বন্ড বলল, আমি তাঁকে বুঝিয়ে দিতে পারি তার জোচ্চুরিটা ধরে ফেলেছি সেই সঙ্গে তাঁর কায়দাতেই পারি তাঁর পিঠের চামড়া ছাড়িয়ে নিতে। অবশ্য তাতে মেয়ারের খুবই লোকসান হবে।
ব্যাসিলডনের বুক থেকে যেন একটা ভারি বোঝা নেমে গেল। M-এর দিকে তাকিয়ে বন্ড প্রশ্ন করল, এতে আপনার আপত্তি নেই তো?
M কিছুক্ষণ ভেবে তাকালেন ব্যাসিলডনের দিকে। তাঁর মনের কথা স্পষ্ট হয়ে উঠল।
বন্ড কোটের দু পকেটে হাত চালিয়ে সিল্কের সেই দুটো রুমাল ছুঁয়ে নিল। বন্ড এখন চায় এই ঘরে দশ মিনিট একটু একলা থাকতে, আর চায় দু রঙের দু-প্যাকেট তাস। নিশ্চয়ই সফল হবে।
.
ব্লেডস্–এ ডিনার
তখন সন্ধ্যে আটটা। তাস খেলার ঘর থেকে বেরিয়ে বড় বড় দরজার ভিতর দিয়ে M-এর পিছনে পিছনে বন্ড পৌঁছাল ব্লেড -এর সুন্দর সাদা ও সোনালি রঙের রাজকীয় ডাইনিং রুমে।
ব্যাসিলডন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে বসেছিলেন। তিনি তাদের আমন্ত্রণ জানালেন। M ইঙ্গিতে বন্ডকে বসতে বললেন গদিমোড়া একটা চেয়ারে। নিজে বসলেন বন্ডের বাঁ পাশের একটা চেয়ারে, ঘরের আর সবাইকার দিকে পিঠ ফিরিয়ে।
একজন ওয়েস্ট্রেস এসে টেবিলের ওপর রাখল র্যাকভর্তি তাজা টোস্ট আর রূপার ডিশ-এ জার্সি মাখন। টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়ার সময় তার কালো স্কার্ট বন্ডের হাত ছুঁয়ে গেল। বন্ড তাকিয়ে দেখল রেশমের মত নরম চুলের তলায় কৌতুক ভরা জুলজুলে দুটি চোখ। সেই চোখ দুটি মুহূর্তের জন্য বন্ডের চোখের দিকে স্থির হয়ে রইল।
M প্রশ্ন করল, শ্যামপেনের ওপর তোমার অত ঝোঁক কেন?
বন্ড বলল, কিছু মনে করবেন না স্যার–আজ রাতে আমাকে মাতাল হতে হবে। কিছুটা নেশা না হলে এ রকম অভিনয় করা খুব কঠিন। রাতে আমি বেহেড মাতাল হয়ে পড়েছি বলে মনে হল আশা করি আপনি ঘাবড়ে যাবেন না।
M বললেন, কাজের সুবিধার জন্য যত খুশি ড্রিংক কর, আমার আপত্তি নেই।
মাখন মাখানো টোস্ট চিবুতে চিবুতে তিনি বললেন, ড্রাক্স মানুষটা সম্বন্ধে তোমার কি ধারণা?
