মাথিস ও দুজন লন্ড্রির লোক এগিয়ে এসে সেই বীভৎস মুখটা দেখে। মাথিস বলল, ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে ভদ্রমহিলার অস্বস্থি হচ্ছে। তোমরা দুজনে বেতের বাস্কেটটা নিয়ে এসো গুলে উনি আরাম পাবেন।
লোক দুজন দরজার কাছে গিয়ে বাস্কেটটা আনতে লাগল।
ক্লেব বন্ডের দিকে তাকিয়ে এক পা থেকে অন্য পা বদল করল আর বন্ড ক্লেবের একটা চকচকে বোতাম আঁটা বুটের সামনেটা চাপ দিল অন্য বুটের ওপরে। আধ ইঞ্চি লম্বা ছুরির একটা ফলাও বেরিয়ে এল। বোনার কাঁটার মত এই ইস্পাতের রঙও ধূলোটে নীল।
বাস্কেট আনার পর মাথিস তাদের বলল, একে নিয়ে যাও। তারপর ক্লেবকে অভিবাদন করে বলল, আমি অত্যন্ত সম্মানিত হলাম।
বন্ড বলল, আবার দেখা হবে, রোজা।
যে বুট থেকে ইস্পাতের ছোট জিভ বেরিয়েছিল সেটাও এগিয়ে গেল।
ডান পায়ের ডিমে বন্ড অনুভব করল তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা। চমকে উঠে বন্ড পিছিয়ে এল। সেই দু জন লোক রোজা ক্লেবের দুটো হাত ধরল।
মাথিস হেসে বলল, বেচারা জেমস্ দেখা যাচ্ছে শেষ পর্যন্ত SMERSH-ই জিতল।
চামড়ার মধ্যে ইস্পাতের জিভটা তখন ঢুকে গেছে। যাকে বাঙ্কেটে ভরা হল তাকে দেখাচ্ছে নিরীহ একটা বুড়ি। ঢাকনাটা মজবুত করে বন্ধ করতে দেখল মাথিস বন্ডের দিকে ফিরে বলল, দোস্ত, একদিনের পক্ষে যথেষ্ট কাজ করেছ। এমব্যাসিতে গিয়ে বিশ্রাম কর। আজ সন্ধ্যেয় আমরা দুজন একসঙ্গে ডিনার খাব। আর সেই সঙ্গে থাকবে সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে।
বন্ডের দেহ ক্রমশ অসাড় হয়ে আসছিল। ডান ভ্রুর ওপরকার চুলটা সরাবার জন্য হাত তুলল কিন্তু অসাড়। হাতটা ভারি হয়ে ঝুলে পড়ল।
নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতে লাগল বন্ডের। চোয়ালটা খামচে চোখ অর্ধেকটা বন্ধ করল সে। চোখের পল্লবের মধ্যে দিয়ে বাস্কেটটাকে দরজার কাছে নিয়ে যেতে দেখল। অতিকষ্টে চোখ খুলে সে মাথিসকে দেখতে চেষ্টা করল। জড়ানো গলায় বলল, আমার কোন মেয়ের দরকার নেই, রেনে।
বাতাসের জন্য খাবি খেতে শুরু করল বন্ড। সে অনুভব করল তার হাঁটু দুমড়ে যাচ্ছে।
সে বলল, কিংবা ভেবেছিল বলছে, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মহিলার সঙ্গেই ইতিমধ্যে আমার সাক্ষাৎ হয়ে গেছে…
গোড়ালির ওপর ভর রেখে তার শরীরটা খানিক দুলল, তারপর সামনে ঝুঁকে দড়াম করে আছড়ে পড়ল গাঢ় লাল মেঝের ওপর।
মুনরেকার (পার্ট ১)
মুনরেকার
গুপ্ত ফাইলের কাজ
একই সাথে আটত্রিশ ক্যালিবারের রিভলভার দুটো গর্জে উঠল। মাটির নিচে ঘরের দেওয়ালগুলো কেঁপে কেঁপে উঠল। তারপর স্তব্ধতা। জেমস বন্ডের নিজের ওপর বিশ্বাস ফিরে এসেছে। মনে পড়ছে তার আশ্চর্য ক্ষিপ্রতায় গুলি ছোঁড়ার কথা। কোল্ট ডিটেকটিভ স্পেশাল-এর চেয়ার খুলে সে অপেক্ষা করতে লাগল।
ইনস্ট্রাক্টর এগিয়ে এল বন্ডের কাছে। তার এক হাতে একটা লোকের শরীরের ওপরের আধখানা অংশের শিট ছবি। অন্য হাতে পোস্টকার্ড সাইজের পোলারয়েড ফিল্ম। সেগুলো সে বন্ডের হাতে দিল। ম্যাগনিফাইং গ্লাসটা চোখের সামনে তুলে বন্ড ফটোটার ওপর ঝুঁকে পড়ল। দেখল সেই ছবিতে তার ডান হাত ঘিরে সাদা সাদা ঝলসানো দাগ। ফ্ল্যাশ-লাইট দিয়ে ঠিক গুলি ছোঁড়ার মুহূর্তে ছবিটা তোলা। সে আরো দেখল তার হৃৎপিণ্ডের ঠিক মাঝখানে একটা আলোর বিন্দু। খুশি হয়ে ইনস্ট্রাক্টার বলল, পেটের বাঁ দিকে ঢুকে পেছন দিয়ে গুলিটা বেরিয়ে গেছে। একটা পেনসিল বের করে টার্গেটের ওপর কি-সব সে লিখল। তারপর বলল, কুড়ি রাউন্ড। আমাকে তাহলে দেবেন ছিয়াত্তর।
