বন্ড বলল, এটাই আমার শেষ রাবার। সকাল সকাল উঠতে হবে। আশা করি আমাকে আপনারা ক্ষমা করবেন। সেই সন্ধ্যেয় প্রায় অধিকাংশ সময় মেয়ার ছিলেন প্রায় নীরব। স্কোর-কার্ড থেকে মুখ তুলে তাকালেন ড্রাক্স বন্ডের দিকে। লক্ষ্য করলেন বন্ড মাতাল হয়ে পড়েছে।
ড্রাক্স বললেন, এ পর্যন্ত হার জিতের হিসেব হাস্যকর রকম কম। দেখছি এ-পর্যন্ত তোমরা জিতেছ মাত্র শ দুয়েক পাউন্ড। খেলা শেষ করে যেতে চাইলে অবশ্য তোমরা যেতে পার। কিন্তু আর চড়া বাজি ধরে শেষবারের মত আর একটা গেম খেললে কেমন হয়? শেষ রাবার-এ বাজিটাকে যদি আমরা তিনগুণ করি?
Fifteen and fifteen রাজি?
ড্রাক্সের আরক্ত মুখের নিরুত্তাপ চোখটার দিকে তাকাল বন্ড। কেটে কেটে অত্যন্ত স্পষ্ট করে সে বলল, একশ তে দেড়শ পাউন্ড, রাবার-এ দেড় হাজার।–রাজি।
.
সাত হাত সাফাই
মুহূর্তের জন্য টেবিলের চারপাশের সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল। সেই স্তব্ধতা ভাঙল মেয়ারের উত্তেজিত স্বরে। উদ্বিগ্ন গলায় তিনি বললেন, হিউগো, আমাকে বাদ দাও। তিনি জানতেন বন্ডের সঙ্গে ড্রাক্সের এটা ব্যক্তিগত বাজি। তা সত্ত্বেও ড্রাক্সকে বোঝাতে চাইলেন, তিনি ভারি নার্ভাস হয়ে পড়েছেন। মনে হচ্ছে তিনি কোন মারাত্মক ভুল করে বসবেন। ফলে তার পার্টনার হারবে রাশি রাশি টাকা।
খিঁচিয়ে উঠে ড্রাক্স বললেন, বোকার মত কথা বল না, ম্যাক্স। নিজের খেলা খেল। এই বাজির সঙ্গে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। এই বেপরোয়া বন্ধুর সঙ্গে এটা একটা ব্যক্তিগত মজাদার বাজি। শুরু করে দাও অ্যাডমিরাল M তাস বাটলেন। খেলা শুরু হল। বন্ড সিগারেট ধরাল। তার কাঁপা হাত-দুটো হঠাৎ স্থির হয়ে উঠেছে। মাথা তার একেবারে পরিষ্কার। সে জানে ঠিক কি এবং কখন তাকে করতে হবে। চরম সিদ্ধান্ত নেবার মুহূর্ত উপস্থিত। তাই সে খুশি।
চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল বন্ড। টের পেল তার দু পাশে লোক গিজগিজ করছে। তার কাঁধের উপর ঝুঁকে তার তাসগুলো দেখার জন্য সবাই উদগ্রীব। মনে হল সবাই তার স্বপক্ষে, ড্রাক্সকে সে যে কঠোর শিক্ষা দিতে চলেছে সবাই সেটা অনুমোদন করেছে।
সেই বিখ্যাত জুয়া খেলার ঘরের নেপথ্যে নানা শব্দে তার চিন্তা সূত্র ছিন্ন হোল, চারদিকে তাকাল বন্ড। সেই লম্বা ঘরের মাঝখানকার ঝাড়বাতির তলায় কয়েকজন পোকার খেলা দেখছিল। নানা কাটা কাটা কথা ভেসে আসছে– তোমার বাজির ওপর আরও একশ চড়ালাম। আরও একশ আরও একশ, চুলোয় যাও। আমার হাতটা দেখাব। তারপর বিজয়োল্লাস।
বন্ডের মনে পড়ল এই বিখ্যাত ঘরে দেড়শ বছর ধরে প্রায় প্রতি রাত্রেই এই একই দৃশ্য অভিনীত হয়ে আসছে। হারজিতের সেই একই দৃশ্য অভিনীত হয়ে আসছে। হারজিতের সেই একই নাটক। বন্ড জুয়া খেলতে ভালবাসে।
