.
ডাইনী
রু ক্যামবল দিয়ে রিৎজ্ব হোটেলের প্রবেশ পথে ট্যাক্সিটা থামল।
ন্যাশের ঘড়ির দিকে বন্ড তাকাল। এগারটা পঁয়তাল্লিশ। সে জানে সাক্ষাৎ করার নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক মিনিট আগে বা পরে যদি কোন রুশী গুপ্তচর পৌঁছয় তাহলে সাক্ষাৎ বাতিল। ট্যাক্সির ভাড়া চুকিয়ে সে চলল বাঁ দিকের দরজা দিয়ে। যেটা গেছে রিজু বারে।
বন্ড একটা ডবল ভোদৃকা মাটিনির অর্ডার দিল। অর্ধেকটা খাবার পর তার মনে ভারি খুশি হল। গত চারদিন এবং গত রাত্রের ঘটনাটা যেন ক্যালেন্ডার থেকে গেল মুছে। এখন সে চলেছে নিজের ব্যক্তিগত এ্যাডভেঞ্চারে। তার সব কর্তব্য শেষ হয়েছে। এমব্যাসির একটা শোবার ঘরে তাতিয়ানা ঘুমুচ্ছে। বিস্ফোরক সমেত স্পেকটরটা ফরাসি গুপ্তচর বিভাগের বম্ব ডিসপোজাল-স্কোয়াড নিয়ে গেছে। তাদের বর্তমান বড়কর্তা রেনে মাথিস তার পুরনো বন্ধু। তার সঙ্গে বন্ড কথা বলল। ফলে রিজু-এর ক্যামবল প্রবেশ পথের দ্বাররক্ষীকে আদেশ দেওয়া হয়েছিল যেন একটা পাস–কি (যে চাবি দিয়ে সব দরজা খোলা যায়) থাকে এবং কোন রকম প্রশ্ন না করা হয়।
বন্ডের সঙ্গে আবার একটা রহস্যময় ব্যাপারে জড়িত হয়ে পড়ে রেনে বেজায় খুশি হয়। বলল, আমাকে বিশ্বাস করতে পার, বন্ড। তোমার রহস্যময় অনুরোধ আমি পালন করব। গল্পটা পরে বোল। বারটা-পঁয়তাল্লিশে বড় একটা লন্ড্রি বাসকেট নিয়ে লন্ড্রির দু-জন লোক ২০৪ নম্বর ঘরে যাবে। গাড়ির ড্রাইভার সেজে তাদের সঙ্গে আমি থাকব। লন্ড্রির বাস্কেটটা ভরে সেটা ওর্লিতে নিয়ে গিয়ে একটা ব্রিটিশ Canberra প্লেনের জন্য আমরা অপেক্ষা করব। দুটোয় প্লেনটা পৌঁছলে বাস্কেটটা আমরা দিয়ে দেব। কিছু নোংরা কাপড়-চোপড় কাঁচবার জন্য ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছিল, সেগুলো আবার ইংল্যান্ডে ফেরৎ পাঠানো হল–তাই তো?
