের আমলে সোনাতে এভাবে খাদ মেশাবার একটা বাজে রেওয়াজ ছিল রাইখস্ ব্যাংকের। কারবারিদের কাছে ব্যাপারটা ফাঁস হয়ে যেতে দেরি হয়নি আর তারই ফলে জার্মান বাট সোনার দাম সেই অনুপাতে নেমে গিয়েছিল। জার্মানদের এই বোকামির ফলে হল কি-না কয়েক শতাব্দী ধরে সতোর যে সুনাম গড়ে তুলেছিল জার্মানী জাতীয় ব্যাংক, তা একেবারেই ডুবে গেল।
মেজর অবাক হয়ে গেলেন এই ভেবে যে, পৃথিবীর বড় বড় ব্যবসায়ী মহল থেকে এত দূরে বসেও এই ভাই দুটি কি করে এতসব খবর রাখে? মনে মনে অভিসম্পাত দিলেন। তিনি বললেন, শুনে খুব আশ্চর্য লাগল, মিঃ ফু। তবে আমার পক্ষে ভারি খারাপ হল। তার নকলি মানে বাট দুটো যাকে বলে, আসলি চীজ।
বড় ভাই বললেন, তাতে কিছু যায় আসে না, মেজর। ট্যাকশাল থেকে যে দামে ছাড়া হয়, সেই দামেই বিক্রি করে দেব। ধরুন, ঊনআশি ডলার দরে। আমরা খাঁটি মাল হিসাবে বেচব। এই বাট দুটো সম্বন্ধে মানে এই দুটোর দামের কথা কিছু বলতে পারবেন আপনি? মোটামুটি কুড়ি হাজার পাউন্ড ধরে রেখেছি।
বড় ভাই একটু হেসে বলল, আমার ধারণা, একটু ধীরে সুস্থে ভেবে-চিন্তে বেচলে একলাখ ডলারের চেয়েও কিছু বেশি পেতে পারেন, মেজর–তবে, তার থেকে আমাদের দালালিটা বাদ যাবে; মানে মাল পাঠানো, আনুষঙ্গিক অন্য সব খরচ-টরচ সমেত। আমরা শতকরা দশ ডলারের মত ভেবে রেখেছি, মেজর, যদি অবশ্য আপনার পোয়।
রাজি। শুধু এইটুকু বলেই উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলের ওধারে হাত বাড়িয়ে দিলেন। এরপর থেকে তিনি প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ফু-দের গদিতে ঢোকেন। টেবিলের ওপর জ্যামাইকান পিচশ পাউন্ডের কড়কড়ে নোটের কয়েকটা বান্ডিল সাজানো থাকে। আর থাকে সোনার দুটো বাট। সঙ্গে একটি কাগজ, বিক্রির হিসাব কতখানি সোনা পাওয়া গেল।
সমস্ত ব্যাপারটা খুব নিরুপদ্রব এবং সুশৃঙ্খল, সন্দেহ করার কোন কারণই নেই। অবশ্য মেজর কোন কিছু নিয়েই মাথা ঘামাতেন না কারণ, বছরে পাক্কা দু হাজার পাউন্ড তাঁর পক্ষে যথেষ্ঠ। তাঁর দুশ্চিন্তা ইনকাম ট্যাক্সের লোকেদের নিয়ে, হয়ত তাদের কাছে জবাব দিহি করতে হতে পারে যে খরচের টাকাটা কোথা থেকে আসে।
এইভাবে বছরের পর বছর আলো ঝলমল অলস দিনগুলো কেটে যেতে লাগল। মেজরের হঠাৎ প্রথমবারের হার্ট অ্যাটাক হল, ডাক্তার মদ আর সিগারেট কমাতে বললেন। প্রথম দিকে মেরি স্মিথ এ ব্যাপারে কড়াকড়ি করলেও, মেজর যখন ছল চাতুরীর আশ্রয় নিতে লাগলেন তখন তিনি শাসনের রাশটা একটু আলগা করার চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু বোধহয় বড় বেশি দেরি হয়ে গেছে। মেরি তখন স্মিথের চোখে গোসাই ঠাকরুন ছাড়া আর কিছুই নয়। ওঁদের ভালবাসায় ভাটা পড়তে লাগল, ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকল, মেরির নরম ধাতে সহ্য হল না। ঘুমের বড়ি খাওয়াটা তার নেশায় দাঁড়িয়ে গেল। এর পরিণাম হল মারাত্মক। একদিন মাত্রাটা বোধহয় বড় বেশি হয়ে গিয়েছিল, তাই মেরি সারাজীবনের জন্য ঘুমিয়ে পড়লেন।
আত্মহত্যার ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়া গেলেও সন্দেহ আর কানাকানির চোটে মেজরের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হতে লাগল, তখন এই নর্থ শোর-এ চলে এলেন। এই জায়গাটা জ্যামাইকার মত স্বল্প পরিধির মধ্যে হলেও আলাদা। তিনি নর্থ-শোর-এ তরঙ্গিনী বাড়িটায় পাকাপাকিভাবে থাকতে লাগলেন, তারপর দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাকের পর যখন মদ খেয়ে জীবনটাকে মৃত্যুর দরজায় এনে দাঁড় করিয়েছেন, ঠিক তখনই এই বন্ড লোকটি এসে হাজির হল, পকেটে আর একটা মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে।
ঘড়িতে এখন বারোটা বেজে কয়েক মিনিট। ব্র্যান্ডি আর জিঞ্জার মিশিয়ে এক গ্লাস বানিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন। জেমস্ তখন বাদাম গাছের নিচে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে রয়েছে। মেজর যখন গ্লাসটা নামিয়ে রেখে বসলেন তখন চোখ তুলে তাকালও না বন্ড। মেজরের মুখে সবটা শোনার পর বলল, হ্যাঁ, মোটামুটি এরকমই ভেবে রেখেছিলাম।
সবটুকু লিখে সই করে দিতে হবে?
বন্ড বলল, আমার জন্য কোন প্রয়োজন নেই। আপনার ইচ্ছা হলে আপনি লিখতে পারেন। যে সেনাদলে ছিলেন। তারাই যা হোক করবে। আইনগত ব্যাপারে আমি যুক্ত নই। নিজে কানে যে টুকু শুনলাম, আমার নিজের সার্ভিস কর্তাদের কাছে সে ব্যাপারে একটা রিপোর্ট দেব, তারা রয়্যাল মেরীনৃস-এর কাছে পেশ করে দেবেন। তারপর যতদূর আমার মনে হয় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের হাত ঘুরে পাব্লিক প্রসিকিউটার-এর কাছে যাবে।
বন্ড জানতে চাইল যে ব্যাপারটা ওরা কিভাবে টের পেল। মেজর বললেন, হিমবাহটা ভীষণ ছোট ছিল। বছরের প্রথম দিকে বরফ গলে যাবার পর তলায় ওবাহসার-এর মৃতদেহটা বেরিয়ে পড়েছিল। সেটি কয়েকজন পর্বতারোহীর নজরে আসে। ওর সঙ্গে কাগজপত্রগুলোও কিছু নষ্ট হয়নি। বাড়ির লোকজন সনাক্ত করল। তারপর কাজটা অনেক সোজা হয়ে গেল। বুলেটটা পেয়ে কাজটা অনেক সোজা হয়ে গিয়েছিল।