বন্ড প্রশ্ন করল, প্রথম গুলি ছোঁড়ার পর সে কি শুধু ওই এক কথাই বলে-হাইল?
হা। মনে হয় ওই কথাটা জার্মানেরা ভুলতে পারবে না। তাই না স্যার? চিন্তিতভাবে বউ বলল না কখনো তারা ভুলতে পারবে না।
.
মেয়ে পুলিশ ব্যান্ড
উঁচু তার-ঘেরা বেড়ার সামনেকার ফটকে ইউনিফর্ম পরা গার্ডকে বন্ড তার পাশ দেখাল।
বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট সেটা ফেরত দিয়ে স্যালুট করল।
স্যার হিউগো আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন, স্যার।–বনের মধ্যে ওই বড় বাড়িটায়। পাহাড়ের উপর প্রায় শ খানেক গজ দূরের কয়েকটা আলোর দিকে হাত তুলে দেখাল সে।
পরের গার্ডের ঘাঁটিতে বন্ড তাকে ফোন করতে শুনল। নতুন পিচ-বাঁধানো পথ ধরে ধীরে সে গাড়ি চালিয়ে চলল।
শুনতে পেল দূর থেকে ভেসে আসা পাহাড়ের নিচেকার সমুদ্র গর্জন আর নানা যন্ত্রপাতির তীক্ষ্ণ রিনরিনে শব্দ। শব্দটা ক্রমশ হয়ে উঠতে লাগল তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর।
দ্বিতীয় একতারের বেড়ার কাছে সাধারণ পোশাকধারী এক গার্ড আবার থামাল বন্ডকে। তারপর হাতের ইঙ্গিতে জানাল এগিয়ে যেতে। দূরে পুলিশ কুকুরের ডাক শুনতে পেল সে। বুঝল তারা তাদের চৌকিদার। সতর্কতার ব্যাপারে কোন রকম ঢিলেঢালা নেই। অতএব বাইরের নিরাপত্তা নিয়ে তাকে মোটেই মাথা ঘামাতে হবে না। বন্ড খানিকটা আশ্বস্ত হল।
তারপর ছোট মত যেন একটা জঙ্গল, নানা রকমের গাছ। গাছগুলো পেরিয়ে কংক্রিট-মোড়া অনেকটা জায়গা। অস্পষ্ট আলো। বন্ডের বেন্টলির হেডলাইটও সেই কংক্রিট-বাঁধানো জায়গাটার শেষ সীমা খুঁজে পেল না। গাছগুলোর কিনারে বাঁ দিকে প্রায় একশ গজ দূরে একটা বিরাট বাড়ির আলো দেখা গেল। ছ-ফুট চওড়া একটা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বাড়িটা। সবটা দেখা যায় না। আরও ধীরে-ধীরে বন্ড চালাতে লাগল তার গাড়ি। তার গাড়ির হেডলাইট পড়ল অন্তত আধ মাইল দূরের একটা গম্বুজ মত জায়গায়। গম্বুজটাকে দেখতে একটা অবজারভেটারির চূড়োর মত।
বাড়িটার সামনে এসে বন্ড গাড়ি থামাল। সঙ্গে সঙ্গে সামনের দরজা খুলে বেরিয়ে এল একজন বাটলার। পরনে তার সাদা জ্যাকেট।
বন্ডের গাড়ির দরজা খুলে ধরে সে বলল, গুড ইভনিং স্যার। আমার সঙ্গে আসুন। তার স্বর ভাবলেশহীন। উচ্চারণটাও বিদেশীর মত। তার পেছন পেছন বাড়িটার মধ্যে গিয়ে হল-ঘর পেরিয়ে একটা দরজার কাছে পৌঁছল বন্ড। বাটলার দরজায় টোকা দিল।
এসো।
সেই পরিচিত কর্কশ স্বর। ঐ একটা কথার মধ্যেও আদেশের সুর শুনে মনে মনে হাসল বন্ড। সেই লম্বা ঝলমলে ঘরে খালি ফায়ার প্লেসের সামনে পেছন ফিরে দাঁড়িয়েছিলেন ড্রাক্স। বিরাট তার চেহারা। পরনে কিশমিশ রঙের ভেলভেটের মোকিং-জ্যাকেট। তার মুখের লালচে লোমগুলোর সঙ্গে একেবারে বেমানান সেটা। তার কাছে আর তিনজন মানুষ দাঁড়িয়ে।
দু-জন পুরুষ, একটি মেয়ে।
এসো, এসো এগিয়ে এসে করমর্দন করে দরাজ গলায় বলে উঠলেন ড্রাক্স। আবার তাহলে আমাদের দেখা হল। এত তাড়াতাড়ি হবে বলে ভাবিনি। জানতাম না তুমি একজন সরকারি গুপ্তচর। জানলে আরও সাবধানে তোমার সঙ্গে তাস খেলতাম।
জিতের টাকাটা খরচ করছো?
