হ্যাঁ, তিনিই বটে।
তাকে একবার এখন ফোনে পাওয়া যাবে?
তা হয়ত যেতে পারে।
দেখ তো, কানেকশন পাস কিনা।
প্রতাপ সিংকে বাড়িতে নয়, তার দপ্তরেই পাওয়া গেল।
ফোনটা দেবেশ কিরীটীর হাতে তুলে দিল।
মিঃ সিং—গুড মর্নিং—আমি রায়!
মিঃ রায়? কখন এলেন—কোন্ ট্রেনে, না প্লেনে এলেন?
সকালের ট্রেনেই এসেছি।
আমার লোক আর গাড়ি ফিরে এলো–তারা বললে আপনাকে খুঁজে পেলো না।
ইচ্ছে করেই ধরা দিইনি।
বুঝেছি–তা এখন কোথা থেকে কথা বলছেন? কোথায় উঠেছেন?
সাক্ষাতে সব জানাব-আপনার সঙ্গে কখন কোথায় দেখা হতে পারে বলুন, মিঃ সিং।
বলেন তো এই মুহূর্তেই হতে পারে, গাড়ি পাঠাতে পারি—আপনি তো জানেন, হাউ উই আর অ্যাঙসাস টু মিট ইউ!
ঠিক আছে, এখন বেলা পৌনে দশটা; এগারোটায় আপনার অফিসে মিঃ গুলজার সিং নামে একজন যাবে
হু ইজ গুলজার সিং?
সাক্ষাতেই তার পরিচয় পাবেন। কিরীটী ফোনটা রেখে দিল।
বেলা ঠিক এগারোটায় মিঃ সিংয়ের বেয়ারা এসে সেলাম দিল, তার হাতে একটা চিরকুট—চিরকুটে লেখা ইংরেজীতে গুলজার সিং।
প্রতাপ সিং সেকেলে একজন পুঁদে আই. সি. এস. অফিসার—বয়েস পঞ্চাশের কিছু ঊর্ধ্বেই হবে। তবে চেহারা থেকে বয়েসটা ঠিক ধরা যায় না।
বেশ হৃষ্টপুষ্ট চেহারা—ছয় ফুটের কাছাকাছি প্রায় লম্বা। পাঞ্জাবী শিখ হলেও দাড়িগোঁফ নিখুঁতভাবে কামানো। পরনে দামী গরম সুট। মাথার চুল ব্যাক-ব্রাশ করা—রগের দুপাশের চুলে পাক ধরেছে।
প্রতাপ সিং টেবিলের উপর একটা ফাইল খুলে কি সব দেখছিলেন, বেয়ারাকে বললেন, গুলজার সিংকে ঘরে পাঠিয়ে দিতে।
মে আই কাম ইন?
ইয়েস, কাম ইন।
কিরীটী এসে ঘরে ঢুকল। ডোর-ক্লোজার লাগানো দরজা নিঃশব্দে আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে গেল। ঘরের মধ্যে এক কোণে ইলেকট্রিক হিটার বসানো! ঘরের বাতাস বেশ উষঃ—আরামপ্রদ।
কিরীটীর পরনে দামী সুটি। মুখে চাপদাড়ি, মাথায় পাগড়ি, চোখে কালো কাঁচের চশমা।
প্রতাপ সিং কিন্তু চিনতে পারেন না কিরীটীকে, কারণ গতবারের বেশভূষা ছিল অন্যরকম কিরীটীর।
বৈঠিয়ে সাব।
কিরীটী বসলো মুখোমুখি একটি চেয়ারে।
আপনি মিঃ রায়ের কাছ থেকে আসছেন?
হ্যাঁ, মিঃ সিং—
ইয়েস–
আমিই রায়—
গুড হেভেনস।
হাশ! আস্তে—এখানে যে কদিন থাকবো এইটাই হবে আমার পরিচয়।
বাট হোয়াই?
প্রয়োজন আছে-যাক এখন কাজের কথায় আসা যাক—কেউ এখন এখানে আসবে না তো?
না।
তাহলে কাজের কথাতেই আসা যাক। সে দলিলটা সম্পর্কে আর কোন সংবাদ পাননি?
দলিলটা পাওয়া গিয়েছে।
গিয়েছে? হাউ? কোথায় পেলেন?
যে আয়রন সেফ থেকে খোয়া গিয়েছিল তার মধ্যে পাওয়া গিয়েছে।
বলেন কি? কবে পেলেন?
