মশিয়ে, যে ক্যাপটেনের কথা বলেছেন আমি তার সঙ্গে পরিচিত নই। আপনার সঙ্গেও পরিচিত নই। দয়া করে বসে কি কি চান বলুন।
তার মধ্যে কোন খুঁত কেউ ধরতে পারবে না। বন্ড এগিয়ে চেয়ারটায় বসল। বৃদ্ধার কাছ থেকে সে এখন ছ-ফুট দূরে।
ডেস্কের ওপর একটা টেলিফোন, রিসিভারটা হকে ঝুলছে আর হাতির দাঁতের বোম দেওয়া একটা কলিং বেল।
বৃদ্ধার মুখের দিকে তাকিয়ে বন্ড খুঁটিয়ে দেখল। সাদা চুল আর পাউডারের পুরু প্রলেপের নিচেকার মুখটা কুৎসিত। চোখ দুটো প্রায় হলদে। ফ্যাকাশে ঠোঁট দুটো ভিজে ও ফোলা আর তার ওপর নিকোটিনের দাগ ধরা পাতলা গোফ। নিকোটিন কিন্তু বৃদ্ধার সিগারেট এ্যাশট্রে কোথায়?
আবার শক্ত করে বন্ড তার পিস্তলটা ধরল। বোনার ব্যাগ, উল ও স্টিলের কাঁটাগুলো কি রকম যেন খাপছাড়া। সেগুলোর ডগা ধূলোটে নীল, যেন আগুনের মধ্যে রাখা হয়েছিল। বোনার কাঁটা কি ও রকম দেখতে হয়?
বলুন মশিয়ে? তার স্বরটা সামান্য ধারাল হয়ে উঠেছে।
বন্ড মৃদু হাসল। বৃদ্ধার যে কোন অঙ্গসঞ্চালন, যে কোন ছলা-কলার জন্য সে নিজেকে তৈরি করল। তারপর জুয়া খেলার ঝুঁকি নিয়ে বলল, এই অভিনয় করে কোন লাভ নেই। তুমি রোজা ক্লেব। SMERSH-এর Otdyel II-এর তুমি প্রধান। তুমি খুনী, অসহ্য যন্ত্রণা দিয়ে তুমি লোকের কাছে স্বীকারোক্তি আদায় কর। আমাকে আর রোমানোভাকে তুমি খুন করতে চেয়েছিলে। শেষ পর্যন্ত তোমার সঙ্গে দেখা হওয়াতে খুব খুশি হয়েছি।
বৃদ্ধার কর্কশ স্বর সহিষ্ণু ও ভদ্র শোনাল। কলিংবেলের দিকে হাত বাড়িয়ে, মশিয়ে, নিশ্চয়ই আপনি বদ্ধ পাগল। তাই হোটেলের চাকরকে ডাকছি। আপনাকে সে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেবে।
বন্ড কলিংবেলের সঙ্গে কোন তার ঘরের দেয়াল বা কার্পেটে যায়নি লক্ষ্য করল। হয়তো হঠাৎ তার মনে পড়েছিল দরজায় প্রত্যাশিত টোকা শুনে সেই ইংরেজিতে বলা কথাগুলো, কাম ইন। বৃদ্ধার আঙ্গুল হাতির দাঁতের বোম ছোঁয়ার আগেই চেয়ার থেকে এক পাশে সে ঝাঁপ দিল।
মেঝেয় পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার চেয়ারের পেছনকার অসংখ্য টুকরো বন্ডের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। চেয়ারটাও সশব্দে আছড়ে পড়ল মেঝের ওপর।
চট করে পাশ ফিরে বউ পিস্তলটা বার করল। টেলিফোনটার মুখ থেকে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। পর মুহূর্তেই রোজা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তার হাতে বোনার কাঁটা।
বন্ডের পায়ে কাঁটাগুলো বেঁধাবার চেষ্টা করল। এক লাথিতে বন্ড তাকে ছিটকে ফেলল। এক হাটুতে ভর দিয়ে উঠতে গিয়ে বুঝল কাঁটাগুলোর ধূলোটে নীল ডগার অর্থ বিষ। সম্ভবত জার্মান নার্ভের বিষ। এমন কি পোশাকের মধ্যে দিয়ে কোন রকমে তার দেহে একটা আঁচড় কাটলেই ক্লেবের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হত।
