কোন কৌশলে বুদ্ধি খাটিয়ে সামান্য কাজ সম্পন্ন করতে আপনি পারবেন না সবিতা দেবী?
সবিতার মুখের দিকে তাকিয়েই কিরীটী বুঝতে পারে, সবিতা ওর প্রস্তাবে সত্যিই একটু বিহ্বল হয়ে পড়েছে।
শুনুন সবিতা দেবী, যেমন usual আপনি ঘরে শুতে যান শুতে যাবেন নিজের ঘরে, তারপর রাত্রে কোন এক সময় ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে ছাদের দরজা খুলে ছাদ দিয়েই পাশের আপনার বাবার ঘরে গিয়ে শোবেন। বুঝতে পেরেছেন আমি কি বলতে চাই?
হ্যাঁ। মৃদু নিরুৎসুক কণ্ঠে জবাব দেয় সবিতা।
আর একটা কথা সবিতা দেবী
বলুন।
সৌদামিনী ও তাঁর পুত্র ধনঞ্জয়—এদের আপনি চেনেন?
কই, ও নাম দুটো কখনও শুনেছি বলেও তো আমার মনে পড়ছে না!
মনে করে দেখুন তো! আপনার কোন দূর-সম্পর্কীয় আত্মীয় বা
না, ও নাম দুটো জীবনে কখনও শুনিনি।
কখনও আপনার বাবার মুখে কোন আলোচনার মধ্যে?
না।
ভাল করে আর একবার ভেবে দেখুন সবিতা দেবী!
না, কখনও ও দুটো নাম শুনিনি কারো মুখেই।
কানাইয়ের মার মুখেও নয়?
না। কিন্তু কেন বলুন তো?
ওই দুটি নামের পরিচয় আমার জানা একান্ত আবশ্যক সবিতা দেবী। আচ্ছা এবারে আপনি যেতে পারেন সবিতা দেবী। হ্যাঁ ভাল কথা, দুটো দিন অন্তত আপনি বাড়ি থেকে কোথাও বের হবেন না। এটিও আমার একটা বিশেষ অনুরোধ।
বেশ।
সবিতাকে বিদায় দিয়ে কিরীটী চটপট প্রস্তুত হয়ে নিল, এখনি একবার থানায় যেতে হবে। লক্ষ্মীকান্তর সঙ্গে কথা আছে।
কিরীটী থানায় গিয়ে পৌঁছাল যখন, বেলা তখন প্রায় তিনটে।
লক্ষ্মীকান্ত বাইরে অফিস ঘরেই ছিলেন, কিরীটীকে ঘরে প্রবেশ করতে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে আহ্বান জানালেন, আসুন কিরীটীবাবু, বসুন।
কিরীটী নিঃশব্দে উপবেশন করল। বললে, বসন্তবাবুর কোন খোঁজ পেলেন মিঃ সাহা?
না। তবে কলকাতায় ঘটনার বিবরণী ও বসন্ত সেনের full description দিয়ে special branch-এ জরুরী তার করে দিয়েছি। যে কোন মুহূর্তেই সংবাদ একটা কিছু আশা করছি।
আমার মনে হয় দু-চার দিনের মধ্যে হয়ত বসন্তবাবু, নিজেই ফিরে এসে ধরা দেবেন মিঃ সাহা!
হুঁ! আপনি তাই মনে করেন কিরীটীবাবু? আপনি জানেন না তাহলে ঐসব চরিত্রের লোকদের they are dangerous! প্রথম হতেই ব্যাপারটা আমি লঘু করে নিয়েছিলাম। ভাবতেও পারিনি এত জটিলতা আছে ভিতরে। আফসোস হয় আমার—প্রথমেই ও লোকটাকে সন্দেহ করিনি কেন? প্রথমেই ওকে গ্রেপ্তার করলে হয়ত এতদিনে সব সুরাহা একটা হয়ে যেত
ভাববেন না, সে যাবে কোথায় পালিয়ে, ধরা পড়বেই!
সে আমিও জানি। তবে
আপনি পরশু বলছিলেন, সন্তোষ চৌধুরীর নিকট অনেক কিছুই নাকি জানতে পেরেছেন!