বন্ড হেসে খুচরোগুলো গুণে গুণে বের করল। বলল, সোমবার বাজির টাকা ডবল করে ধরবেন। ইন্সট্রাক্টার বলল, আমার কোন আপত্তি নেই। আপনি যদি ডিউ আর ট্রফিতে যোগ দিতে চান তবে ঐ বত্রিশ নম্বরের রিভলভারটা ছেড়ে তার বদলে নিতে হবে রেমিংটন। নতুন একটা বাইশ নম্বরের কাটিজ সবে বেরিয়েছে। জেতার জন্য তাই দিয়ে ৮,০০০-এর মধ্যে প্রায় ৭,৯০০ বার টার্গেটে মারতে পারবেন।
বন্ড বলল, গুলি ছোঁড়ায় আমি আপনাকে হারাতে চাই। হাতের তালুতে তাজা বুলেটগুলো বার করে সে টেবিলে রাখল। সোমবার ঠিক এই সময় আবার দেখা হবে, ঠিক এই সময়।
ইনস্ট্রাক্টর বন্ডের গুলি ছোঁড়া দেখে খুব খুশি। কিন্তু গুপ্তচর বাহিনীতে বন্ডই যে সেরা নিশানাদার–সে কথা তার বলা বারণ। কথাটা শুধু জানার কথা M-এর, আর বডের বড়কর্তার।
বন্ড লিফটে গিয়ে উঠল। লিস্টটা তাকে নিয়ে যাবে রিজেন্ট স্ট্রীটের সেই ছাইরঙা বাড়িটার নবম তলায়–সেটা তাদের গুপ্তচর বাহিনীর হেড কোয়ার্টার্স।
গুলি ছোঁড়ার ফলাফল দেখে বন্ড খুশি। সে ভাবতে লাগল কি করে আরও ঝটপট গুলি চালিয়ে মেশিনটাকে হারাতে পারবে। মেশিনটা মাত্র তিন সেকেন্ডের জন্য টারগেটকে তুলে ধরে। তারপর সেখান থেকে তার দিকে মেশিনটা ছেড়ে ৩৮ নম্বরের ফাঁকা গুলি। সেই সঙ্গে তার দিকে ছুটে আসে আলোর একটা শিখা। সঙ্গে সঙ্গে ফটো তোলা হয়ে যায়। ফটোতে দেখায় খড়ি দিয়ে আঁকা গোল বৃত্তের মধ্যে বন্দুক হাতে সে দাঁড়িয়ে গুলি ছুঁড়ছে।
লিফটের দরজা খুলে গেল। বন্ডের সর্বাঙ্গ দিয়ে কর্ডাইটের গন্ধ লিফটম্যানের নাকে গেল। বন্ড ভাবল, আলোটা যদি আর একটু ভাল হত। M কিন্তু বরাবরই জোর দিয়ে বলেন, মোটামুটি খারাপ অবস্থার মধ্যে গুলি ছোঁড়া দরকার। ঝাপসা আলো আর সঙ্গে সঙ্গে টার্গেট থেকে নিজের দিকে গুলি ছুটে আসা বাস্তবে মোটামুটি এরকমটাই ঘটতে পারে। লিফট থামল। মিনিস্ট্রি-অফ-ওয়ার্ক -এর সবুজ করিডোরে বেরিয়ে এল বন্ড। গুলি ছোঁড়া প্র্যাকটিসের কথা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে হেড কোয়ার্টার্সের দৈনন্দিন রুটিন কাজে মন দেবার জন্য প্রস্তুত হল বন্ড। ডান দিকের শেষ দরজাটার দিকে সে এগিয়ে গেল। দরজায় টোকা দিয়ে বন্ড অপেক্ষা করতে লাগল। সকাল এগারটা। দু-দিনের জমা ডকেট আর ফাইল গুলো পড়তে হবে। আর বিদেশে শনিবারেই সাধারণত বহু ঘটনা ঘটে। খালি ফ্ল্যাটে চুরি হয়, নানা অস্বস্তিকর বেকায়দা অবস্থায় স্ত্রী-পুরুষের লুকিয়ে ফটো তোলা হয়। শনিবার যে সব মোটর দুর্ঘটনায় পথে লোকজন নিহত হয়, সাধারণত সেই দুর্ঘটনাগুলো তাৎপর্যপূর্ণ হয় না। এটাই যা বাঁচোয়া। বিবরণ গুলোর ওপর মোটামুটি একবার চোখ বুলিয়ে নিলেই চলে। ওয়াশিংটন, ইস্তামবুল আর টোকিও থেকে চিঠিপত্রের সাপ্তাহিক ব্যাগগুলো ইতিমধ্যে পৌঁছে বাছাই হয়ে যাবার কথা। সেগুলোর মধ্যে তার জন্য কিছু মাল মশলা থাকতে পারে।