বন্ড দাঁড়িয়ে উঠতে না উঠতেই ক্লেব আবার ছুটে এল। প্রাণপণে পিত্তটা টানতে লাগল বন্ড কিন্তু সাইলেন্সটার আটকে গেছে। একটা আলোর ঝলক। চট করে মাথা নিচু করে বন্ড সরে দাঁড়াল। ক্লেব আবার ঝাঁপিয়ে পড়ল। তার পর চুলটা সরে দাঁড়াল। ঠোঁট ফাঁক হয়ে বেরিয়ে পড়েছে দাঁতগুলো।
খালি হাত কাঁটাটার দিকে ঘুষি চালাতে ভরসা হল না বন্ডের। হাতে ভর দিয়ে সে টেবিলটার ওপাশে পৌঁছাল।
অবশিষ্ট কাঁটাটা উঁচিয়ে ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে রুশী ভাষায় বিড়বিড় করতে করতে টেবিলটা ঘুরে সে বন্ডের দিকে ছুটে এল। বন্ডের পায়ে ঠেকল একটা চেয়ার। সে পিস্তল থেকে হাত সরিয়ে চেয়ারটা তুলে নিল। পায়াগুলো সামনে। খাড়া করে চেয়ারের পেছন ধরে ডেঙ্ক ঘুরে ক্লেবের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু ততক্ষণে ক্লেব সেই ভুয়া টেলিফোনের কাছে। ঝট করে সেটা তুলে তাক করে বোতামটার দিকে হাত বাড়াতেই বন্ড সজোরে চেয়ারটা আছাড়ালো। অনেকগুলো বুলেট ছাদে গিয়ে পড়ল।
চেয়ারটা নিয়ে আবার এগিয়ে গেল বন্ড। চেয়ারের পায়াগুলোর মধ্যে ক্লেবের কোমর থেকে কাঁধ পর্যন্ত আটকে গেল। কিন্তু বৃদ্ধার গায়ে কি অসম্ভব জোর–কেবকে সে ঠেলে নিয়ে গেল দেয়াল পর্যন্ত। দেয়ালে পিঠে রেখে বন্ডের মুখে সে থুথু ছিটিয়ে চলল আর বোনার কাঁটাগুলো বন্তের দিকে রইল উঁচিয়ে।
চেয়ারটা সামনে ধরে আচমকা বউ তার কব্জিতে লাথি মারল। কাঁটাটা ছিটকে বন্ডের পেছনে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে বন্ড চেয়ারের চারটে পায়ার মধ্যে কেবকে আটকে দেয়ালে ঠেসে ধরল। হিসহিস করে রুশী ভাষায় কি সব বলে আবার থুথু ছিটাতে লাগল। বন্ড মুখ মুছে তাকাল ক্লেবের নানা রঙের চিত্র কুৎসিত মুখের দিকে।
তারপর বলল, তোমার খেলা শেষ ক্লেব। এক মিনিটের মধ্যে আমার বন্ধুরা এখানে পৌঁছবেন। ঘণ্টা খানেকের। মধ্যে তুমি পৌঁছবে লন্ডনে। এখন থেকে তুমি হয়ে থাকবে একটা গোপন ফাইলের শুধুমাত্র একটা নম্বর। তোমাকে নিয়ে আমাদের কাজ শেষ হবার পর তোমাকে পাগলা গারদে পাঠানো হবে।
কয়েক ফুট দূরে ক্লেবের মুখটা বদলাতে লাগল। কিন্তু সেটা ভয় নয়। ক্লেবের চোখ দুটো স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বন্ডের দিকে যেন সে হার মানেনি।
আমি পাগলা গারদে থাকব আর তুমি তখন কোথায় থাকবে, মিঃ বন্ড
কোথাও না কোথাও বেঁচে থাকব।
আমার সেটা মনে হয় না, আংলিস্কি স্পিয়ন।
ক্লিক করে দরজাটা খুলে গেল আর হো হো করে হাসির শব্দ–যেটা বন্ডের সুপরিচিত।
বন্ড বলল, মা থিস, এখন থেকে সব ভার তোমার ওপর। এসো, পরিচয় করিয়ে দিই। এর নাম রোজা। SMERSH-এর ইনি একজন হোমরা চোমরা ব্যক্তি।