বন্ড প্রশ্ন করল, এ-বিষয়ে বারস-এর বন্ধুরা কি বলে? যে লোকটা বারস-এর সঙ্গে এক ঘরে থাকত সে বারৎস এর কথাতেই সায় দিয়েছে বলে। ব্র্যান্ডকে বারস পাগলের মত ভালবাসত বারৎস নাকি বলত ঐ ইংলিশ ম্যানটার জন্যই প্রেমের ব্যাপারে সে সফল হতে পারেনি। বলে সম্প্রতি বারৎস্ খুব মনমরা আর গম্ভীর হয়ে উঠেছিল। এই গুলি করার কথা শুনে মোটেই সে অবাক হয়নি।
বন্ড বলল, সব শুনে ব্যাপারটা সত্যি বলেই মনে হচ্ছে। এটা কল্পনা করতে অসুবিধে হয় না! অভিমানী আর নার্ভাস গোছের এক ছোকরা, মাথায় যার জার্মানদের গো। ভ্যাগলান্সের কি ধারণা?
M বললেন, সে পুরোপুরি নিঃসন্দেহ নয়। খবরের কাগজওয়ালাদের হাত থেকে মেয়েটিকে বাঁচানোই এখন তার প্রধান ভাবনা। আর দেখা মেয়েটির আসল পরিচয় যাতে ফাঁস হয়ে না যায়। সব কাগজই খবরটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দুপুরের এডিশনে সব কাগজে খবরটা ছাপা হবে। মেয়েটির ছবির জন্য সবাই হন্যে হয়ে উঠেছে। মোটামুটি তার মত দেখতে একটি মেয়েকে ভ্যালান্স জোগাড় করেছে। সেই মেয়েটির ছবি আজ সন্ধ্যেয় দেওয়া হবে। ভালোর মধ্যে কোন রিপোর্টারই সেই কারখানার কাছে যেতে পাচ্ছে না। ভ্যালান্স মনে মনে প্রার্থনা করছে জাল মেয়েটির কথা তার কোন আত্মীয় বা বন্ধু যেন ফাঁস করে দিতে না পারে। আজকে করোনারের বিচার হবে। ভ্যালান্স, আশা করছে। আজ সন্ধ্যের মধ্যে এই কেসটা সরকারিভাবে চুকিয়ে দেওয়া হবে। উপযুক্ত তথ্যের অভাবে খবরের কাগজগুলোও ব্যাপারটা নিয়ে আর হৈ-চৈ করতে পারবে না।
বড় প্রশ্ন করল মুনরেকারের প্র্যাকটিস ছোঁড়া কবে হবে?
M বললেন আগে যা ঠিক ছিল তাই, শুক্রবার দুপুর। ট্যাঙ্কের তিন ভাগে জ্বালানী ভরে, নকল বোমা দিয়ে সেটা ছোঁড়া হবে খাড়া ওপর দিকে। ল্যাটিচিউড ৫২ থেকে উত্তর সাগরের একশ বর্গ মাইল জায়গা ফাঁকা করে ফেলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী পুরো খবরটা জানাবেন।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকাবার জন্য M তার চেয়ারে ঘুরলেন। দূরে একটা ঘড়ির শব্দ শুনতে পেল বন্ড। দুপুরে একটা। আজকেও কি তার লাঞ্চ খাওয়া বাদ যাবে? অন্য ডিপার্টমেন্টের কাজ নিয়ে M মাথা না ঘামালে চটপট লাঞ্চ সেরে সে যেতে পারত বেন্টলি কোম্পানিতে। বন্ড তার চেয়ারে নড়েচড়ে উঠল। M আবার চেয়ার ঘুরিয়ে বন্ডের মুখোমুখি হলেন। বললেন, সবচেয়ে ভাল কর্মচারিদের একজন, এ পর্যন্ত কোন রিপোটেই সন্দেহজনক কিছু সে জানায়নি। তারপর হঠাৎ গতকাল বিকেলে এ্যাসিস্ট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারিকে ফোনে সে জানায় কারখানায় কিছু কিছু। সন্দেহ জনক ব্যাপারের হদিস সে