দিন দুই হলো।
কিন্তু আপনি তো আমাকে ফোনে সেকথা জানাননি।
না, জানাইনি–তার কারণ—
কি বলুন তো? কারণ যারা সেটা চুরি করেছিল তারা সম্ভবত তার একটা ব্লু-প্রিন্ট করে নিয়েছে।
সত্যি?
হ্যাঁ, তবে–
তবে কি?
সেবারে আপনাকে বলেছিলাম সেটা হয়ত বিদেশে পাচার হয়ে গিয়েছে কিন্তু আমরা ভাল করে সংবাদ পেয়েছি এখনো সেটা পাচার করতে পারেনি।
আর ইউ শিয়োর?
নচেৎ বলবো কেন?
মন্ত্রীমশাই আছেন এখন অফিসে?
আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন, তাকে আপনার কথা জানিয়েছি।
তাহলে একবার চলুন তার ঘরে যাওয়া যাক।
এখুনি যাবেন?
হ্যাঁ, চলুন—
দুজনে অতঃপর সিংয়ের ঘর থেকে বের হয়ে একটা লম্বা করিডোর অতিক্রম করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দপ্তরের সামনে এসে দাঁড়াল।
দরজার গায়ে লাল বাতি জ্বলছে। এনগেজড।
দরজার সামনে টুলের উপরে যে বেয়ারা বসেছিল সে সিংকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে সেলাম দেয়।
ঘরে কে আছে ব্রিজনাথ?
সাহেবের পার্সোন্যাল স্টেনোসাহেব কি সব যেন ডিকটেশন দিচ্ছেন।
আপনি একটু দাঁড়ান, আমি দেখি—প্রতাপ সিং দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে গেল। মিনিট দুয়েক বাদে একটি অতি-আধুনিকা তরুণী হাতে কতকগুলো কাগজপত্র নিয়ে বের হয়ে কিরীটীর পাশ দিয়ে।
কিরীটী যেন তরুণীটিকে দেখেও দেখে না–সে মুখটা ঘুরিয়ে নেয়।
প্রতাপ সিং দরজা খুলে কিরীটীকে ভিতরে আসতে আহ্বান জানাল।
কিরীটী ভেতরে প্রবেশ করল।
চমৎকার ভাবে সাজানো-গোছানো ঘরটি। ঘরটি কিরীটীর অপরিচিত নয়-ইতিপূর্বে দিল্লীতে এলে, ওই ঘরের মধ্যে মন্ত্রীমশাইয়ের সঙ্গে তার আলাপ-আলোচনা হয়েছিল।
প্রতাপ সিং বোধ হয় আগেই কিরীটীর ব্যাপারটা রামস্বামীকে জানিয়ে দিয়েছিল? রামস্বামী তাকে সাদর আহ্বান জানালেন, বি সিটেড প্লিজ মিঃ রায়।
কিরীটী সামনের চেয়ারটায় বসে।
আচ্ছা মিঃ সিং, তুমি তাহলে সেই জরুরী ফাইলটা আজই যাতে আমাদের প্রধান মন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছায় তার ব্যবস্থা করো—আমি ততক্ষণে ওঁর সঙ্গে কথাটা সেরে নিই।
ও, কে-স্যার।
প্রতাপ সিং ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
আপনি এসে গেছেন মিঃ রায়, আমি যেন বেঁচেছি। কি অসহ্য উদ্বেগের মধ্য দিয়ে যে দিনরাত কাটছে।
০৫. আপনার সেক্রেটারীর মুখে শুনলাম
আপনার সেক্রেটারীর মুখে শুনলাম আসল ডকুমেন্টটা পেয়ে গিয়েছেন—কিরীটী বললে।
তাতেই তো আরো আমার মাথা ঘুরতে শুরু করেছে, রামস্বামী বললেন।
ঠিক যেখানে ছিল আয়নার সে-এ, ঠিক সেখানেই পেয়েছেন কি ডকুমেন্টটা?
আঁ, হ্যাঁ তাই—একজাক্টলি হোয়ার ইট ওয়াজ! আরো নুতন করে গোলমাল দেখা। দিয়েছে ঐ দলিলটা আবার ফিরে পাওয়াতেই।
কেন?
প্রধান মন্ত্রীর ধারণা—
কি?
বুঝতে পারছেন না, যদিও রাদার ফ্যান্টাস্টিক—তাহলেও তার ধারণা, যারা হাতসাফাই করেছিল তারা নিশ্চয়ই তার একটা ব্লু-প্রিন্ট করে নিয়েছে।