সামনে ঝুঁকে তিনি তাঁর সিগারেট কেস এবং লাইটারটা তুলে নিলেন।
তারপর বন্ডের দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত গলায় তিনি বললেন, কম্যান্ডার বন্ড। এই টাকাটা খুব চটপট খরচ করে ফেলতে চেষ্টা কর।
টেবিল থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে ঘর থেকে তিনি বেরিয়ে গেলেন।
.
দ্বিতীয় খণ্ড—মঙ্গলবার বুধবার
আট্রালোল টেলিফোন
রাত দুটো পর্যন্ত বিছানায় শোয়নি বন্ড। তবু পরের দিন কাঁটায় কাঁটায় সকাল দশটায় হেড কোয়ার্টার্সে পৌঁছল। তার বিশ্রী লাগছিল, প্রায় পুরো দু বোতল শ্যামপেন খাবার জন্য খুব অম্বল আর একটা ক্লান্ত মনমরা ভাব। সেটা
আংশিকভাবে বেনজিড্রিন ও আংশিকভাবে গত রাত্রের নাটকের প্রতিক্রিয়া।
আর একটা রুটিন মাফিক কাজের দিন শুরু করার জন্য লিফটে সে যখন ওপরে উঠছিল গত রাত্রে তিক্ত স্বাদ তখনো তার দেহ মনে।
মেয়ার চলে যাবার পর কোটের দু পকেটে থেকে দু প্যাকেট তাস বার করে ব্যাসিলডন এবং M-এর সামনে টেবিলে সে রেখেছিল। একটা প্যাকেটের রঙ নীল-ড্রাক্স যেটা বেটে তাকে দেন এবং সেটা হাত সাফাই করে পকেটস্থ করে রুমালের আড়ালে তার জায়গায় সে বার করে আনে অন্য একটা নীল প্যাকেট। এই প্যাকেটটা ছিল তার ডান পকেটে। বা পকেটে ছিল আর একটা লাল প্যাকেট। সেটার দরকার পড়েনি।
লাল তাসগুলো M আর ব্যাসিলডনের সামনে টেবিলে সাজিয়ে বন্ড দেখায় সেগুলো দিয়েও একইভাবে Grand Slom করে ড্রাক্স-কে সে হারাতে পারত।
বন্ড বলে, এটা কাল বটসনের সাজানো বিখ্যাত হাত। আমি লাল এবং নীল দু রঙের তাসই সাজিয়ে রেখেছিলাম– কারণ জানতাম না কোন রঙের তাস আমাকে বিলি করতে হবে।
ব্যাসিলডন কৃতজ্ঞচিত্তে বললেন, একেবারে মোক্ষম প্যাঁচ কষেছিলে। আশা করি আসল কথাটা ড্রাক্স এবার বুঝবে। ভবিষ্যতে হয়ত সে আর খেলবে না। যদি বা খেলে, তাহলে খেলবে জোচ্চুরি না করে সোজাসুজি খেলা। আজ রাতে তার বেশ মোটা টাকা খসেছে। তোমার জিত নিয়ে আমরা কোন আলোচনা করব না। আজ রাত প্রত্যেকের দারুণ উপকার করেছ, বিশেষ করে ড্রাক্সের। কোন রকম ভুলচুক হলে তোমাকেই হারতে হত মোটা টাকা। শনিবার চেকটা তোমার কাছে পৌঁছবে।
শুভরাত্রি জানিয়ে বিদায় নেবার পর বন্ড তার ফ্ল্যাটে যায় ঘুমতে। সেই রাত্রে অদ্ভুত ঘটনাগুলো ভোলার এবং পরের দিন সকালে অফিসে সুস্থ শরীরে যাবার জন্য বন্ড ঘুমের একটা বড়ি খায়।
দরজা বন্ধ করার পর বন্ডের চোখের নিচেকার কালচে ছোপের দিকে লোয়েলিয়া পসেবি লক্ষ্য করল।
এক মুখ হেসে সে বলল, খানিক কাজ, খানিক খেলা। পুরোপুরি পুরুষ সঙ্গীদের সঙ্গে বেনজিড্রিনটার জন্য ধন্যবাদ। বাস্তবিকই সেটার খুব দরকার ছিল। আশা করি সন্ধ্যেটা তোমার মাটি করে দিইনি।
