ডিস্ট্রিবিউশন স্লিপের ওপর টিক দিয়ে নাম সই করে পরের ফোল্ডারের দিকে সে হাত বাড়াল। এটার নাম ফিলোপোন-জাপানি খুনে-মাদক।
বন্ড পড়তে লাগল।
জাপানে অপরাধ বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ফিলোপোন। জনকল্যাণ মন্ত্রকের মতে জাপানে এখন এই মাদকে আসক্ত মানুষের সংখ্যা ১৫ লক্ষ, এদের মধ্যে ১০ লক্ষের বয়েস কুড়ি বছরেরও কম। টোকিও পুলিশের ধারণা তরুণদের অপরাধের শতকরা ৭০ ভাগের মূলে আছে এই মাদকদ্রব্য।
আমেরিকার মারিজুয়ানার (গাঁজা) মত ফিলোপোনের একটা ইনজেকশনেই আসক্তি জন্মায়। এর ফলে উত্তেজনা জন্মায় এবং ক্রমশ এটা অভ্যেসে দাঁড়িয়ে যায়। এটার দামও সস্তা, ইনজেকশন পিছু প্রায় দশ ইয়েন (ছ পেন্স)। আসক্ত ব্যক্তি খুব তাড়াতাড়ি ইনজেকশনের পরিমাণ বাড়িয়ে ফেলে। দিনে প্রায় ১০০ টা পর্যন্ত। তখন আর সেটা সস্তা থাকে না। বেশ খরচের ব্যাপার হয়ে পড়ে। ফলে নেশার দাম জোগাড় করার জন্য আসক্ত ব্যক্তি নানা অপরাধ করতে থাকে। এই অপরাধের অন্তর্গত হচ্ছে দৈহিক আক্রমণ এবং খুন। তার কারণ এই মাদকের অদ্ভুত এক বৈশিষ্ট্য। এই মাদক একটা তীব্র নির্যাতন মনোভাব (Persecution Comlpex) আসক্ত ব্যক্তির মনে নিয়ে আসে। তার মনে একটা কাল্পনিক ভয় জন্মায়, সব সময়ে মনে হয় লোকে তাকে খুন করতে চাইছে, সর্বদাই লোকে তার পিছু নিচ্ছে ক্ষতি করার উদ্দেশ্য নিয়ে। যদি তার মনে হয় পথের কোন অপরিচিত লোক আপত্তিজনকভাবে তাকে দেখছে তা হলে সে সেই অপরিচিত লোককে কিল-চড়-লাথি মারতে শুরু করে কিংবা ক্ষুর নিয়ে তেড়ে যায়। যাদের আসক্তি খুব বাড়েনি। তারা সেই সব পুরনো বন্ধুদের এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে, দিনে যাদের দৈনিক মাত্রা একশতে পৌচেছে। ফলে শেষোক্ত আসক্ত ব্যক্তির নির্যাতন মনোভাব আরও যায় বেড়ে। এইভাবে আসক্ত ব্যক্তির মনে একটা ধারণা গড়ে ওঠে। তাদের মনে হতে থাকে খুন করাটা নিষ্পাপ এবং সমর্থন যোগ্য–তারা মনে করে, খুন করছে আত্মরক্ষার জন্য, কোন পাপ নয় সহজেই বোঝা যায়। সংগঠিত অপরাধ মূলক কাজ পরিচালনার ব্যাপারে ধূর্ত লোকের হাতে ফিলোপোন কি রকম একটা বিপজ্জনক হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। জানা গেছে কুখ্যাত Bar Mecca মার্ডার কেসের মূলে ছিল ফিলোপোন। সেই অপ্রীতিকর ঘটনার পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে উক্ত মাদকের পাঁচ হাজারের বেশি সরবরাহকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
যথারীতি কোরিয়ানদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে… হঠাৎ বন্ডের সমস্ত মন বিদ্রোহ ঘোষণা করল। এই সব পড়ে তার লাভটা কি? ফিলোপোন নামে একটা জাপানি খুনে-মাদক সম্বন্ধে এই সব জ্ঞান কবে কখন তার কাজে লাগবে?