হেসে বন্ড বলল, এখনো করিনি। নোট গুলোর রঙ পর্যন্ত দেখিনি।
তা ঠিক। দেনা-পাওনা শনিবার চোকানো হয়। আমাদের এই রকেটটা ছোঁড়ার পর ফুর্তি করার জন্য সম্ভবত যথাসময়ে টাকাটা পাবে। মেয়েটির কাছে বন্ডকে তিনি নিয়ে এলেন। এ আমার সেক্রেটারি-মিস ব্র্যান্ড।
স্থির দুটো নীল চোখের দিকে তাকাল বন্ড। মিষ্টি হেসে বলল, গুড ইভনিং।
মেয়েটির চোখের মধ্যে হাসির কোনরকম আভাস নেই। শান্ত চোখে তাকাল সে বন্ডের দিকে। বন্ড তার হাতে মৃদু চাপ দিল। মেয়েটি দিল না। বন্ডের মনে হল প্রায় যেন রুক্ষ স্বরেই মেয়েটি বলল, কেমন আছেন? বন্ডের মনে হল এই কাজের জন্য মেয়েটিকে সঠিক বাছাই করা হয়েছে। এ যেন আর একজন লোয়েলিয়া পসেবি।
গম্ভীর, দক্ষ, কর্তব্যনিষ্ঠ এবং কুমারী। এ আমার ডানহাত–ডাঃ ওয়ালটার। রোগা চেহারা। বয়স্ক। মাথায় ঝাকড়া কালো চুল। চোখ দুটো রাগী রাগী। মনে হল বন্ডের প্রসারিত হাত সে লক্ষ্য করেনি।
তড়াক করে এ্যাটেনশন হয়ে দাঁড়িয়ে সে মাথা হেলাল। ড্রাক্স-এর উচ্চারণ শুধরে দিয়ে সে বলল, ভালটার।
আর এ হল আমার পার্শ্বচর উইলিক্রেবস। লোকটার হাত ভিজে ভিজে। বলল, আলাপ করে খুব খুশি হলাম। লোকটার মুখ গোল আর ফ্যাকাশে। অস্বাস্থ্যকর ধরনের। তার মুখের কৃত্রিম হাসিটা সঙ্গে-সঙ্গে মিলিয়ে গেল। তার চোখের দিকে তাকাল বন্ড। কালো বোতামের মত চোখ দুটো। অস্থির গোছের। বন্ডের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিল সে। এই নিরুত্তাপ লোকগুলোর মধ্যে দানবের মত চেহারার ড্রাক্সকেই বন্ডের ভাল লাগল। তার স্বাগত জানাবার ভঙ্গিটা রুক্ষ হলেও প্রাণবন্ত। অতীতের বিদ্বেষ ভুলে নতুন সিকিউরিটি অফিসারের সঙ্গে আন্তরিক ব্যবহার করছেন দেখে কৃতজ্ঞ বোধ করল বন্ড। আতিথ্যের ব্যাপারে ড্রাক্সের কোন ত্রুটি নেই। নিজের দুটো হাত ঘষে তিনি বললেন, উইলি, তোমার চমৎকার মাটিনিটা এবার বানাও। ডক্টরকে অবশ্যই দেবে না। ডক্টর, পানও করে না, ধোয়াও টানে না। বন্ডের দিকে চেয়ে তিনি বললেন, বলতে গেলে নিঃশ্বাসই নেয় না গলা ফাটিয়ে হাসলেন তিনি। রকেট ছাড়া আর কোন চিন্তা ওর মাথায় নেই। আছে নাকি, দোস্ত? নির্মম দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে ওয়ালটার বলল, আমাকে নিয়ে ঠাট্ট-তামাসা করতে আপনার খুব ভাল লাগে।