চিলহাম কাসল ছাড়িয়ে সোজা পথে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে বন্ড ভাবতে লাগল, মানুষটার সঙ্গে কাজ করতে হলে তাঁর চরিত্রের বীরত্বপূর্ণ দিকটা তাকে মেনে নিতে হবে। ড্রাক্স চাইলে ব্লেড়স-এর ঘটনার কথা মন থেকে একেবারে মুছে ফেলে ড্রাক্স এবং মুনরেকার কে দেশের শত্রুদের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা সে করবে। মাত্র আর তিন দিন বাকি। ইতিমধ্যেই নিরাপত্তামূলক সবরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে চাইলে ড্রাক্স সম্ভবত আপত্তি করবেন। কাজটা সহজ নয়, খুব বিচক্ষণতার দরকার। ক্যান্টারবেরি থেকে বেরিয়ে শর্টকাট করার জন্য ওল্ড ডোভার রোড ধরে বন্ড তার ঘড়ির দিকে তাকাল। সাড়ে ছটা। ডোভার পৌঁছতে আর পনের মিনিট। তারও দশ মিনিট পরে ডীল রোড। আর কোন প্ল্যান করা কি দরকার? সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, জোড়া-খুনের তদন্তের ভার তার ওপর পড়েনি। করোনারের রায় অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় হত্যা এবং আত্মহত্যা এমনকি মেয়েটিকে কোর্টে আনাও হয়নি। ওয়ার্লর্ড উইদাউট ওয়ান্ট-এ একটা ড্রিঙ্কের জন্য সে থামবে। সরাইখানার মালিকের সঙ্গে চটপট সেরে নেবে কয়েকটা কথা। যে সন্দেহজনক ব্যাপারের জন্য মন্ত্রীর সঙ্গে ট্যালন দেখা করতে চেয়েছিল পরের দিন, সেটা আবিষ্কার করার চেষ্টা তাকে করতে হবে। ট্যালনের ঘরে কিছুই পাওয়া যায়নি। সম্ভবত সে-ঘরেই তাকে থাকতে হবে। তাতে অন্তত ট্যালনের কাগজপত্র দেখার প্রচুর অবসর পাবে সে। ডোভারের উপকূল দিয়ে যাবার সময় একাগ্র হয়ে সে ড্রাইভ করতে লাগল। বাঁ দিক ঘেঁষে যেতে লাগল সে। অল্পক্ষণের মধ্যে শহর পেরিয়ে আবার চড়াই পথ ধরল। সেই অদ্ভুত সুন্দর দুৰ্গটার পাশ দিয়ে গেল, সেটা দেখলে মনে হয় যেন পিচবোর্ড দিয়ে বানানো। মেয়েটি কেমন? এমনভাবে সাবধানে মেয়েটির সঙ্গে তাকে আলাপ করতে হবে যাতে সে না ঘাবড়ে যায়। মেয়েটি তার কোন কাজে লাগবে কিনা কে জানে। বড় কর্তার প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবে এক বছর ধরে কারখানায় সে রয়েছে। অতএব, পুরো পরিকল্পনাটার সব রকম খুঁটিনাটি অর্থ জানার সুযোগ পেয়েছে সে, সুযোগ পেয়েছে ভ্রাক্সকে ভাল করে চেনবার। নিজের বিশেষ ধরনের কাজ করার ট্রেনিং-ও তার আছে। তার কাজে নতুন কাউকে নাক গলাতে দেখলে হয়ত মেয়েটি প্রথমটায় চটেই উঠবে। তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বন্ডকে। তাকে আসলে দেখতে কেমন, বন্ড ভাবল। ইয়ার্ডের রেকর্ড বইতে যে ফটো আছে সেটা দেখে মনে হয় মেয়েটি সুন্দরী হলেও খানিকটা গুরুগম্ভীর ধরনের। তার চেহারার মধ্যেকার সম্মোহনী ভাবের আভাস মেয়ে-পুলিশের রসকষবিহীন ইউনিফর্মের নিচে একেবারে চাপা পড়ে গেছে। চুল সোনালি। চোখ : নীল। উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। ওজন : ৯ স্টোন। নিতম্ব : ৩৮। কোমর ও ২৬। বক্ষদেশ : ৩৮। নির্ণয়চিহ্ন : ডান স্তনের ওপর দিকে তিল। হুম? ভাবল বন্ড। ডানদিকের মোড়ের কাছে এসে এই মাপ জোপগুলো মন থেকে সে মুছে ফেলল। সেখানে একটা সাইনবোর্ড ছিল। লেখা কিংসটাউন। আর ছিল ছোট একটা সরাইখানার কয়েকটা আলো।
