বন্ড দরজা খুলে নিজের সুন্দরী সেক্রেটারির মুখের দিকে তাকিয়ে সুপ্রভাত জানাল। তার সেক্রেটারির নাম লোয়েলিয়া পনুসেবি । মেয়েটি দীর্ঘাঙ্গী, যুদ্ধ আর গুপ্তচর দপ্তরে পাঁচ বছর চাকরির পর তার সৌন্দর্যের মধ্যে ফুটে উঠেছে কাঠিন্যের সামান্য ছোঁয়াচ। গুপ্তচর বিভাগের চাকরিটা অনেকটা দিনমজুরের। মহিলা কর্মচারি হলে কারুর সঙ্গেই চাকরির সম্পর্ক ছাড়া অন্য কোন সম্পর্ক পাতানো সম্ভব নয়। কিন্তু পুরুষের বেলা অন্য কথা। মাঝে মাঝে প্রেম করার তাদের একটা অজুহাত থাকে। কিন্তু মহিলা হলে গুপ্তচর দপ্তরের বাইরে কারুর সঙ্গে প্রেমের ব্যাপারে জড়িয়ে। পড়া মানেই দপ্তরের গোপনীয়তা বিপন্ন হবার সম্ভাবনা। মহিলাদের সামনে দুটি মাত্র পথ খোলা থাকে, হয় কাজে ইস্তফা দিয়ে স্বাভাবিক ঘর সংসার পাতা, নয় আজীবন কুমারী থেকে নিজের দেশ আর রাজাকে সেবা করা। পনসেবি জানে একটা চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময় এসে গেছে। নিজের সহজাত বুদ্ধি তাকে বলছে কাজে ইস্তফা দিতে কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই বেশি করে এই রহস্যময় জগতের চমকপ্রদ ঘটনা প্রবাহ এবং রোমান্স হেড কোয়ার্টার্সের অন্য মেয়েদের সঙ্গে তাকে জড়িয়ে ফেলেছে। বন্ড জানতে চাইল কোন খবর আছে কিনা। লোয়েলিয়া বলল, না। কিন্তু তোমার টেবিলে বহু কাগজপত্র জমে আছে। কোনটাই জরুরী নয়। পাউডার ভাইনে শুনেছি 008 ফিরে এসেছে। বার্লিনে বিশ্রাম করছে। খুব ভাল খবর, তাই না? বন্ড ভাবল বিল তাহলে শেষ পর্যন্ত কাজটা হাসিল করতে পেরেছে। খুব দুরূহ কাজে গিয়েছিল, ফিরেও এসেছে সেখান থেকে। বার্লিনে বিশ্রাম করার অর্থ তার অবস্থা বিশেষ ভাল নয়। এই বাড়িতে মাত্র একটা জায়গা থেকেই খবর চুঁইয়ে বেরোয়। সেটা হচ্ছে মেয়েদের গেস্টরুম। নিরাপত্তা বিভাগের কর্মচারিরা নিষ্ফল আক্রোশে সেই ঘরটার নাম দিয়েছে পাউডার ভাইন। সেখানকার খবরের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে।
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বন্ড তার ডেস্কের সামনে বসল। ট্রে-টা কাছে টানল। তার মধ্যে বাদামী রঙের নানা ফোল্ডার–ওপরে লাল তারা আঁকা–যার অর্থ ও অত্যন্ত গোপনীয়। কিন্তু 001-এর কি খবর? মাস দুয়েক আগে। সিঙ্গাপুরে সে উধাও হয়েছে। এর মধ্যে আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। 00 বিভাগের তিনজনের মধ্যে বন্ডই সবচেয়ে
পুরোনো। তার নম্বর 007। সবচেয়ে ওপরকার ফোল্ডারটার মধ্যে ছিল দক্ষিণ পোল্যান্ড আর উত্তর-পূর্ব জার্মানির বিশদ। মানচিত্র। সেটার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটা আঁকাবাকা লাল লাইন যেটা ওয়ারশ থেকে পৌঁছেছে বার্লিন পর্যন্ত। ফোল্ডারটার মধ্যে আরও ছিল টাইপ করা লম্বা একটা স্মারকলিপি। শিরোনামায় লেখা মেনলাইন ও পূর্ব থেকে পশ্চিমে পালাবার সুপ্রতিষ্ঠিত পথ। বন্ড একটা সিগারেট ধরিয়ে, গদি মোড়া চেয়ারে আরাম করে বসে পড়তে শুরু করল।
