.
স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের এজেন্ট
মে মাসের শেষ। মঙ্গলবার সন্ধ্যে ছটা। সোজা ডোভার রোড ধরে দারুণ জোরে বন্ডের বিরাট বেন্টলি ছুটছে। রাস্তাটা মেড় স্টোনে।
একাগ্র হয়ে জোরে গাড়ি ছোটালেও বন্ডের মনের একাংশ জুড়ে ছিল গত সাড়ে-চার ঘণ্টা আগে M-এর অফিস থেকে বেরুবার পরের নানা ঘটনার কথা।
সেক্রেটারিকে তার কাজের কথা সংক্ষেপে জানিয়ে অফিস-ক্যান্টিনে একলা সে চটপট লাঞ্চ শেষ করে। তারপর গ্যারেজে টেলিফোন করে বলে, বিকেল ঠিক সাড়ে চারটায় ট্যাঙ্কে পুরো তেল ভরে গাড়িটা যেন তার ফ্ল্যাটে পায়। তারপর ট্যাক্সি নিয়ে ছোট স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে। পৌনে তিনটের সময় সেখানে এ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার ভ্যালান্সের সঙ্গে তার এ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল।
এক শান্ত চেহারার মাঝ বয়সী মহিলা এসে তাকে জানায় এ্যাসিসস্ট্যান্ট কমিশনার পাঁচ মিনিট পরে দেখা করবেন। মহিলার চোখের দৃষ্টি নিরুৎসাহ ধরনের মনে হয়। পৃথিবীতে যা-কিছু দেখার তিনি দেখেছেন।
কিছুক্ষণ পরে সেই মহিলাই আসেন তাকে ডাকতে। গভর্নমেন্ট ডিপার্টমেন্টের সব ওয়েটিং-রুমেই অ্যাশট্রের বদলে থাকে খালি প্লেয়ার্স সিগারেটের টিন। সেই রকম একটা টিনের ঢাকনিতে সিগারেটটা টিপে নিভিয়ে করিডোর দিয়ে মহিলাটির পিছনে পিছনে বন্ড যায়।
সেই অন্ধকার মত ওয়েটিং-রুমের পর আলোয় ঝলমলে বড় ঘর আর সেখানকার ফায়ারপ্লেসে বছরের এই অসময়ে আগুন জ্বলতে দেখে বন্ডের মনে হয়, সবটাই কেমন যেন একটা ছলাকলা।
নিজের মনমরা ভাবটা কাটিয়ে উঠতে বন্ডের লাগে পুরো পাঁচ মিনিট। তারপর সে বুঝতে পারে রনি ভ্যাগল্যান্স তাকে দেখে সত্যিই হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন। বোঝে আন্তর্বিভাগীয় রেষারেষির ব্যাপারে তার কোন রকম উৎসাহ নেই। তিনি শুধু চান মুনরেকার আর তার নিজের সবচেয়ে ভাল অফিসারদের নিরাপত্তা।
ভ্যাগলান্স খুব বিচক্ষণ মানুষ। প্রথম কয়েক মিনিট তিনি শুধু বলেন, M-এর কথা। ভেতরকার অনেক খবর তার জানা। কথাগুলো তার খুব আন্তরিক। কেসটার কথা উল্লেখ করার আগেই বন্ডের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা তিনি লাভ করেন।
পনের মিনিট ধরে গভীর আলোচনার পর বন্ড যখন চলে আসে তখন দুজনেই অনুভব করে সে ভাল করেছে, একজন ভাল সুহৃদ। ভ্যাগলা বুঝতে পেরেছিলেন ব্র্যান্ডকে বন্ড যথাসাধ্য সাহায্যে করবে।
কাজের দায়িত্ব পেশাদারীভাবে গ্রহণ করায় এবং স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের প্রতি রেষারেষির ভাব না দেখানোয় বন্ডের প্রতি তার শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। ভ্যাগলান্সের এজেন্টের সব কথা শুনে বন্ড মনে মনে খুব তারিফ করে। তার মনে হয় সে আর একলা নয়। বুঝতে পারে ভ্যাগলান্সের গোটা ডিপার্টমেন্ট তার পিছনে রয়েছে।