তাই তার কাছে এটাই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্য। সবকিছু মনে রাখার জন্য শেষবারের উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্য। সবকিছু মনে রাখার জন্য শেষবারের মত চারদিকে তাকাল সে, তারপর মুখ ফেরাল নিজের টেবিলের দিকে। নিজের তাস তুলল বন্ড। চোখ-দুটো তার চকচক করে উঠল। এই প্রথম ড্রাক্সের ডিল-এ গেম করার মত একটা নিখুঁত হাত সে পেয়েছে। সাতটা স্পেস, তার মধ্যে চারটে সবচেয়ে বড় অনার্স। হার্টস-এর টেক্কা আর ডায়মন্ডস্ এর টেক্কা ও সায়েব। ড্রাক্সের দিকে তাকাল। তিনি আর মেয়ার কি সব ক্লাসগুলো পেয়েছেন? পেলেও বন্ড তাদের চেয়ে বেশি ডাক দেবে।
নো বিড ড্রাক্স বললেন, বন্ড-এর হাত তার জানা। তার স্বরের মধ্যে ফুটে উঠল তিক্ততা। ফোর স্পেড়স বলল বন্ড। মেয়ার আর M নো বিড দিলেন। অনিচ্ছাসত্ত্বেও ড্রাক্সও দিলেন নো বিড। M এর হাত থেকে খানিকটা সাহায্য পাওয়া গেল। পাঁচটার খেলা করল বন্ড। লাইনের তলায় দেড়শ পয়েন্ট। লাইনের ওপরে অনার্সের দরুন একশ।
সাবাস! বন্ডের কনুয়ের পেছন থেকে একটা স্বর শোনা গেল। মুখ তুলে বন্ড দেখতে পেল ব্যাসিলডনকে, নিজের খেলা শেষ করে তিনি এসেছেন অন্য যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থা দেখতে।
বন্ডের স্কোর-কার্ড তুলে তিনি দেখলেন। হেসে বললেন, এ দেখছি একবারে টুটি টিপে মার। মনে হচ্ছে চ্যাম্পিয়নদের তুমি কোণঠাসা করে ফেলেছ। বাজিটা কি? বন্ড চাইল উত্তরটা ড্রাক্সই দিন। বেজায় খুশি হয়ে উঠল সে।
ঠিক লাগসই সময়ে ব্যাপারটা ঘটেছে। নীল তাসগুলো কেটে ড্রাক্স রাখলেন বন্ডের সামনে। বাঁটা তাসগুলো একসঙ্গে করে বন্ড রাখল নিজের সামনে, টেবিলের কিনারে।
Fifteen and Fifteen। আমার বাঁয়ে ড্রাক্স বললেন, বন্ড শুনল ব্যাসিলডনকে জোরে নিশ্বাস টানতে। ছোকরা জুয়া খেলতে চায়। তাই তাকে সুযোগ দিয়েছি। সব ভাল ভাল তাস দেখছি ও-ই পাচ্ছে …
গজ গজ করতে লাগলেন ড্রাক্স।
টেবিলের ওপাশ থেকে M লক্ষ্য করলেন বন্ডের ডান হাতে একটা সাদা রুমাল। M এর চোখ দুটো তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। সেটা দিয়ে বন্ড মুখ মুছল। M দেখলেন মেয়র আর ড্রাক্সের দিকে বন্ডকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে। তারপর রুমালটা বন্ড পকেটে ভরল।
বন্ডের হাতে এক প্যাকেট নীল তাস। সেগুলো বিলি করতে শুরু করল বন্ড।
ব্যাসিলডন বললেন, সাংঘাতিক বাজি। এখানে একবার ব্রিজে হাজার পাউন্ডের সাইড বেট ধরা হয়েছিল। কিন্তু সেটা ১০১৪–১৮ এর লড়াইয়ের আগেকার ঘটনা, যখন রবারের বাজার খুব গরম, আশা করি কোন গণ্ডগোল হবে না। এটা তার আন্তরিক কথা। সাধারণত প্রাইভেট গেমে চড়া বাজির ফলে নানা গন্ডগোল পাকিয়ে ওঠে। M এবং ড্রাক্সের মাঝখানে গিয়ে তিনি দাঁড়ালেন।