তাই নাকি? স-সম্ভ্রমে বলে ওঠে বন্ড।
তার দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রফেসর বলে যান, অতএব আশা করছি ঘণ্টায় প্রায় ১৫০০ মাইল স্পিডে পৌঁছাতে পারব, খাড়া উঠতে পারব প্রায় ১০০০ মাইল। ফলে ৪০০০ মাইল এলাকা জুড়ে মুনরেকার কাজ করতে পারবে। ইংল্যান্ডের নাগালের মধ্যে থাকবে ইউরোপের প্রতিটি রাজধানী, এটা নীরস গলায় তিনি যোগ করে দেন। কতকগুলো বিশেষ অবস্থায় খুব সুবিধের। কিন্তু বৈজ্ঞানিকদের কাছে এটার প্রধান গুরুত্ব-মহাশূন্যে পাড়ি দেবার এটা প্রথম পদক্ষেপ-কোন প্রশ্ন আছে।
কি করে এটা কাজ করে? কর্তব্যবোধে প্রশ্ন করে বন্ড। নক্শাটার দিকে আঙুল তুলে প্রফেসর বলতে থাকেন, এটার গোড়া থেকে শুরু করা যাক। প্রথমেই আসে ওয়ার হেডের (warhead) কথা। এই প্র্যাকটিস ছোঁড়ার সময় ডগায় থাকবে ওপরকার আবহাওয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি, রেডার ইত্যাদি। তারপর জাইরো কম্পাস, যাতে সোজা এটা উড়তে পারে, তারপর নানা ছোট খাট যন্ত্রপাতি, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, তারপর বিরাট জ্বালানির ট্যাঙ্কটায় ৩০,০০০ পাউন্ডের জ্বালানি থাকবে।
মনুরেকারের পেছন দিয়ে টারবাইন চালাবার জন্য আছে দুটো ট্যাঙ্ক। চারশ পাউন্ড হাইড্রোজেন পেরোক্সাইড চল্লিশ। পাউন্ড পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের সঙ্গে মিশে বাষ্প তৈরি হবে। সেই বাষ্প নিচেকার টারবাইনগুলো চালাবে। টারবাইনগুলো চালাবে কতকগুলো সেন্ট্রিফুগাল পাম্প। সেই পাম্পগুলো দারুণ চাপ দিয়ে প্রধান জ্বালানিকে ঠেলে দেবে রকেটের মোটরে। বুঝলে, সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকান তিনি বন্ডের দিকে।
বন্ড বলল, মনে হচ্ছে জেটপ্লেনের মত একই পদ্ধতি। মনে হল প্রফেসর খুশি হলেন। তিনি বলে যান, মোটামুটি তাই। কিন্তু রকেটের মধ্যেই থাকে সমস্ত জ্বালানিটা, বাইরে থেকে অক্সিজেন শুষে নেয় না, কমেট যেমন নেয়। মোটরের মধ্যে জ্বালানিটা জ্বলে উঠবে। তারপর প্রবল বেগে রকেটের পেছন দিকে দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকবে। অনেকটা ক্রমাগত বন্দুকের রিকয়লের (পেছন-ধাক্কা) মত। এই ব্লাস্ট। আতসবাজির মত রকেটকে ঠেলে তুলবে। ওপরে। বন্ড প্রশ্ন করে, যেখানে চান ঠিক সেখানে এটা পড়বে বলে কি করে আপনারা নিশ্চিত হচ্ছেন? আগামী শুক্রবার প্যারিসে গিয়ে পড়তে এটার বাধা কি?