দিনটা শুরু হল …একেবারে ছককাটা, একঘেয়ে একটা দিন। বছরের মধ্যে মাত্র দু-তিনবার এমন কাজের ভার বন্ড পায়, যাতে তার বিশেষ ধরনের শক্তি সামর্থ্যের দরকার পড়ে। বছরের বাকি সময় তার ডিউটি হচ্ছে যে কোন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারির মত।
কোন ছুটি সে নেয় না কিন্তু দায়িত্ব সম্পন্ন প্রত্যেকটি কাজ শেষ করার পর তাকে দেওয়া হয় পনের দিনের ছুটি। তাছাড়া প্রয়োজন মত ছুটি পায় অসুস্থতার জন্য। বছরে তার রোজগার ১৫০০ পাউন্ড। কিংস রোডের কাছে তার একটা ছোট ছিমছাম ফ্ল্যাট আছে। তার ফ্ল্যাটের তত্ত্বাবধান করে মে নামে বয়স্কা এক স্কটিশ ভদ্রমহিলা। এ ছাড়া তার। আছে ১৯৩০ সালের মডেলের সাড়ে চার লিটারের সুপারচার্জড় একটা বেন্টলি গাড়ি। এই সব জিনিসের ওপর বন্ড খরচ করে তার সব টাকা। তার একমাত্র উচ্চাকাঙ্ক্ষা-নিজের ব্যাংক একাউন্টে যথাসম্ভব কম টাকা রেখে মরা। নিরুৎসাহ অবস্থায় তার মনে হয় পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সের আগেই তার মৃত্যু হবে।
আট বছর পরে 00 বিভাগ থেকে সরিয়ে হেড কোয়ার্টার্সে তাকে অফিসের কাজ দেওয়া হবে। এই ক বছরের মধ্যে তার ওপর ভার পড়বে অন্তত আটটা খুব কঠিন কাজের। সংখ্যায় বেশি হওয়াও বিচিত্র নয়।
মেনলাইনের তথ্যগুলো বন্ডের মুখস্থ হবার পর দেখা গেল তার কাঁচের বড় এ্যাশ-ট্রে-তে পাঁচটা সিগারেটের টুকরো জমেছে। সব শেষে 00-র পাশে 7 লিখে সই করে ফাইলটা বন্ড ছুঁড়ে দিল OUT লেখা ট্রের-মধ্যে। তখন বারটা বাজে। গাদার মধ্যে পরের ফোল্ডারটা নিয়ে বন্ড খুলল। সেটা NATO-র রেডিও ইনটেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের। লেখা শুধুমাত্র তথ্যের জন্য। শিরোনামে রয়েছে, রেডিও সিগনেচার্স । ফাইলের স্তূপটা কাছে টেনে প্রত্যেকটার প্রথম। পাতায় বন্ড চোখ বুলিয়ে গেল। এই ফাইলগুলো জরুরী নয়। এগুলো নিয়ে তার কিংবা তার অন্য দুজন সহকর্মীর করার কিছু নেই। বন্ডের শুধু দরকার সেই সব ফাইলের নম্বর টুকে রাখা যেগুলো অন্য দুজনের পরের বার হেড। কোয়ার্টার্সের কাজ করতে এলে, পড়ে দেখা উচিত। 00 সেকশনের ফাইলগুলো পড়া হবার পর সেগুলো চলে যাবে। তাদের শেষ গন্তব্য স্থানে, তথ্যবিভাগে।
NATO-র কাগজপত্রগুলো আবার দেখতে শুরু করল বন্ড। সে পড়ে চলল, খুব ছোট ছোট আচরণের মধ্যেও মানুষের ব্যক্তিত্ব নির্ভুলভাবে ফুটে ওঠে। এটা হাতে কলমে দেখানো হয়েছে প্রত্যেক রেডিও অপারেটরের হাত -এর অনপনেয় বৈশিষ্ট্যের মধ্যে। এই হাত অর্থাৎ সংবাদ প্রেরণ করার ধরন প্রত্যেকের আলাদা আলাদা। সংবাদ গ্রহণ করতে যারা অভ্যস্ত তারা সেটা চিনতে পারে। খুব সূক্ষ্ম যন্ত্র। এই যন্ত্রটাকে অপারেটরদের কব্জিতে আটকে দেওয়া যায়। উদ্দেশ্য–হাতের পেশিগুলোকে যে সব স্নায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করছে সেগুলোকে খুব সূক্ষ্মভাবে বাধা দেওয়া।