কি কথা বলুন তো?
মিস খাতুনকে আপনি চেনেন?
ঐ মীনাক্ষী খাতুন! হ্যাঁ চিনি। কেন বলুন তো?
কতদিন থেকে ওঁকে চেনেন?
তা বছর দুই হবে।
কোথায় থাকেন উনি–কি করেন?
কি করেন ঠিক জানি না, তবে সব এমব্যাসিতেই ওঁর যাতায়াত আছে।
উনি কাল হংকং যাচ্ছেন।
তাই নাকি?
হ্যাঁ, আপনাকে একটা সংবাদ নিতে হবে। কাল সকালে যেসব ইন্টারন্যাশানাল প্লেন ছাড়ছে তার মধ্যে কো-কোটা হংকং টাচ করবে!
ঠিক আছে।
যদি পারেন তো আজ রাত্রে সংবাদটা আমাকে জানাবেন।
জানাবো।
ভোর চারটে নাগাদ টেলিফোন বেজে উঠলো।
কিরীটী জেগেই ছিল। উঠে গিয়ে ফোনটা ধরলো।
রামস্বামী স্পিকিং। মিঃ রায়!
হ্যাঁ আমিই—বলুন।
একটা থাই প্লেন কাল সকাল সাড়ে নটায় ছাড়ছে, সেট হংকং টাচ করবে।
আর কোন প্লেন?
না।
ঠিক আছে। আপনার ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চের অফিসারকে বলবেন, তিনি যেন প্রস্তুত হয়ে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ পালাম এয়ারপোর্টে উপস্থিত থাকেন।
চতুর্বেদীকে তো আপনি চেনেন।
হ্যাঁ।
তাঁকেই বলবো থাকতে।
০৯. পালাম এয়ারপোর্ট
পালাম এয়ারপোর্ট।
বেলা আটটার আগেই কিরীটী এসে এয়ারপোর্টে উপস্থিত হলো সুব্রতকে নিয়ে। তার বেশভূষা আজ সম্পূর্ণ অন্যরকম।
মরক্কো দেশীয় এক সুলতানের মত। চোগা চাপকান, মাথায় হ্যাট, তার উপরে কালো মোটা কর্ড পাচানো-চোখে কালো চশমা।
চতুর্বেদীকে দেখা গেল সে ইন্টারন্যাশানাল কাউন্টারের কাছেই রয়েছে। আটটা পঁচিশ।
দেখা গেল শকুন্তলাকে এয়ারপোর্টে এসে একটা দামী গাড়ি থেকে নামতে। তার হাতে একটা হ্যান্ডব্যাগ।
টিকিট চেকিংয়ের পর শকুন্তলাকে দেখা গেল ঘন ঘন এদিক ওদিক অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করছে শকুন্তলা।
কিরীটী দূর থেকে লক্ষ্য রাখে।
নটা বাজতে মিনিট দশেক আগে একটি বিশিষ্ট এমব্যাসীর গাড়ি এসে দাঁড়াল এয়ারপোর্টের সামনে। সেই গাড়ি থেকে নামল একজন মধ্যবয়সী ভদ্রলোক। পরনে দামী সুট।
ভদ্রলোক লাউঞ্জে এসে ঢুকতেই শকুন্তলা এগিয়ে গেল তার কাছে।
চতুর্বেদীর সঙ্গে কিরীটীর চোখে চোখে কথা হয়ে যায়। চতুর্বেদী প্লেন ড্রেসেই ছিল। ওদের কাছাকাছি এগিয়ে যায়।
মিঃ আলাম, আমার ঘড়িটা এনেছেন?
হ্যাঁ, এই যে—
মিঃ আলাম পকেট থেকে একটা হাতঘড়ি বের করে দিল শকুন্তলাকে।
থ্যাংকস।
তাহলে আমি চলি!
আসুন।
আলাম দুপা এগিয়েছে, চতুর্বেদী এসে শকুন্তলার সামনে দাঁড়াল—কিরীটীও এগিয়ে আসে।
গুড মর্নিং মিস খাতুন।
কে?
চমকে ফিরে তাকায় শকুন্তলা।
আমি ইনটেলিজেন্স সার্ভিসের লোক। আপনাকে একবার আমার সঙ্গে আমাদের হেডকোয়ার্টারে যেতে হবে।
বাট হাউ দ্যাট ইজ পসিবল অফিসার, আমার প্লেন এখুনি ছাড়বে!