অন্যমনস্কভাবে কোন রকমে বাকি পাতাগুলোর উপর চোখ বুলিয়ে ডিস্ট্রিবিউশন স্লিপে টিক চিহ্ন দিয়ে নিজের নাম সই করে আউট-লেখা ট্রর মধ্যে ডকেটটাকে সে ছুঁড়ে ফেলল।
মাথার যন্ত্রণাটা তখন নেমে আসছে তার ডান চোখের ওপর। পেরেক দিয়ে সেটা যেন সেখানে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। ডেস্কের একটা ড্রয়ার খুলে ফেনসিক-এর একটা শিশি-সে বার করল। একবার ভাবল সেক্রেটারিকে বলে এক গ্লাস পানি দিতে। কিন্তু সে চায় না কেউ তার জন্য আহা উঁহু করে। তাই মুখ বিকৃত করে দুটো ট্যাবলেট দাঁতে শুড়িয়ে সেই তীব্র বিস্বাদ গুঁড়োটা সে গিয়ে ফেলল। তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে দাঁড়াল গিয়ে জানালার সামনে। উদ্দেশ্যহীনভাবে তাকাল নিচেকার সবুজ দৃশ্য আর লন্ডনের দিগন্তের দিকে। কিন্তু কোন কিছুই যেন তার চোখে পড়ল না। শুধু মনে পড়তে লাগল গত রাতের অদ্ভুত ঘটনা গুলোর কথা।
যত ভাবতে লাগল ততই অদ্ভুত বলে মনে হতে লাগল তার। ড্রাক্স কোটিপতি। জনসাধারণের কাছে হিরো। দেশে অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠা। কেন তিনি তাস খেলায় জোচ্চুরি করেন? এই জোচ্চুরি করে তার লাভ কি? নিজের কাছে কি প্রমাণ করতে চান তিনি। তিনি কি নিজেকে মনে করেন সবাইকার চেয়ে এমনি ঊর্ধ্বে যে অনায়াসে জনমতের ওপর থু থু ছিটোতে পারেন।
বন্ডের চিন্তাধারা স্তব্ধ হল, জনসাধারণের মুখে থু থু ছিটানো! ধিক! ব্লেস-এ তার ধরণ-ধারণের এইটাই অর্থ। উন্নাসিকতা ও ঘৃণার মিশ্রণ। সব মানুষগুলোই যেন নোংরা জঞ্জাল। ঘৃণারও অযোগ্য। তাদের সঙ্গে ভদ্র আচরণের ভান করারও দরকার নেই।
স্পষ্টতই ড্রাক্স জুয়া খেলতে ভালবাসেন। হয়ত তাতে তাঁর চাপা উত্তেজনার লাঘব হয়। যে উত্তেজনা ফুটে ওঠে তার কর্কস স্বরে, দাঁত দিয়ে ক্রমাগত নখ কাটায় এবং সর্বদা গলগল করে ঘামার মধ্যে। কোথাও কিছুতেই হারব না এই তার মনের ভাব। এই নিচু স্তরের মানুষগুলোর কাছে হার মানা ভারি লজ্জার ব্যাপার। তাই সবরকম ঝুঁকি নিয়ে। জাল-জোচ্চুরি করে জিততে তাঁকে হবেই। নিশ্চয়ই তাঁর ধারণা-যে কোন অবস্থা থেকেই হুমকি দিয়ে তিনি বেরিয়ে আসতে পারবেন। বন্ডের মনে হল, মোহগ্রস্ত মানুষরা সাধারণত বিপদ সম্বন্ধে অন্ধ হয়ে থাকে। চৌর্যোদরা ক্রমশ কঠিন কঠিন জিনিস চুরি করার চেষ্টা করে। যৌনোন্মত্তরা এমন অসভ্যতা শুরু করে, যেন গ্রেফতার হতে চায়। কিন্তু কোন্ মোহ এই মানুষটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করছে। তার মধ্যেকার এই সর্বনাশা তাগিদের আদি কারণ কি, যেটা তাঁকে খাড়া পাহাড় থেকে সোজা টেনে নিয়ে চলেছে সমুদ্রের মধ্যে?