বন্ডের মন তখন লাঞ্চ খেতে যাবার জন্য ছটফট করছিল। আর M এমন ধরনের মানুষ যার ক্ষুধা তৃষ্ণা ঘুম বলে কোন কিছুরই বালাই নেই। তবু ধৈর্য ধরে সে বলে চলল, ধরা যাক ড্রাক্স পেশাদার জোচ্চোর নন। ধরা যাক তাস নিয়ে কোন রকম কারসাজি তার পক্ষে করা অসম্ভব। তা হলে ব্যাপারটার দুটো মাত্র উত্তর আছে। হয় কোন রকমে বিপক্ষের হাত তিনি দেখেন, নয়ত তার সঙ্গীর সঙ্গে একটা গোপন ইশারা-টিশারা করেন।
M বললেন, বন্ড আজ রাতে তুমি আসতে পারবে? অন্য কিছু না, ডিনারটা খুব ভাল পাবে। ডিনারের পর ড্রাক্স আর তার বন্ধুর সঙ্গে আমরা কয়েক বাজি রাবার খেলব। তারা প্রতি সোমবারেই আসেন।
বন্ড মৃদু হেসে বলল, ড্রাক্স যদি তাসে জোচ্চুরি করেন, আমি বুঝিয়ে দেব ধরতে পেরেছি। তাতেই তিনি ভবিষ্যতে সাবধান হয়ে যাবেন। আমি চাই না তিনি কোন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। আর কোন কাজ আছে স্যার? ।
M বললেন, না জেমস্ আর কোন কাজ নেই। তোমার সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ। সন্ধ্যে ছ-টা নাগাদ তোমার সঙ্গে আবার তাহলে দেখা হচ্ছে। ডিনারের পোশাক পরার তোমার দরকার নেই। যাও এখন গিয়ে তৈরি হও।
বন্ড চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল। মনে হল সন্ধ্যেটা ভালই কাটবে। দরজা দিয়ে বেরিয়ে তার মনে হল–এমন একটা কাজের ভার পেয়েছে যার মধ্যে বিপদের কোন রকম ঝুঁকি নেই। সে করিডোর পেরিয়ে লিফট-এর কাছে এল। অফিসারদের ক্যানটিনে তখন বিশেষ লোকজন ছিল না। বন্ড সেখানে একলা বসে কিছু ভাজা মাংস, অনেকটা পাঁচ মিশেলী স্যালাড, কিছুটা চীজ খেল, আর তার সঙ্গে আধবোতল সাদা বোর্দো মদ। দু-পেয়ালা কফি শেষ করে বিকেলে তিনটেয় ফিরল নিজের অফিস ঘরে। তার মনের আধখানা জুড়ে তখন M-এর সমস্যার কথা। NATO ফাইলের বাকি অংশটা পড়ে তার সেক্রেটারির কাছে সে বিদায় নিল। যাবার আগে তাকে জানাল সে সন্ধ্যেয় কোথায় থাকবে।
নিজের গাড়িটাকে বার করে বন্ড বাড়ি ফিরে এল। নিজের শোবার ঘরে ঢুকল। জামা কাপড় খুলে গুছিয়ে রাখল তারপর বাথরুমে ঢুকে গোসল সেরে নিল। আয়নার নিজের মুখটা দেখল, তার শীর্ণ ক্ষুধিত মুখটা শত্রুর সঙ্গে পাল্লা দেবার জন্য যেন কঠিন হয়ে উঠেছে। দশ মিনিট পরে বন্ড নিজের টেবিলে গিয়ে বসল। পরনে তার পুরু সিল্কের সাদা শার্ট, সার্জের গাঢ় নীল রঙের ট্রাউজার। পায়ে গাঢ় নীল রঙের মোজা আর ঝকঝকে পালিশ করা কালো মোক্যাসিন। জুতা। সামনে খোলা স্কার্নের তাসে ঠকানোর আশ্চর্য গাইড বইটা। পদ্ধতি নামে পরিচ্ছেদটার উপর চটপট সে চোখ বুলিয়ে নিল। তারপর প্র্যাকটিস করে চলল সেইসব বিচিত্র পদ্ধতিগুলো। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় টেবিলের তাসগুলো ছুঁড়ে ফেলে বই বন্ধ করল সে। শোবার ঘরে গিয়ে কালো চওড়া কেসে সিগারেট ভরে সেটা হিপ পকেটে গুজলো বন্ড। তারপর গলায় সিল্কের কালো টাই বেঁধে কোট পরে দেখে নিল তার নোটকেসের মধ্যে চেক-বইটা ঠিক আছে। কিনা। মুহূর্তের জন্য বেছে নিল সিল্কের সাদা দুটো রুমাল। তারপর সেগুলো খুলে কুঁকড়ে নিয়ে কোটরে দু-পাশের। পকেটে ভরলো। সন্ধ্যে তখন ঘনিয়ে এসেছে। তার মনে পড়ল প্রাইভেট তাস খেলার ক্লাব হিসেবে ব্লেস্ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। ১৭৮৮ সালে ঐতিহাসিক গিবনের এক চিঠিতে প্রথম ব্লেড-এর উল্লেখ দেখা যায়। তিনি লেখেন এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ল্যাম্প নামে এক জার্মান। প্রতিষ্ঠিত হবার শুরু থেকেই ব্রেড় -এর খ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ক্লাবের সমৃদ্ধি দিনকে দিন বাড়তে থাকে। বর্তমানে দ্র জুয়ার ক্লাব হিসেবে ব্লেড পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। লন্ডনে এটাই বর্তমানে সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ক্লাব। এখানকার মেম্বার হবার জন্য দুটি গুণ অবশ্যই থাকতে হবে।
প্রথমতঃ ভদ্রলোকের মত ব্যবহার করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ দেখাতে হবে হাতে নগদ এক লক্ষ পাউন্ড আছে। এই ক্লাবের মধ্যে প্রত্যেক মেম্বারকে বছরে পাঁচশ পাউন্ড হয় হারতে হবে নয় জিততে হবে। নইলে বছরে দিতে হবে আড়াইশ পাউন্ড ফাইন। এই ক্লাবের খাদ্য ও পানীয় লন্ডনের মধ্যে সবচেয়ে সেরা। তার জন্য কোন বিল পেশ করা হয় না।
যে কোন ক্লাবের সার্থকতা বা বিফলতা নির্ভর করে সেখানকার চাকর-বাকরের ওপর। এই ক্লাবের পেছন দিকে মেম্বারদের জন্য বারটা বেডরুম আছে। ওয়েট্রেসদের কাউকে সেরকম ঘরে কোন মেম্বার যদি রাতে নিয়ে যায়–তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। মেম্বারদের সেটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। ব্লে -এর প্রবেশ মূল্য একশ, এবং বাৎসরিক চাদা পঞ্চাশ পাউন্ড। তার পরিবর্তে মেম্বাররা সেখানে পায়ে ভিক্টোরিয়ান যুগের সব রকম বিলাস ব্যবস্থা আর সেই সঙ্গে দারুণ সুখ সুবিধের মধ্যে বছরে বিশ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত জেতবার বা হারবার সুযোগ।
এই সব কথা ভেবে বন্ডের মনে হল সন্ধ্যেটা তার ভালই কাটবে। জীবনে মাত্র কয়েকবার ব্লেড়স-এ সে খেলেছে। এই ব্রিজ খেলা ছাড়াও রয়েছে হিউগো ড্রাক্সের ব্যাপারটা। তাতে হয়তো সন্ধ্যের নাটকটা আরও জমবে।
কিংস্ রোড দিয়ে স্নোন স্কোয়ারে পৌঁছবার সময় সাবধানে ট্রাফিকের উপর নজর রাখতে রাখতে ভাবছিল সে আসন্ন সন্ধ্যের কথা। তখন ছ-টা বাজতে কয়েক মিনিট বাকি। আকাশটা ঝড়-বিদ্যুৎ-বজে থমথমে। হঠাৎ চারদিক