সেখানে গাড়ি থামিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করল বন্ড। তার মাথার ওপর একটা সাইন বোর্ডে অস্পষ্ট সোনালি অক্ষরে লেখাঃ ওয়ার্লর্ড উইদাউট ওয়ান্ট। আধ মাইল দূর থেকে পাহাড়ের ওপর দিয়ে ভেসে আসা নোনা বাতাসে সাইন বোর্ডটা মড়মড় শব্দ করছিল। গাড়ি থেকে নেমে আড়মোড়া ভেঙে বন্ড সেই বার এর দরজার কাছে গেল। দরজাটা বন্ধ। বার বন্ধ হয়ে গেছে, নাকি সাফ করা হচ্ছে? পাশের দরজাটা ঠেলতে সেটা খুলে গেল। সেটা ছোট একটা প্রাইভেট বার এর দরজা, বার এর পেচনে শার্টপরে নির্বিকারভাবে একটা লোক সান্ধ্য সংস্করণের খবরের কাগজ পড়ছিল।
বন্ড ভেতরে আসতে কাগজটা নামিয়ে মুখ তুলে তাকাল সে, বলল ইভনিং স্যার। একজন খদ্দেরকে আসতে দেখে স্পষ্টই বোঝা গেল সে স্বস্তি পেয়েছে। বন্ড বলল ইভনিং। বড় হইস্কি আর সোডা। ববি-এগিয়ে এসে দু পেগ ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ঢেলে গ্লাস আর সাইফন-সমেত সোডা বন্ডের সামনে রাখাল।
সোডা নিয়ে গ্লাসটা ভরে বন্ড সেটা শেষ করে প্রশ্ন করল গতকাল রাতের ব্যাপারটা যাচ্ছে তাই-নয় কি? গ্লসটা টেবিলে রাখল বন্ড।
লোকটা বলল সাংঘাতিক কাণ্ড স্যার। এখানকার ব্যবসাটাও লাটে উঠতে পারে। আপনি কি প্রেসের লোক? সারাদিন ধরে শুধু এসেছে পুলিশ আর রিপোর্টারের দল।
বন্ড বলল না, যে-লোকটি গুলিতে মরেছে আমি এসেছি তার জায়গায়–মেজর ট্যালনের জায়গায়। সে কি এখানে নিয়মিত আসত?
আগে কখনও আসেনি। সেই প্রথম আর শেষ বার। এখন এক সপ্তাহ ধরে এখানে লোকেদের আসা-যাওয়ার ভয়ানক কড়াকড়ি। কিন্তু একটা কথা স্বীকার করতেই হবে-স্যার হিউগো ভারি ভদ্রলোক। ক্ষতিপূরণ হিসেবে আজ সন্ধ্যেয় তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন পঞ্চাশ পাউন্ড। এখানে সবাই তাঁকে খুব পছন্দ করে। দু-হাতে খরচ করেন। সবাইকার সঙ্গেই হাসি মুখে কথা বলেন হ্যাঁ। ভারি ভাল লোক। বন্ড বলল খুনোখুনির ব্যাপারটা দেখেছিলে?
প্রথম গুলিটা দেখিনি স্যার। একজন খদ্দেরকে তখন এক পাইট মদ দিচ্ছিলাম। শব্দটা শুনে তাকাই, আর হাত থেকে পড়ে যায় মদের সেই পাঁইট টা। তারপর সবাই সিটিয়ে ওঠে। ভিড়ের মধ্যে সবাই জার্মান। গিজগিজ করছিল। গুলি খেয়ে লোকটা মেঝেয় পড়ে। বন্দুক হাতে লোকটা তার দিকে তাকিয়ে তারপর হঠাৎ এটেনশন হয়ে দাঁড়িয়ে বা হাতটা ওপর দিকে তুলে হাই বলে সে চেঁচিয়ে ওঠে-লড়াই এর সময় জার্মানরা যেমন চেঁচায় হাইল হিটলার বলে। তারপর বন্দুকের নলটা নিজের মুখে পোরে হারামজাদাটা। তারপর মুখ বিকৃত করে লোকটা বলল, এ ঘরের সিলিঙের মাঝখানে সে ছিটিয়ে-ছড়িয়ে পড়ে।