সে তো আমি জানি না—আমার ওপর যা অর্ডার আছে—
বাট হোয়াই? কেন?
এবারে কিরীটী এগিয়ে এলো, চোখের কালো চশমাটা খুলে ফেলল, চিনতে পারছেন আমাকে মিস মীনাক্ষী খাতুন?
কে আপনি?
সে কি! এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন সারারাত ট্রেনে একসঙ্গে মাত্র দুদিন আগে এলাম–
মিঃ রায়।
হ্যাঁ, কিরীটী রায়। বুঝতেই পারছেন আপত্তি জানিয়ে লাভ হবে না—অফিসারের সঙ্গে ওদের হেডকোয়ার্টারে চলুন—ইফ ইউ ডোন্ট লাইক টু ক্রিয়েট এ সিন হিয়ার, অ্যাট দিস এয়ারপোর্ট! ইয়োর গেম ইজ আপ!
কি বলছেন যা-তা পাগলের মত?
চলুন হেডকোয়ার্টারে, সেখানেই সব জানতে পারবেন—-চলুন—
শকুন্তলা আর আপত্তি জানায় না।
মাইকে তখন অ্যানাউন্স শুরু হয়েছে–প্যাসেঞ্জার প্রসিডিং টুওয়ার্ডস হংকং ম্যানিলা আর রিকোয়েস্টেড
ইনটেলিজেন্স সার্ভিসের হেডকোয়ার্টারে মীনাক্ষী খাতুনকে নিয়ে ওরা এলো।
মীনাক্ষী বলে, নাউ টেল——অফিসার, এসবের মানে কি আমাকে ধরে নিয়ে এলেন। কেন এয়ারপোর্ট থেকে?
কথা বললে কিরীটীই, মিস খাতুন, এবারে ডকুমেন্টটা বের করে দিন—
ডকুমেন্ট! কিসের ডকুমেন্ট? কি বলছেন পাগলের মত?
পাগল যে আমি নই, আপনি তা ভাল করেই জানেন। এখন বের করুন সেই ডকুমেন্ট—যেটা ভায়া হংকং একটি পররাষ্ট্রে পাচার করছিলেন—প্রতিরক্ষা দপ্তরের একটা জরুরী ডকুমেন্টের ব্লু-প্রিন্ট।
আমি একটা ইমপরটেন্ট ডকুমেন্টের ব্লু-প্রিন্ট নিয়ে যাচ্ছিলাম পাচার করতে, কে বললে আপনাকে?
অস্বীকার করার চেষ্টা করে কোন লাভ হবে না মিস খাতুন।
বেশ তো, আমার হ্যান্ডব্যাগ সার্চ করে দেখুন। তারপর তির্যক দৃষ্টিতে কিরীটীর দিকে তাকিয়ে বললে মীনাক্ষী, চান তো আমার বডিও সার্চ করতে পারেন।
চতুর্বেদী বললেন, একজন মহিলাকে ডাকবো স্যার? ঊর্ধ্বতন অফিসার কিরীটীর মুখের দিকে তাকালেন।
কিরীটী মৃদু শান্ত গলায় বললে, তার আর প্রয়োজন হবে না, মিস খাতুন, আপনার হাতঘড়িটা খুলে দিন।
হাতঘড়িটা! হেসে ফেললে মীনাক্ষী খাতুন, তাহলে এতক্ষণে আপনার ধারণা হলো মিঃ রায়, আপনাদের বহু মূল্যবান ব্লু-প্রিন্টটা আমার হাতঘড়ির মধ্যেই আছে।
ঘড়িটা খুলে দিন—
এবারে কিন্তু মিস খাতুনের মুখখানা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
কি হলো, দিন।
দিচ্ছি—বলতে বলতে মিস খাতুন তার হ্যান্ডব্যাগটা খুলে কি একটা বের করে চট করে মুখে পুরে দিলো।
এবং ঘরের মধ্যে উপস্থিত সকলে কিছু বুঝবার আগেই মীনাক্ষী খাতুনের দেহটা সশব্দে মেঝেতে পড়ে গেল।
কি হলো?
কিরীটী তাড়াতাড়ি ঝুঁকে পড়ে মীনাক্ষীর পাল্স দেখে, তারপর মাথা নেড়ে বলে, শি ইজ ডেড!
ডেড?
বিস্ময়-বিহুল কণ্ঠে কথাটা উচ্চারণ করেন চতুর্বেদী।