সত্যজিৎ এরপর ইঙ্গিতে সবিতাকে ডেকে নিয়ে কক্ষ ত্যাগ করল।
২২. কিরীটী ও অতীনলাল সলিসিটার
ঘরের মধ্যে এখন দুজন।
কিরীটী ও অতীনলাল সলিসিটার।
কিরীটীবাবু! এতক্ষণে সর্বপ্রথম অতীনলাল কিরীটীর দিকে তাকিয়ে সম্বোধন করলেন ওকে। দুজনেরই পূর্ব-পরিচয় ছিল, কিন্তু এতক্ষণ কেউ সেটা প্রকাশ করেননি।
গতকাল নায়েব বসন্ত সেনের মুখে অতীনলাল বোস সলিসিটারের নাম শোনা অবধিই কিরীটী ভাবছিল এ কোন অতীনলাল এবং আজ সলিসিটারের আসার সংবাদ পেয়ে এই ঘরে প্রবেশ করেই অতীনলালকে দেখে বুঝতে পেরেছিল ইনি তার পরিচিতই।
বলুন?
ব্যাপারটা যেন একটু ঘোরালই মনে হচ্ছে!
একটু নয়, বেশই ঘোরাল মিঃ বোস। মৃদুকণ্ঠে কিরীটী জবাব দেয়।
উইলটা পড়া সম্পর্কে কি করা যায় বলুন তো?
উইলের বিষয়বস্তু আপনার জানা আছে তো?
না। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর এটা নতুন উইল। মাস দেড়েক আগে পূর্বের উইলটা বদলে তিনি এই নতুন উইলটা করেছিলেন। এ উইলটা যখন লেখা হয় আমি উপস্থিত ছিলাম না। ফেডারেল কোর্টে একটা মামলায় আমাকে দিল্লী যেতে হয়েছিল—আমার সিনিয়ার পার্টনার উইলটা করে দেন। হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমাকে উইলটা নিয়ে আসতে হয়েছে।
হ। আচ্ছা একটু আগে যে বলছিলেন—মৃত্যুঞ্জয়বাবু নিহত হবার দিন আষ্টেক আগে যে জরুরী চিঠিটা লিখেছিলেন, সে চিঠিটা কি সঙ্গে এনেছেন?
হ্যাঁ। দেখতে পারি কি চিঠিটা?
এই যে, অতীনলাল তাঁর পোর্টফোলিওটা খুলে একটা লেফাপা বের করে তার ভিতর হতে একটা মুখ-কাটা রেজিস্ট্রী খাম বের করে দিলেন।
কিরীটী চিঠিটা খাম থেকে টেনে বার করল। চিঠিটা বোসের সিনিয়র পার্টনারকেই লেখা। এবং তারিখ দেখেই বোঝা যায় নিহত হবার ঠিক নদিন পূর্বে চিঠিটা মৃত্যুঞ্জয় লিখেছিলেন।
চিঠিটা অবশ্য সংক্ষিপ্ত। চিঠিতে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে, তিনি একটা শিলমোহর করে চিঠি তাঁর মেয়ের নামে লেফাপার মধ্যে রেখে গেলেন; সেই চিঠিটা তাঁর মেয়ে না পড়ার আগে যেন কোনমতেই উইল পড়ে শোনানো না হয় তাকে।
যাই হোক মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী লিখিত এই চিঠি ও লেফাপার মধ্যে শিলমোহল করে যে গোপন চিঠি তিনি লিখে গিয়েছেন এবং মাত্র মাস দেড়েক আগে আবার নতুন করে উইল করার ব্যাপারে পূর্বের উইল বদল করে এ সব কিছু হতে একটা কথা কিরীটীর মনে স্বতই উদয় হয়, গত মাস-দুয়ের মধ্যে এমন কোন ঘটনা নিশ্চয়ই ঘটেছিল যা মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে যথেষ্ট বিচলিত করেছিল।
এবং যে কারণে তাঁকে উইল পর্যন্ত বদলাতে হয়েছিল। চিঠিটা পড়ে কিরীটী সেটা অতীনলালের হাতে আবার ফেরত দেয়।
পূর্বের উইলে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী কিভাবে তাঁর সম্পত্তির ব্যবস্থা সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপনার মনে আছে কি মিঃ বোস?
