গোত্রবিচারে ফিরে যাই।
১. লাতিন গোত্র স্পেনিশ, ফরাসিস, পর্তুগিজ, ইটালিয়ান।
২. জর্মন গোত্র– জর্মন, ডাচ, ফ্লেমিশ।
৩. তুর্কি গোত্র তুর্কি (ওসমানলি তুর্কি, অর্থাৎ টার্কির ভাষা– তুর্কমানিস্থানের ভাষা, জগতাই তুর্কি। প্রথমটা মুস্তফা কামালের মাতৃভাষা, দ্বিতীয়টা বাবুর বাদশার)
৪. হাঙ্গেরিয়ান ও ফিনিশ কিন্তু এক হলেও শাখাতে বর্ণ-বৈষম্য প্রচুর।
৫. রাশান গোত্র– রাশান, পোলিশ, ল্যাটাভিয়ান, স্লোভাক ইত্যাদি।
৬. ইরানি গোত্র–ইরানি ফারসি ও কাবুলি ফারসি পার্থক্য সামান্য।
৭. আরবি গোত্র– আরবি, হিব্রু, ইডিশ (অধুনা প্যালেস্টাইনে প্রচলিত প্রাচীন হিব্রুর অর্বাচীন রাষ্ট্রভাষা), আহমেরিক (আবিসিনিয়ান ভাষা)।
৮. চীনা গোত্র– চীনা, জাপানি, কোরিয়ান ইত্যাদি।
৯. এছাড়া টিবেটো-বর্মন গোত্রের বর্মি ইত্যাদি। মালয়, থাই, ইন্ডোনেশিয়ন ইত্যাদি।
অজানাতে এবং জানাতে ছোট এবং বড় কোনও কোনও ভাষা বাদ পড়ে গেল। তাই নিয়ে শোক করবেন না। উপস্থিত এগুলো শিখে নিন। তা হলে অন্যগুলোর খবর আপনার থেকেই জানা হয়ে যাবে।
এর ভিতর সহজ ১ এবং ৬নং গোত্রের ভাষা, তার চেয়ে কঠিন ২ এবং ৩নং গোত্রের ভাষা, তার চেয়ে কঠিন ৫ নম্বরের গোত্র, তার চেয়েও কঠিন ৭নং, পারতপক্ষে ৮ নম্বরের পাড়া মাড়াবেন না (অবশ্য জাপানি তেমন শক্ত নয়), ৪ আর ৯ নম্বরের খবর জানিনে, তবে খুব শক্ত হওয়ার কথা নয়।
দুই গোত্রের দুটো ভাষা একসঙ্গে শেখা যে খুব কঠিন তা নয়, তবে তার জন্য সপ্রতিষ্ঠান ও সগুরু প্রয়োজন। এই দুইটির বড়ই অভাব– এই দুঃসংবাদটি যতক্ষণ পারি চেপে গিয়েছিলুম; আর পারা গেল না। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে এই সুসমাচারটিও বিতরণ করছি যে ভারতবর্ষের কোথাও এমন সুব্যবস্থা নেই যে তার পাল্লায় পড়ে আপনি হেরে যাবেন। এই যে আমাদের রাজধানী দিল্লি শহর, সেখানকার লোক কেন্দ্রের নোকরি বাবদে হামেহাল তেজনজর ওকিবহাল সেখানে যে দু একটি প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলো অতিশয় রদ্দি অথচ টাকা লুটছে এন্তের। ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি, কলকাতায় নাকি গোটাদুৰ্ত্তিন প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে বিদেশি ভাষা শেখানো হয়। খোঁজ করলে দেখবেন, খুড়ো-জ্যেঠার আমল থেকে বাড়িতে দু চারখানা মার্লবর পড়ে আছে, কিন্তু ইংরেজি ছাড়া কোনও বিদেশি ভাষা কেউ শেখেননি। আমিও ভূ-ভারতে এমন প্রাণীর সংস্পর্শে আসিনি যিনি ওইসব প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে কলকাতাতে বসে কোনও বিদেশি ভাষা শিখেছেন। তবে ইদানীং অবস্থা একটু ভালো হয়েছে।
অধমের শেষ সাবধানবাণী : সবকটা আণ্ডা একই ঝুড়িতে রাখবেন না– কুল্যে শির্নি একই দরগায় উজোড় করে দেবেন না। তার সরল অর্থ বিএ, এমএ পাস অবহেলা করে হঠাৎ তেরিয়া হয়ে বিদেশি ভাষার পশ্চাদ্ধাবন করবেন না। এসব পড়াশুনো বিএ, এমএ, পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চালাবেন– আড্ডাটা সিকিটাক কমিয়ে দিয়ে ফুটবল দেখাটা একটু মুলতবি রেখে দিয়ে। একদম ছেড়ে দিতে বলব কেন, তওবা, তা হলে আপনার বাঙালিত্বই যে উপে যাবে। ভাষা শিখে পরীক্ষা দিয়ে যদি সেদিকে নোকরি না জোটে তবে বিএ, এমএ পাস করে যা করতেন তাই করবেন। তা হলে অন্তত আমার গলায় গামছার ফাঁস লাগিয়ে বলতে পারবেন না, ‘তবে রে–, তোর কথায় না– ইত্যাদি।’
————
১. এখানে এম্বেসি, হাই-কমিশন, লিগেশন ইত্যাদির পার্থক্য সম্বন্ধে সামান্য কিছু বলে দেওয়া ভালো। এই তিনটিই রাজনৈতিক যোগাযোগ এবং কূটনৈতিক কাজকর্ম চালায়। এম্বেসি এবং হাই-কমিশন পদমর্যাদায় একই- ব্রিটিশ ক্রাউনের আওতায় থাকলে এম্বেসির নাম হাইকমিশন, লিগেশন পদমর্যাদায় ছোট। কনসুলেটের কাজ ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনমতো একাধিক কনসুলেট থাকতে পারে কিন্তু একাধিক এম্বেসি হয় না এবং সে স্থানে কনসুলেট-জেনারেলও থাকে। ট্রেড-কমিশন কনসুলেটের চেয়ে জাতে ছোট্ট অনেকটা এক্সপেরিমেন্টাল পোস্ট-অফিসের মতো। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়লে তার পদবৃদ্ধি হয়। কোনো কোনো দেশে আমাদের কনসুলেট না থাকলে, সেখানকার এম্বেসি-হাই-কমিশন-লিগেশন ওই কাজও করে থাকে। এইসব তাবৎ প্রতিষ্ঠান আমাদের ফরেন অফিসের ভাবেতে থাকে।