বন্ডের মনে হোল? এক প্যাকেট তাস আর একটা জোকার। M বলে চললেন, তাদের মধ্যে পঞ্চাশ জন জার্মান। এরা মোটামুটি সেই সব ক্ষেপণাস্ত্র-বিশেষজ্ঞ-রুশীরা যাদের যুদ্ধের শেষে চুরি করে নিয়ে যেতে পারেনি। তাদের এখানে আসার আর মুনরেকারে কাজ করার সব খরচ দিয়েছেন ড্রাক্স। এই ব্যবস্থায় কেউই খুব খুশি হয়নি। কিন্তু অন্য কোন উপায় ছিল না। সরবরাহ দপ্তর তাদের কোন বিশেষজ্ঞকে দিতে পারেনি। যেখান থেকে পেরেছেন ড্রাক্স তাদের জোগাড় করেছেন। বিমান বাহিনীর নিরাপত্তা দলকে জোরদার করার জন্য সরবরাহ-সচিব নিয়োগ করেছিলেন নিজেদের একজন সিকিউরিটি অফিসার। কারখানায় সে থাকত। নাম মেজর ট্যালন। খানিক থেমে M ছাদের দিকে তাকালেন। গত রাত্রে যে দুজন খুন হয়েছে, মেজর ট্যালন তাদের একজন। তাকে গুলি করে এক জার্মান। তারপর নিজের ওপর সে গুলি চালায়। চোখ নামিয়ে বন্ডের দিকে তাকালেন M। বন্ড কোন কথা বলল না। বাকি কাহিনীটা শোনার জন্য অপেক্ষা করে রইল। ঘটনাটা ঘটে কারখানার কাছের একটা বার-এ। বারটা কারখানার কিনারে। সেখানে সেই লোকেদের যাবার অনুমতি ছিল। M থামলেন। তারপর বন্ডের দিকে তাকিয়ে বলে চললেন, তুমি প্রশ্ন করেছিলেএর সঙ্গে আমাদের কি সম্পর্ক? সম্পর্ক এই, যে জার্মানটি মারা গেছে তার এবং অন্য সব জার্মানদের এখানে আসার অনুমতি আমরা দিয়েছিলাম। তাদের সবাইকার দলিলপত্র বিমান বাহিনীর সিকিউরিটি অফিস এবং স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড প্রথমেই মৃত জার্মানের ফাইলটা চেয়ে পাঠায়। গত রাত্রে ডিউটি অফিসারের কাছে তারা যায়। রেকর্ডস থেকে ডিউটি অফিসার কাগজপত্রগুলো খুঁজে বার করে পাঠায় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে। রুটিন কাজ। লগ-বুকে সেটা সে লিখে রাখে। আজ সকালে সেখানে গিয়ে লগ-বুকে লেখাটা দেখে হঠাৎ আমি কৌতূহলী হয়ে পড়ি। তারপর শান্ত গলায় বললেন M, ড্রাক্সের সঙ্গে সন্ধ্যেটা কাটাবার পর, তুমি যা মন্তব্য করেছিলে তাই মনে হল যোগাযোগটা অদ্ভুত।
খুবই অদ্ভুত স্যার, বলল বন্ড। আরও শোনবার জন্য অপেক্ষা করে রইল সে। M বলে চললেন আর একটা ব্যাপার। ব্যাপারটা থেকে হাত মুছে না ফেলে নিজেকে যে জড়িয়ে ফেলেছি–সেটাই তার আসল কারণ। সব কাজ ফেলে আগে এটা করতে হবে। M এর স্বর অত্যন্ত শান্ত হয়ে উঠল। শুক্রবার ওদের মুনরেকার ছোড়বার কথা। আর চারদিনও নেই প্র্যাকটিস করার জন্য এই ছোঁড়া।
চুপ করে পাইপটা তুলে M ধরাতে শুরু করলেন। বন্ড কোন কথা বলল না। তখনও সে বুঝতে পারল না এর সঙ্গে গুপ্তচর দপ্তরের কি সম্পর্ক, যার কাজের এলাকা ইংল্যান্ডের বাইরে। তার মনে হল, এটা তো স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের স্পেশ্যাল ব্র্যাঞ্চ কিংবা MI-এর কাজ। অপেক্ষা করতে করতে নিজের ঘড়ির দিকে তাকাল সে। এখন দুপুর।