হ্যাঁ সন্তোষ চৌধুরী দুখানা চিঠি দেখাল মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর লেখা রামশঙ্করের কাছে।
সে চিঠি দুটোতে কি লেখা ছিল আপনার মনে আছে কি মিঃ সাহা।
সংসারের নানা কথা।
সে চিঠির মধ্যে টাকা বা সম্পত্তির কোন কথা ছিল কি?
না, সে ধরনের কোন কথাই ছিল বলে তো মনে পড়ছে না!
কিরীটী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।
আবার প্রশ্ন করে, কানাইয়ের মার কোন সংবাদ পেলেন মিঃ সাহা?
না। চারিদিকে লোক তো পাঠিয়েছিলাম, কেউই কোন সংবাদ আনতে পারেনি।
আপনার লোকদের বিলের চৌহদ্দিটা একবার ভাল করে খুঁজে দেখতে বলবেন তো!
কেন বলুন তো?
দেখুন না খোঁজ করে, কানাইয়ের মার সন্ধান না পেলেও, আর কারো সংবাদও তো পেতে পারেন!
বেশ তো, এখনি লোক পাঠাচ্ছি। কিন্তু আপনার অনুসন্ধান কতদূর এগলো?
কিরীটী তখন নিচুকণ্ঠে কতকগুলো কথা লক্ষ্মীকান্তকে বললে। কিরীটীর কথা শুনতে শুনতে লক্ষ্মীকান্ত বেশ উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং বলেন, আশ্চর্য! তাহলে তো আমার মনে হয়
সন্তর্পণে এবারে আমাদের এগুতে হবে। He is desperate now! মরীয়া হয়ে এবারে হত্যাকারী তার শেষ attempt নেবেই—এবং সেই চরম মুহূর্তে আমরা red-hand ধরবো তাকে। আপনি প্রস্তুত থাকবেন। বিশেষ করে এই কথা বলবার জন্যই আমার এখানে আসা।
ধন্যবাদ। আমি প্রস্তুত থাকবো।
প্রায় সন্ধ্যা নাগাদ কিরীটী সাইকেলে চেপেই আবার প্রমোদভবনে ফিরে এলো।
সন্ধ্যা একসময় উত্তীর্ণ হয়ে ঘনিয়ে এলো অন্ধকার রাত্রি চারিদিকে ঘন কালো পক্ষ বিস্তার করে।
ক্রমে রাত্রি বেড়ে চলে, নিস্তব্ধ হয়ে আসে চারিদিক।
প্রমোদভবনের সকলের চোখে নেমে আসে ঘুমের ঢুলুনি। একটা কিছু ঘটনার প্রতীক্ষায় রাত্রির নিস্তব্ধ প্রহরগুলো কেটে যেতে থাকে কিরীটীর। কিন্তু কোন কিছুই ঘটলো না, ব্যর্থ প্রতীক্ষার ব্যাকুলতায় নিশি প্রভাত হলো।
একটা অস্বাভাবিক গুমোট ভাব যেন সমস্ত প্রমোদভবনকে গ্রাস করেছে। চলাফেরা করে সব নিঃশব্দ পদসঞ্চারে। কারো মুখেই কোন কথা নেই।
এমনি করেই কেটে গেল সমস্ত দিন সূর্য গেল অস্তাচলে, সন্ধ্যার তরল ছায়া নেমে এল চারিদিকে, রাত্রিও আসন্ন।
রাত্রি!
রহস্যময়ী রাত্রি আসে তার কালো ওড়না মেলে ধরণীর বুকে শ্লথ মন্থর পদসঞ্চারে। রহস্যঘন আশঙ্কার পূর্বাভাস যেন রাত্রির ঘনিয়ে ওঠা স্তব্দতায়।
গেটের পাশে ঝাউগাছগুলো বাস টানছে যেন থেকে থেকে কোন ক্লান্ত প্রেতাত্মার মতই। বৌরাণীর বিলের অথৈ কালো জল অন্ধকারে যেন ঘন জমাট বেধে আছে। কালো রহস্যঘন আকাশে তারাগুলো মিটিমিটি তাকাচ্ছে ভয়ে ভয়ে বুঝি।
ঢং..ঢং…ঢং। রাত্রি তিনটে ঘোষিত হলো দেওয়াল-ঘড়িটায়।