মিনিস্ট্রি অফ সাপ্লাই-তে এই কেস সম্বন্ধে নতুন কোন তথ্য সে পায়নি। ট্যালনের রেকর্ড এবং তার লেখা সব রিপোর্ট বন্ড খুঁটিয়ে পড়ে। তার রেকর্ড পড়ে বন্ড জানতে পারে মানুষটা ছিল খুব সৎ-আজীবন কাজ করেছে সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ এবং ফিল্ড সিকিউরিটিতে। তার রিপোর্টগুলোয় ছিল এক কর্মমুখর ও সুপরিচালিত প্রতিষ্ঠানের ছবি, দু-একটা মাতলামির ঘটনা। একটা ছিঁচকে চুরি এবং ব্যক্তি গত শত্রুতার ফলে গোটা কয়েক মারামারি ও সামান্য রক্তপাতের কথা। এইসব টুকিটাকি ঘটনার কথা বাদ দিলে বলা যায় পুরো দলটাই অত্যন্ত কর্তব্যনিষ্ঠ এবং খুব পরিশ্রমী। তারপর বন্ড আধঘণ্টা কাটায় মিনিস্ট্রির অপারেশনস রুমে প্রফেসর ট্রেনের সঙ্গে। মানুষটা মোটাসোটা, সাদাসিধে চেহারায়। গত বছর অনেকে ভেবেছিল ফিজিক্সে তিনি নোবেল প্রাইজ পাবেন। Guidedmissiles (নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র) সম্বন্ধে সবচেয়ে নাম করা এক্সপার্টদের মধ্যে তিনি একজন।
প্রফেসর ট্রেন সারি সারি বিরাট আকারের দেওয়াল মানচিত্র-গুলোর কাছে গিয়ে একটার দড়ি ধরে টানেন। মস্ত বড় একটা নকশা বেরিয়ে আসে। সেটাকে দেখতে অনেকটা v,-র মত। ডানা দুটো তার বিরাট। প্রফেসর ট্রেন বলেন, রকেট সম্বন্ধে তুমি কিছুই জান না। তাই সহজ করে বলছি। Nozzle Expansion Ratios, Exhaust Velocity, Raplerian Ellipse ইত্যাদি নানা শক্ত শক্ত কথা আমি ব্যবহার করব না। ড্রাক্স এটার নাম দিয়েছেন মুনরেকার। এটা সিঙ্গল-স্টেজ রকেট। আকাশে সোঁ করে ওঠার সময় এটার সমস্ত জ্বালানী খরচ হয়ে যায়। তারপর ছুটতে থাকে লক্ষ্য বস্তুর দিকে। V, রকেটের গতিপথ হল কামান থেকে ছোঁড়া গোলার মত। সেটা যেতে পারত ২০০ মাইল, ২০০ মাইলের শেষে সেটা উঠতে ৭০ মাইল ওপরে। তার জ্বালানি ছিল এ্যালকোহল আর তরল অক্সিজেন মেশান। সেটা খুব সহজেই জ্বলে ওঠে। তাই সেটায় পানি মেশানো হত, যাতে সেটার তাপে কোমল ইস্পাত গলে না যায়। সেটার ইঞ্জিন এই কোমল ইস্পাত দিয়ে বানানো হত। আরও অনেক শক্তিশালী জ্বালানী পাওয়া যায়। কিন্তু এ-পর্যন্ত সেই সব জ্বালানি নিয়ে একই কারণে আমরা বেশি দূর এগুতে পারিনি। সেগুলোর দহনের মাত্রা এমন বেশি যে সবচেয়ে শক্ত ইঞ্জিনকেও গলিয়ে দিতে পারে। প্রফেসর থেমে বন্ডের বুকে একটা আঙুল দিয়ে বলেন এই রকেট সম্বন্ধে শুধু এই কথাটা মনে রেখ, ড্রাক্সের কোলাম বাইটের জন্য আমরা অনেক বেশি দাহ্য জ্বালানি ব্যবহার করব। যেটা মুনরেকারের ইঞ্জিন গলিয়ে ফেলতে পারবে না। কোলাবাইট গলে ৩৫০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে। যে-ইস্পাত দিয়ে V2-র ইঞ্জিন তৈরি হত সেটা গলে ১৩০০-তে। আমরা ব্যবহার করছি ফুরিন আর হাইড্রোজেন মেশানো জ্বালানি।