আছে, তবে details তো মনে নেই।
তবু বলুন তো, শুনি?
দুই ভাগে সম্পত্তি ভাগ করা হয়েছিল—এক অংশ তাঁর মেয়ে সবিতা দেবী পাবেন। বাকী অর্ধেকের অর্ধাংশ যদি তার জাঠতুত ভাই রামশঙ্কর চৌধুরীর ছেলে সন্তোষ চৌধুরী ফিরে আসেন তো তিনি পাবেন, এবং অবশিষ্ট পাবেন সৌদামিনী দেবী বা তস্য পুত্র ধনঞ্জয়।
সৌদামিনী ও তস্য পুত্র ধনঞ্জয়—এরা কে?
তা ঠিক বলতে পারি না।
পূর্বের উইলে ওঁদের সম্পর্কে তাঁর কোন নির্দেশ বা পরিচিতি তো ছিল না?
আপনাকে বা আপনার সিনিয়র পার্টনারকেও ওঁদের পরিচয় দেননি?
আমি বা আমার পার্টনার কেউই জানি না, তবে বলেছিলেন মিঃ চৌধুরী যে সময়মত সে সব ব্যবস্থাই তিনি করে যাবেন।
কিরীটী কিছুক্ষণ নিঃশব্দে কি যেন ভাবে এবং সহসা একটা কথা মনে পড়ায় আবার প্রশ্ন করে, আচ্ছা মিঃ বোস বলতে পারেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী যে তাঁর পূর্বেকার উইল বদল করে আবার নতুন উইল তৈরী করেছিলেন, এ সংবাদ বসন্তবাবু জানতেন কিনা?
মনে হয় জানতেন, কারণ প্রথমবারের উইলে বসন্তবাবু, একজন সাক্ষী ছিলেন, কিন্তু দ্বিতীয়বারের উইলে শুনেছি আমার সিনিয়রের মুখেই, বসন্তবাবু, সাক্ষী হিসাবে নামসই করেননি। তবে মৃত্যুঞ্জয়বাবু যদি বসন্তবাবুকে বলে থাকেন পরে এক সময়ে সেটা অবশ্য বলতে পারি না।
দ্বিতীয়বারের ঐ নতুন উইল সম্পর্কে আপনার কোন idea নেই তাহলে?
না।
ও সম্পর্কে কোন কথা আপনার সিনিয়রও কোন দিন আপনাকে বলেননি?
না।
কখনও সামান্য discussion-আলোচনাও হয়নি?
না।
ভৃত্য প্লেটে করে চা-জলখাবার নিয়ে ঘরের মধ্যে এসে প্রবেশ করল।
ঐদিনই দ্বিপ্রহরে কিরীটী তার ঘরে সবিতাকে ডেকে পাঠিয়েছিল। প্রয়োজনীয় কিছু আলোচনা ছিল সবিতার সঙ্গে ওর।
আজ রাত্রে আপনি যে ঘরে ও যে শয্যায় শোন, সে ঘরে ও সেই শয্যায় আপনার শোয়া চলবে না সবিতা দেবী। কিরীটী বলে।
কেন?
এখন কোন প্রশ্নই আপনি আমাকে অনুগ্রহ করে করবেন না সবিতা দেবী ও সম্পর্কে। সময়ে সবই আপনি জানতে পারবেন।
কিন্তু
এইটুকু শুধু বলতে পারি, যে ব্যবস্থা আমি করছি সব কিছু বিবেচনা করেই আমাকে করতে হচ্ছে, এবং এর চাইতে বেশী কিছু খুলে বলা বর্তমানে আমার পক্ষে সম্ভব নয় সবিতা দেবী।
বেশ, তাই হবে। কিন্তু কোন ঘরে শোব রাত্রে?
আপনার বাবার ঘরে। আর এ কথাটা যেন কেউ জানতে না পারে, এমন কি কল্যণী দেবী বা সত্যজিৎবাবুও না।
কিন্তু বুঝতে পারছি না মিঃ রায়, একই বাড়িতে ওদের সকলের সঙ্গে থেকে সকলের অজ্ঞাতে অন্য ঘরে শোওয়া কেমন করে আমার পক্ষে সম্ভব হতে পারে!