পেয়েছে। বলে আজ সকাল দশটায় নিজে সে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবে। টেলিফোনে আর কোন কথা বলতে সে রাজি হয়নি। টেলিফোন করার কয়েক ঘণ্টা পরেই তাকে গুলি করে খুন করা হয়। এটাও একটা আশ্চর্য যোগাযোগ-তাই-না? বন্ড বলল, খুবই আশ্চর্য, কিন্তু সরকার কেন কারখানাটা বন্ধ করে পুরোপুরি তদন্তের ব্যবস্থা করছে না। ব্যাপারটা দারুণ গুরুত্বপূর্ণ, কোন রকম চান্স নেওয়া উচিন নয়। M বললেন আজ খুব ভোরে ক্যাবিনেট মিটিং হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন মুনরেকার-কে স্যাবোটাজ করার প্রচেষ্টার কি প্রমাণ আছে? কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে কোন প্রমাণ নেই, কোন উদ্দেশ্য নেই। কিন্তু ট্যালনের ভাসা-ভাসা খবর আর খুনের ব্যাপারে সবাই কেমন যেন ভয় পেয়ে গেছে। এ-বিষয়ে সবাই এক মত যে, কোন রকম প্রমাণ না পেলে ধরে নিতে হবে এই সব ঘটনার আসল কারণ হচ্ছে কারখানার মধ্যে নিদারুণ কাজের চাপ। পৃথিবীর সর্বত্র এখন একটা ঘোরালো অবস্থা। তাই যত তাড়াতাড়ি মুনরেকার আমাদের ভরসা দেয়, তত ভাল। শুধু আমাদের নয় সমস্ত পৃথিবীর পক্ষে মুনরেকার ছোঁড়ার স্বপক্ষে হাজার যুক্তি আছে, বিপক্ষে একটাও যুক্তি নেই। কথাটা সাপ্লাই মিনিস্টারকে মেনে নিতে হবে। কিন্তু আমরা সবাই জানি, প্র্যাকটিস ছোঁড়ার ঠিক আগে মুনরেকার-কে ধ্বংস করতে পারা রুশীদের পক্ষে মস্ত বড় একটা জিত। ভাল করে স্যাবোটাজ করতে পারলে পুরো পরিকল্পনাটাই বানচাল হয়ে যেতে পারে। মুনরেকার নিয়ে পঞ্চাশ জন জার্মান কাজ করছে। তাদের মধ্যে যে কোন একজনের কোন নিকট আত্মীয় হয়ত রাশিয়াতে এখন বন্দী আছে, যাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে রুণীরা নিজেদের নানা উদ্দেশ্য সাধন করতে পারে। চুপ করে, M ছাদের দিকে তাকালেন। তারপর চোখ রাখলেন বন্ডের চোখে। ক্যাবিনেট মিটিং-এর পর মন্ত্রী আমাকে বলেছেন, তার সঙ্গে দেখা করতে, ট্যালনের জায়গায় এখনই কাউকে তিনি পাঠাতে চান। এই নতুন লোকের জার্মান ভাষা জানা দরকার। স্যাবোইাজের কাজ আর রুশীদের সম্বন্ধে প্রচুর অভিজ্ঞতা থাকাও তার দরকার। M, তিনজন লোকের নাম দিয়েছে। তারা সবাই এখন নানা কাজে ব্যস্ত-বেশ কয়েক দিনের আগে তাদের কারুরই ছুটি নেই। মন্ত্রী আমার মতামত জানতে চেয়েছিলেন। সেটা আমি জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি আলোচনা করেছেন।
খানিকটা বিরক্ত হয়েই বন্ড তাকাল M এর নিষ্করুণ ধূসর চোখের দিকে। নিরুত্তাপ গলায় M বললেন, এই নতুন পদে তোমাকে বহাল করার খবর স্যার হিউগো ড্রাক্সকে জানান হয়েছে। তিনি আশা করেন আজ রাতে তার সঙ্গে তুমি যোগ দেবে।