সেটা জাইয়োগুলোর কাজ। আসলে কিন্তু শুক্রবার আমরা কোন রকম ঝুঁকি নিচ্ছি না। সমুদ্রের মাঝখানে একটা ভেলায় আমরা একটা রাডার যন্ত্র রাখছি। রকেটের ডগায় থাকবে একটা রাডার ট্রান্সমিটার। সমুদ্রের যন্ত্রের প্রতিধ্বনি। সেটা তুলে নিয়ে আপনা থেকেই রকেটটাকে নিয়ে যাবে লক্ষ্যবস্তুর দিকে। তারপর প্রফেসর হেসে বলেন, যুদ্ধের সময় এটাকে কখনো ব্যবহার করতে হলে মস্কো কিংবা ওয়ারশ কিংবা প্রাগ কিংবা মন্টি করেলো কিংবা যেখানে আমরা ছুঁড়ছি সেই শহরের মাঝখানে যদি কোন সংকেত প্রেরণ করার যন্ত্র থাকে তাহলে খুব সুবিধে হয়। সম্ভবত তোমাদের মত কাউকে সেখানে যন্ত্রটা বসিয়ে আসতে হবে। গুডলাক। বন্ড হেসে বলে, আর একটা প্রশ্ন। রকেটটাকে ভণ্ডুল করতে চাইলে সবচেয়ে সহজ উপায় কি? প্রফেসরও হেসে উত্তর দেন, বহু উপায় আছে। জ্বালানির মধ্যে বালি, পাম্পের মধ্যে পাথরকুচি, ডানায় কিংবা ফিউসলেজে ছোট একটা ফুটো। ও-রকম সাংঘাতিক শক্তি আর স্পিডের মধ্যে এতটুকু খুঁত থাকলেই রকেটটা খতম হয়ে যাবে।
বন্ড বলে, অনেক ধন্যবাদ। মনে হচ্ছে মুনরেকার সম্বন্ধে আমার চেয়ে আপনার দুর্ভাবনা অনেক কম। প্রফেসর বলেন, মেশিনটা আশ্চর্য। কেউ বাগড়া না দিলে নির্ভুল হিসেবে ওটা উড়বে। ড্রাক্স নিখুঁত কাজ করেছেন। অদ্ভুত ভাল। কর্মী। যে দলটা তিনি জোগাড় করেছেন সেটা ব্রিলিয়ান্ট। ড্রাক্সের জন্য সব কিছু করতে তারা প্রস্তুত। বহু কারণেই আমাদের ধন্যবাদ তার প্রাপ্য। চেয়ারিং-এর মুখে বন্ড তার বিরাট গাড়িটাকে বাঁ দিকে নিয়ে গেল। অ্যাশফোর্ড আর। ফোক্ স্টেশনে বেজায় ভিড়। সে ভাবতে লাগল ড্রাক্সের কথা। আজ সন্ধ্যেয় কি রকম অভ্যর্থনা সে পাবে? M বলেছিলেন, টেলিফোনে তাঁর কাছ থেকে বন্ডের নাম শুনে মুহূর্তের জন্য চুপ করে থেকে ড্রাক্স বলেন, ছোকরাকে আমি জানি। জানতাম না পুলিশ দপ্তরের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে। আর একবার তাকে দেখতে চাই। তাকে পাঠিও। ডিনারে। তাকে আশা করব। তারপর তিনি টেলিফোন কেটে দেন।
ড্রাক্স সম্বন্ধে মিনিস্ট্রির লোকেদের একটা নিজস্ব ধারণা আছে। ড্রাক্সের সংস্পর্শে এসে তারা লক্ষ্য করে যে, একটা পবিত্র উদ্দেশ্যের জন্য নিজেকে তিনি উৎসর্গ করে দিয়েছেন। মুনরেকারের সাফল্যই তার জীবনের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান। কর্মচারিদের তিনি দারুণ খাটান। তার প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র যাতে অগ্রাধিকার পায়, যাতে সেগুলো ক্যাবিনেট পর্যায়ে খালাস করে দেওয়া হয়, তার জন্য তিনি মিনিস্ট্রি অফ সাপ্লাইকে তিতিবিরক্ত করে ছাড়েন। তর্জন-গর্জন করে তার কর্তৃত্ব। জাহির করার ভাবটাকে তারা পছন্দ করতে না। কিন্তু তারা তাঁকে শ্রদ্ধা করে, তার টেকনিক্যাল জ্ঞান, তার কর্মোদ্যম। এবং তার আত্মোৎসর্গ ভাবের জন্য। ইংল্যান্ডের আর সবাইকার মত তারাও মনে করে ড্রাক্স দেশের ত্রাণকর্তা।