লোয়েলিয়া বলল, মোটেই না। তার মনে পড়ল, বন্ড টেলিফোন করার পর লাইব্রেরির বই আর ডিনার ছেড়ে তাকে উঠে যেতে হয়েছিল। নিজের শর্টহ্যান্ড প্যাডের দিকে তাকিয়ে সে বলল, আধঘণ্টা আগে বড়কর্তা ফোন করেছিলেন। বললেন আজ তোমাকে M-এর দরকার। কখন–তা বলতে পারেননি। আমি তাকে জানাই আজ বিকেল তিনটেয়। তোমার নিরস্ত্র লড়াইয়ের মহড়া আছে। তিনি বলেছেন সেটা বাতিল করে দিতে, এই খবর। তাছাড়া আছে গতকালের বাকি কাগজপত্রগুলো। বন্ড বলল, বাঁচলাম, সেই কম্যান্ডো ছোকরার সঙ্গে কিছুতেই আজ লড়তে পারতাম না। ০০৪ এর কোন খবর আছে? লোয়েলিয়া বলল, হ্যাঁ। সে নাকি ভালই আছে। ওয়ারেন হাউড-এর মিলিটারি হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্পষ্টতই এটা শক্-এর ব্যাপার। বউ জানে তাদের পেশায় শক বলতে কি বোঝায়। মুখে বলল ভাল, কিন্তু খবরটা সত্যি সত্যি ভাল বলে তার মনে হল না। লোয়েলিয়ার দিকে আবার হেসে নিজের অফিস ঘরে গিয়ে সে দরজা বন্ধ করল।
দৃঢ় পায়ে ডেস্কের কাছে গিয়ে চেয়ারে বসে ওপরকার ফাইলটা নিজের দিকে সে টেনে নিল। শেষ হয়েছে সোমবার। মঙ্গলবার আজ। নতুন একটা দিন নিজের টিপটিপ করা মাথা আর গত রাতের ঘটনাগুলো ভোলবার চেষ্টা করে একটা সিগারেট ধরিয়ে বাদামী রঙের ফোল্ডারটা খুলল। সেটার ওপর লাল তারার চিহ্ন অর্থাৎ একান্ত গোপনীয়। আমেরিকায় কাস্টমস্ ব্রাঞ্চ-এর প্রধান নিরাপত্তা অফিসারের কাছে থেকে এসেছে। শিরোনামায় লেখা : The Inspectoscope
বন্ড পড়তে লাগল, চোরাই চালান ধরবার জন্য এই ইন্সপেক্টোস্কোপ যন্ত্র ফুরোস্কোপিক (fluoroscopic) পদ্ধতিতে কাজ করে। সানফ্রানসিসকোর সিকুলার ইন্সপেক্টোস্কোপ কোম্পানী এই যন্ত্র তৈরি করে। অপরাধী ও জেল দর্শনার্থীদের পোশাক কিংবা দেহে ধাতব দ্রব্যের গোপন সন্ধানের জন্য আমেরিকার নানা জেলে এই যন্ত্র ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আফ্রিকা এবং ব্রাজিলে হীরের খনিতে বেআইনী হীরে কেনা এবং চোরাপথে হীরে পাচারও ধরবার জন্যও এই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। যন্ত্রটার দাম সাত হাজার ডলার। এটা লম্বায় প্রায় আট ফুট, উচ্চতায় সাত ফুট এবং ওজনে প্রায় তিন টন। এর জন্য দরকার দু-জন দক্ষ অপারেটর। আইড়ওয়াইল্ডের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম্স্ হলে এই যন্ত্র নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে দেখা গেছে যে…
দুটো পাতা বন্ড বাদ দিয়ে গেল। তাতে ছিল কয়েকটা ছোট খাটো চোরা চালানের খুঁটিনাটি বিবরণ। সিদ্ধান্তগুলোর সারাংশ ভাল করে সে পড়ল। পড়ে খানিক বিরক্ত হল সেঃ বুঝতে পারল পরের বার বিদেশে যাবার সময় তার ২৫ বেরেটা পিস্তলটাকে অন্য কোথাও লুকোতে হবে–বগলের মধ্যে আর সেটাকে নেওয়া চলবে না। স্থির করল এই সমস্যা নিয়ে যন্ত্রপাতি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।