ও ধরনের ব্যাপারে আমার কোন উৎসাহ নেই। কিন্তু ওরা তোমাদের দুজনের খুব ভাল ভাল ছবি তুলে রেখেছে। ন্যাশ তার কোটের পকেটে টোকা দিল। পুরো একটা ১৬ মিলিমিটার রিল। রিলটা তাতিয়ানার ব্যাগে যাবে। খবরের কাগজে ছবিগুলো খুব ভাল দেখাবে। অবশ্য সবচেয়ে রসালো অংশগুলো কেটে বাদ দিতে হবে।
হোটেলে ঘর বদল। হানিমুন সুইট। বিছানার পেছনকার বড় আয়নাটা। ন্যাশের গল্পের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। বন্ডের হাত দুটো ঘেমে গেল। বন্ড ট্রাউজারে মুছল।
নোড়ো না, ওল্ডম্যান। আর একটু হলেই গুলি খেতে। তোমাকে নড়তে বারণ করেছি, মনে নেই?
কোলে তার বইটার ওপর বন্ড হাতদুটো রাখল। তোমার গল্পটা বলে যাও। মেয়েটি কি জানতো তার ছবি তোলা হচ্ছে সে কি জানত SMERSH এর সঙ্গে জড়িত।
ন্যাশ বলল, ছবিগুলোর কথা জানত না। রোজা তাকে বিশ্বাস করেনি, কারণ মেয়েটি ভারি আবেগ প্রবণ। আমরা সবাই আলাদা আলাদা কাজ করি কিন্তু, আজকের আগে মেয়েটিকে আমি কখনো দেখিনি। মেয়েটি অবশ্যই জানত SMERSH-এর হয়ে সে কাজ করছে। তাকে বলা হয়েছিল লন্ডনে গিয়ে কিছু গোয়েন্দাগিরি করতে।
বন্ড ভাবল, মেয়েটা কি বোকা, সে কেন তাকে বলেনি সে SMERSH-এর সঙ্গে জড়িত। হয়ত সেই নামটা উচ্চারণ করতেই সে ভয় পেত। সে বলেছে লন্ডনে পৌঁছে সব কথা তাকে বলবে, সে যেন তাকে বিশ্বাস করে। ব্যাপারটা বিন্দুমাত্র আভাস পেলে। করিমের জীবনটা রক্ষা পেত। এখন তাতিয়ানা আর তার কি হবে?
তারপর তোমার দোস্ত সেই তুকীটাকে খতম করা দরকার হয়। আমার ধারণা গতকাল বিকেলে তার সাঙ্গ পাঙ্গরাই ইস্তাম্বুলে আমাদের সেন্টারটা উড়িয়ে দিয়েছে। তাতে খানিকটা উদ্বেগের সৃষ্টি হবে।
খুব খারাপ।
সেটা নিয়ে আমার কোন দুর্ভাবনা নেই, ওল্ডম্যান। আমার কাজটা সহজ। মিনিট কুড়ি পরে আমরা– সিমপ্লন টানেলে ঢুকব।ওরা চায় সেখানে আমি কাজটা হাসিল করি। তাতে কাগজওয়ালাদের কাছে খবরটা আরো নাটকীয় হবে। টানেলে ঢোকবার সময় তোমার হার্টের মধ্যে একটা বুলেট। টানেলের শব্দে তোমার মৃত্যু-ঘর্ঘর চাপা পড়বে। তার পর তোমার পিস্তল দিয়ে মেয়েটার ঘাড়ে একটা গুলি, তারপর জানালা দিয়ে তাকে ফেলে দেব। তোমার পিস্তল দিয়ে তোমাকে আর-একটা গুলি। তোমার আঙুলগুলো ধরে থাকবে তোমার পিস্তলটা। তোমার শার্টে থাকবে প্রচুর বারুদ। আত্মহত্যা। প্রথমে তাই বলেই লোকের ধারণা হবে। কিন্তু তোমার হার্টে পাওয়া যাবে দুটো বুলেট। রহস্যটা আরো জমে উঠবে। আবার খোঁজা হবে সিমপ্লন টানেল। মেয়েটার ব্যাগে পাবে ফিল্মটা, তোমার পকেটে পাবে দীর্ঘ একটা প্রেমপত্র–মেয়েটা তোমাকে ভয় দেখিয়েই লিখেছে। লিখেছিল SMERSH। চিঠিতে লেখা থাকবে মেয়েটাকে বিয়ে না করলে সে দিয়ে দেবে ফিল্মটা খবরের কাগজওয়ালাদের। লেখা থাকবে, স্পেক্টর মেশিনটা চুরি করলে তুমি তাকে বিয়ে করবে। আসলে ওল্ডম্যান, স্পেক্টরটা একটা বুবি ট্র্যাপ যা ঘরে প্রবেশকারীকে দরজার কাছেই আছাড় খাইয়ে মজা দেখবার জন্য ফাঁদ পাতা হয়। সে চিঠিতে লেখা থাকবে মেয়েটা তোমাকে দুটো জিনিস দিতে পারে। মেশিন আর তার দেহটা। ওল্ডম্যান। এই গল্পটার মধ্যে সবকিছু আছে। ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস। সিমপ্লন টানেলে সুন্দরী রুশী স্পাই খুন। কুৎসিত ছবি। গুপ্ত সাইফার মেশিন। সেক্স, স্পাই, লাকসারী ট্রেন, মিঃ এবং মিসেস সমারসেট…। ওল্ডম্যান, গল্পটা মাসের পর মাস চলবে। খোলভ কেসের কথা লোকে ভুলে যাবে। আর বিখ্যাত ব্রিটিশ গোয়েন্দা দপ্তরের কি দুর্নামটাই না ছড়িয়ে পড়বে। তাদের সবচেয়ে ভাল বিখ্যাত এজেন্ট জেমস বন্ড–কি কেলেঙ্কারিটাই না করল। তারপর সাইফার মেশিনটার ফেটে যাওয়া। তোমার কর্তা সম্বন্ধে কি ভাববে? জনসাধারণ কি ভাববে? আর তোমার সরকার, আমেরিকানরা? ওল্ডম্যান, এটা হবে এই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ গল্প।
বন্ড ভাবল সত্যিই। ফরাসি কাগজ এটা নিয়ে এমন হৈচৈ করবে যে, তাদের থামানোই হবে দায়। পৃথিবীতে এমন কোন প্রেস নেই যে তাদের এই ঘটনা ছাপবে না। আর ঐ স্পেক্টরটা। M-এর কর্মচারিরা কিংবা Deuxieme কি অনুমান করতে পারবে যে এটা একটা ফাঁদ পাশ্চাত্যের কতজন সেরা সেরা Cryptographer-এর (সংকেতলিপি সম্বন্ধে দক্ষ লোক) অপঘাতে মৃত্যু ঘটবে? হে সৃষ্টিকর্তা, এই সংকট থেকে তাকে বেরিয়ে আসতে হবেই। কিন্তু কি উপায়ে
ন্যাশের war and peace-এর ওপর দিকটা তার দিকে হাঁ করে রয়েছে। বন্ড ভাবল টানেলের মধ্যে ট্রেনটা ঢোকাবার সময় একটা গর্জন শোনা যাবে। সঙ্গে সঙ্গে ক্লিক করে একটা চাপা শব্দ তারপর বুলেট। বন্ড তাকাল বেগুনী রঙের। অন্ধকারের দিকে। ওপরের বাঙ্কের থেকে তার কোণের ছায়ার দুরত্ব সে হিসাব করে মনে রাখল মেঝের ঠিক কোন্খানে তার অ্যাটাচিকেসটা রয়েছে। তারপর অনুমান করার চেষ্টা করল গুলি করার পর ন্যাশ কি করবে।
বন্ড বলল, ট্রিয়েন্টে তোমাকে আমি যে দলে টানব সে ব্যাপারে তুমি একটা ঝুঁকি নিয়েছিলে। তোমাকে যদি দলে না নিতাম তাহলে? তাছাড়া, এ মাসের সাংকেতিক কথাগুলো তুমি জানলে কি করে?
ন্যাশ ধৈর্য ধরে বলল, তুমি সব ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পেরেছ বলে মনে হচ্ছে না ওল্ডম্যান। SMERSH খুব দক্ষতার চেয়ে ভাল কিছু হতে পারে না। প্রত্যেক বছরের প্রতিটি মাসের তোমাদের সাংকেতিক কথাগুলো আমরা জানি। আমাদের দপ্তরের মত তোমাদের দপ্তরের কেউ যদি ঘটনাগুলোর গতি লক্ষ্য করত তাহলে দেখতে পেত প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে কোথাও না কোথাও তোমাদের একজন কর্মচারিকে হারাচ্ছ। হয়ত টোকিওতে, নয়ত টি বান্টুতে। SMERSH একজনকে বেছে নিয়ে তাকে ধরে। তারপর জোর করে তার কাছে সাংকেতিক কথাগুলো বার করে। সেই সঙ্গে তার জানা আরো তথ্য। তারপর সেন্টারের সবাই সেই সাংকেতিক কথাগুলো জানি। ব্যাপারটা পানির মত সহজ, ওল্ড ম্যান।