M-এর সঙ্গে স্টেশন F-এর বড়কর্তা টেলিফোনে কথা বলেছিলেন। বন্ডের একটা সংক্ষিপ্ত লিখিত রিপোর্টও তিনি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন বন্ড একটা Canberra চেয়েছে। কেন, তিনি জানেন না। সেই মেয়েটি আর স্পেক্টার মেশিনটা দেবার জন্য বন্ড এসেছিল। প্রচুর ব্রেকফাস্ট খেয়ে এম্ব্যাসি থেকে সে বেরিয়ে গেছে। বলেছে, লাঞ্চের পরে ফিরবে।
বন্ড আবার ঘড়ির দিকে তাকাল। মাটিনিটা শেষ করল। দাম চুকিয়ে বার থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে সে এল : দ্বাররক্ষীর ঘরে।
তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে দ্বাররক্ষী একটা চাবি দিল। লিফটে করে বন্ড চারতলায় এল।
লিফট থেকে বেরিয়ে ঘরের নম্বরগুলো দেখতে দেখতে করিডোর দিয়ে নিঃশব্দে বন্ড হাঁটতে লাগল।
২০৪। কোটের মধ্যে ডান হাত ঢুকিয়ে বন্ড তার বেরেটার হাতলটা স্পর্শ করল। ট্রাউজারের বেল্টের মধ্যে সেটা গোঁজা ছিল। সে অনুভব করল তার পেটের ওপর ধাতুর সাইলোরটা গরম হয়ে উঠেছে।
বা হাত দিয়ে দরজায় একবার সে টোকা দিল।
কাম ইন।
কাঁপা গলার স্বর। স্বরটা বৃদ্ধার।
দরজার হাতলে বন্ড চাপ দিল। সেটা ভোলাই ছিল। নিজের কোটের পকেটে পাস্-কি-টা সে রাখল। দরজাটা খুলে ভিতরে এসে আবার সেটা বন্ধ করে দিল।
সুন্দর সাজা-গোছান একটা বসার ঘর। দেওয়ালটা সাদা। জানলায় পর্দা আর চেয়ার ঢাকায় ছোেট-ঘোট লাল গোলাপ আঁকা। কারপেটটা লাল।
লেখার ডেস্কের পাশের নিচু একটা আরাম কেদারায় বসে ছোটখাট্ট চেহারা এক বৃদ্ধা কিছু বুনছিলেন। তাঁর সর্বাঙ্গে রোদ পড়েছে।
স্টিলের বোনার কাঁটাগুলো টুং-টাং শব্দ করে চলল। ফিকে নীল রঙের বাইফোকাল চশমার কাঁচের পেছন থেকে দুটি চোখ দ্ৰ কৌতূহলী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল।
Oui, Monsier? (হ্যালো মিস্টার)। স্বরটা গম্ভীর আর কর্কশ। তাঁর ফোলা-ফোলা মুখে পাউডারের পুরু প্রলেপ। চুলগুলো সাদা। তাঁর মধ্যে একটা মার্জিত কৌতূহল ছাড়া আর কিছু নেই।
কোটের মধ্যে পিস্তলের হাতলটা বন্ড শক্ত করে চেপে ধরল। ঘরের চারদিকে চটপট চোখ বুলিয়ে আবার সে তাকাল বৃদ্ধার দিকে।
সে কি ভুল করেছে। এটা কি ভুল ঘর? ক্ষমা চেয়ে সে কি বেরিয়ে যাবে? এই মহিলা কি SMERSH-এর কর্মচারি হতে পারেন সে-ধরনের সম্ভ্রান্ত ধনী বিধবা মহিলারা রিজে একলা বসে বুনে সময় কাটান এই বৃদ্ধাকে দেখতে ঠিক তাদেরই মত। ইনি সেই ধরনের মহিলা একতলায় রেস্তরাঁর এক কোণে যাদের টেবিল থেকে রিজার্ভ করা থাকে প্রিয় ওয়েটার, যারা লাঞ্চের পর সামান্য ঘুমোন তারপর চমৎকার কালো মোটরে চড়ে রু দ্য বেরিয়ে টি রুমে যান অন্য ধনী বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা করতে। এর পরনে রয়েছে সাবেকি ফ্যাশনের কালো পোশাক, যেটার গলা আর কব্জিতে সামান্য লেস লাগানো। বুকের ওপর ঝুলছে সোনার সরু চেনে আটকানো ভাঁজ-করা চশমা, ছোট্ট কালো বোম লাগানো বুট। ইনি ক্লেব হতেই পারেন না। নিশ্চয়ই ঘরের নম্বরটা বন্ড ভুল শুনেছিল। সে ঘেমে উঠল। কিন্তু এখন তাকে শেষ পর্যন্ত দেখতেই হবে।
আমার নাম বন্ড, জেমস্ বন্ড।
মশিয়ে আমার নাম কটে মেট্রেস্টেন। আপনার জন্য কি করতে পারি? ভদ্রমহিলার ফরাসি উচ্চারণ সামান্য জড়ানো। হয়ত ইনি জার্মান-ই।
ক্যাপটেন ন্যাশের একটা এ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। আজ তিনি আসতে পারবেন না। তার বদলে আমি এসেছি।
ফিকে নীল চশমার পেছনে চোখদুটো সামান্য কুঁচকালো।