বন্ড এক টুকরো স্কোল্ড ম্যামন মুখে দিয়ে বলল, তার হাবভাব মোটেই ভাল নয়। এখানে তাকে আপনারা বরদাস্ত করেন দেখে প্রথমটায় আমি বেশ অবাকই হয়েছিলাম। হাজার হলেও তিনি আমাদের জাতীয় হিরো, কোটিপতি আর স্পষ্টতই একজন ভাল তাস খেলোয়াড়। আমি শুধু বুঝতে পারছি না তাসের এই জোচ্চুরি করে সবকিছু খোয়াবার ঝুঁকি তিনি কেন নিচ্ছেন এটা বাস্তবিকই কল্পনার বাইরে। তিনি তাস নিয়ে এমন উত্তেজিত হয়ে ওঠেন যে, মনে হয় এটা মোটেই শুধুমাত্র খেলা নয়–এটা যেন অপরের সঙ্গে নিজের শক্তি পরীক্ষার ব্যাপার। তাঁর মধ্যে কোথায় যেন সব সময়েই উত্তেজনার একটা টান টান ভাব রয়েছে। সেটা বোঝা যায় তাঁর বীভৎস ধরনের ঠাট্টা ইয়ার্কির মধ্যে। লোকটাকে একেবারেই আমি বরদাস্ত করতে পারছি না। আজ রাতে তাকে খুব জ্বলুনি ধরা হুল ফোঁটাবার আমার ইচ্ছা।
M বললেন, তোমার কথাগুলো বুঝলাম, কিন্তু মনে হয় লোকটার প্রতি হয়ত সুবিচার করছ না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস জীবনে উন্নতি করার জন্য তাকে অনেক শর্ট-কাট পথ বেছে নিতে হয়েছে। কে যেন বলেছিল খুব ধনী হবার জন্য দরকার অবিশ্বাস্য অনুকূল পরিবেশ আর অফুরন্ত সৌভাগ্য। শুরুতে দশ হাজার পাউন্ড বা এক লাখ পাউন্ড জোগাড় করতে হলে একটা অসাধারণ অনুকূল পরিবেশের একান্ত দরকার। যুদ্ধের পর পণ্যদ্রব্যের ব্যবসায়ে ছিল নানা কড়া আইনকানুন। তাতে মোটা লাভ যারা করেছে, আমার মনে হয় নানা অফিসারকে মোটা ঘুষ তাদের দিতে হয়েছে। হঠাৎ একজন ছোকরা চাকর তাদের টেবিলের কাছে এসে প্রশ্ন করল, কম্যান্ডার বন্ড বন্ডকে সে একটা খাম দিল। খামটা ছিঁড়ে পাতলা কাগজের একটা প্যাকেট বার করে টেবিলের নিচে সাবধানে বন্ড খুলল। তার মধ্যে ছিল সাদা পাউডার। কিছুটা পাউডার তুলে বন্ড শ্যাম্পেনের গ্লাসে মিশিয়ে নিল। M জানতে চাইল এটা কি ব্যাপার।
বন্ড বলল, এটা বেনজিড্রিন। আজ রাতে মাথা পরিষ্কার করে রাখতে গেলে এটা আমার দরকার। এটা খেলে নিজের ওপর একটু বেশি রকমের বিশ্বাস জন্মাতে পারে। কিন্তু, তাতে আমার কাজের সুবিধাই হবে।
বন্ড বলল, ভাল কথা, আজ রাতে কি রকম বাজি ধরে খেলা হবে। আমাদেরই জেতার কথা। কিন্তু জানতে চাই। ড্রাক্স কতটা হারতে পারেন।
M বললেন, সে One and One বাজি ধরে খেলা পছন্দ করে। কথাগুলোর মানে না জানলে মনে হবে বাজিটা সামান্য। একশ তে দশ আর প্রতি রাবার এ একশ পাউন্ড।
সসম্ভমে বন্ড বলল, বুঝলাম । বরফের মত ঠাণ্ডা বাদবাকি শ্যামপেন বন্ড তার গ্লাসে ঢালল। তার মন তখন ভারি প্রফুল্ল হয়ে উঠেছে। সে ঘরের চারদিকে তাকাতে লাগল। সেখানে গোটা পঞ্চাশেক লোক। অধিকাংশ লোকের পরনে ডিনার জ্যাকেট। চড়া বাজির জুয়া খেলার সম্ভাবনায় প্রত্যেকেই বেশ কিছুটা উত্তেজিত। ঘরের মাঝখান থেকে ঝুলছে বিরাট এক ঝাড়বাতি। প্রত্যেক টেবিলের মাঝখানে লাল সিল্কের শেড় দিয়ে ঢাকা মোমবাতি দান।
এই সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, উষ্ণ পরিবেশের মধ্যে বন্ড যখন ড্রিঙ্ক শেষ করছিল, কতকগুলো টেবিল থেকে লোজন উঠতে শুরু করল। স্যার হিউগো ড্রাক্সের রোমশ লালচে মুখ একটা প্রফুল্ল প্রত্যাশায় জ্বলজ্বল করছিল। M আর বন্ডের দিকে তিনি এগিয়ে এলেন। তার পিছনে মেয়ার।