পাইপ ধরিয়ে M বলে চললেন। কিন্তু এসব ছাড়াও আমার কৌতূহলের কারণ, গতরাতে ড্রাক্সকে দেখে আমার কৌতূহল হয়েছে। বন্ড বলল, আমারও হয়েছে স্যার। বন্ডের মন্তব্যে কান না দিয়ে M বলে চললেন, তাই লগ-বইটা পড়ে ইয়ার্ডের বড় সাহেব ভ্যালন্সকে টেলিফোন করে পুরো ব্যাপারটা আমি জানতে চাই। ভ্যালন্স বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছিল। আমাকে সে আসতে বলে। আমি বলি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কাজের মধ্যে নাক গলাতে চাই না। কিন্তু সে বলে ইতিমধ্যেই কর্তৃপক্ষকে কথাটা জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলে ব্যাপারটা পুলিশ আর আমার বিভাগের সঙ্গে জড়িত। কারণ যে জার্মান খুন করে, তার কাগজ পত্র ঠিক আছে বলে আমার অফিসে জানিয়েছিল। তাই সেখানে আমি যাই। থেমে M তাঁর নোটের দিকে তাকালেন। তিনি বললেন, জায়গাটা সমুদ্রের তীরে, ডোভার থেকে প্রায় তিন মাইল উত্তরে। এই বার-টা সমুদ্রতীরের প্রধান রাস্তাটার কাছে, যেটার নাম ওয়ার্লড উইদাউট ওয়ান্ট (অভাবশূন্য জগৎ)। সন্ধ্যেয় কারখানার লোকেরা সেখানে যায়। গত সন্ধ্যেয় কারখানার লোকেরা সেখানে যায়। গত সন্ধ্যেয় প্রায় সাড়ে সাতটায় ট্যালন নামে মিনিস্ট্রির সেই সিকিউরিটি অফিসার সেখানে গিয়ে একটা হুইস্কি আর সোডা খেতে খেতে কয়েকজন জার্মানের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল। এমন সময় সেই খুনে-লোকটাকে, তাই যদি বলতে চাও–সেখানে গিয়ে সোজা চলে যায় ট্যালনের কাছে। শার্টের ভেতর থেকে সে একটা লুগার পিস্তল বার করে–ভাল কথা, সেটায় কোন সিরিয়াল নম্বর ছিল না–তারপর বলে গালা ব্র্যান্ডকে আমি ভালবাসি। তুমি তাকে পাবে না। তারপর ট্যালনের বুকে গুলি করে ধোয়া-বেরুনো বন্ধুকের নলটা নিজের মুখে পুরো ট্রিগার টানে। কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার, বলল বন্ড। কল্পনায় সে দেখতে পেল, সেই বার-এর নাচ ঘরে লোকেদের হুড়োহুড়ি করার প্রতিটি খুঁটিনাটি ঘটনা। মেয়েটি কে?
M বললেন, সেটাও আর একটা দুর্বোধ্য ব্যাপার। মেয়েটি স্পেশ্যাল ব্র্যাঞ্চের একজন এজেন্ট, জার্মান জানে। ভ্যালান্সের অফিসের সবচেয়ে ভাল মেয়ে এজেন্টদের একজন। কারখানায় ড্রাক্সের কাছে যারা ছিল তাদের মধ্যে গালা ব্র্যান্ড আর ট্যালন ছাড়া সবাই জার্মান। ভ্যালন্স সন্দিগ্ধ প্রকৃতির লোক। সেটাই দরকার। ইংল্যান্ডের মধ্যে এই মুনরেকার প্ল্যানটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে কিছু না বলে, মোটামুটি নিজের সহজাত ধারণার ওপর নির্ভর করে নানা কৌশলে ড্রাক্সকে সে রাজি করায় গালা ব্র্যান্ডকে তাঁর প্রাইভেট সেক্রেটারি করে নিতে। গোড়া থেকেই ব্র্যান্ড সেখানে আছে। এ পর্যন্ত রিপোর্ট করার মত কিছুই সে পায়নি। তার সঙ্গে দ্র ব্যবহারের কথা বাদ দিলে মনিব হিসেবে ড্রাক্স খুবই ভাল। কর্মচারিদের দারুণ খাটায় সে। যথারীতি ব্র্যান্ড বলেছিল, একজনের সঙ্গে সে বাগদত্তা। তার সত্ত্বেও গোড়ার দিকে তার সঙ্গে ট্যালন প্রেম করার চেষ্টা করে। কিন্তু যখন সে দেখে ব্র্যান্ড আত্মরক্ষা করতে সমর্থ, তখন থেকে তাকে আর সে জ্বালাতন করেনি। ব্র্যান্ড বলে, এখন তারা খুব ভাল বন্ধু। ট্যালনকে অবশ্য ব্র্যান্ড আগে থেকেই চিনত। কিন্তু ট্যালন তার বাবার বয়সী। তাছাড়া তার বিবাহিত জীবন সুখের, ছেলেমেয়ে চারটি। ভ্যালান্সের লোক আজ সকালে ব্র্যান্ডের সঙ্গে দেখা করে। তাকে ব্র্যান্ড বলেছে, গত আঠার মাসের মধ্যে মাত্র দু-বার ট্যালন তাকে সিনেমায় নিয়ে গিয়েছিল–বাপ যেভাবে নিজে মেয়েকে নিয়ে যায়। যে-লোকটা খুন করেছে, তার নাম এগ বারস। ইলেক্ট্রনিক্সের ব্যাপারে লোকটা এক্সপার্ট। বলতে গেলে ব্র্যান্ড তাকে দেখেইনি।