কিন্তু এ অত্যন্ত অন্যায় জুলুম আপনাকে আমি বলতে পারি কিরীটীবাবু! কখনই হতে পারে না, নায়েব কাকা বাবার কোনপ্রকার অনিষ্ট চিন্তা।করতেই পারেন না। কেউ বললেও আমি বিশ্বাস করতে পারি না। আবেগে উত্তেজনায় সবিতার কণ্ঠস্বরটা কাঁপছিল।
আপনি ব্যস্ত হবেন না সবিতা দেবী। স্নিগ্ধ আশ্বাস-ভরা কণ্ঠে কিরীটী বলে, বসন্তবাবু, দোষী কি নিদোষী সে বিচার করতে যাওয়া এখন হয়ত আমাদের কারো পক্ষেই বিবেচনার কাজ হবে না, আইনের জোর দেখিয়ে যে লক্ষীকান্ত ওঁকে ধরে নিয়ে গেলেন সেটার মীমাংসার অবশ্য অন্য পথও ছিল। একেবারে সটান হাজতে নিয়ে গিয়ে না পরলেও চলতো।
কিন্তু কারণটা কি মিঃ রায়? প্রশ্ন করলো এবারে সত্যজিৎ।
বসন্তবাবু, তাঁর জবানবন্দীতে বলেছিলেন যে রাত্রে মৃত্যুঞ্জয়বাবু নিহত হন সেদিন সকালের দিকেই নাকি একটা মহাঁল পরিদর্শনে গিয়ে ফিরেছিলেন তিনি ঐদিন রাত দুটোর পরে। কিন্তু
কিন্তু
কিন্তু আদপেই তিনি ঐদিন কোন মহালে যাননি। নিজের ঘরেই ছিলেন। কথাটা বললে কিরীটী।
সে কি!
হ্যাঁ, তবে দারোগাবাবুও সে-কথা জানতেন না এই কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত। তিনি মানে আমাদের দারোগাবাবু, ওঁকে পীড়াপীড়ি করছিলেন জানবার জন্য কোন মহাল পরিদর্শনে উনি গিয়েছিলেন, কিন্তু বসন্তবাবু, সেকথা বলতে রাজী নন। পরে অবশ্য আমার কথায় ব্যাপারটা যেন আরো ঘোরালো হয়ে দাঁড়াল।
কিন্তু আপনার কথাই কি সত্যি মিঃ রায়? কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলে এবারে সবিতা।
হ্যাঁ সবিতা দেবী।
সে কথা আপনি জানলেন কি করে মিঃ রায়?
কানাইয়ের মার মুখে
ঘরের মধ্যে যেন বজ্রপাত হলো।
কানাইয়ের মার মুখে? প্রশ্ন করলে সত্যজিৎ।
হ্যাঁ।
কিন্তু আপনার সঙ্গে তার কথা হলো কখন? আবার সত্যজিৎ প্রশ্ন করে।
যে রাত্রে সে নিরুদ্দিষ্টা হয়, মানে পরশু রাত্রে শুতে যাবার আগে সিঁড়িতে কানাইয়ের মার সঙ্গে আমার দেখা হয়। আমি তাকে আমার ঘরে ডেকে এনে কয়েকটা প্রশ্ন করি। তখনই ওই কথাটা নায়েব সম্পর্কে জানতে পারি। প্রথমটায় সে বলতে রাজী হয়নি, পরে চাপ দিয়ে কথার মারপ্যাঁচে ফেলে সত্য কথাটা বের করে নিয়েছিলাম।
তবে কি সত্যিই কানাইয়ের মা ওঁর, সবিতার দিকে তাকিয়ে বললে, বাবার মৃত্যুর আসল ঘটনাটা জানত নাকি?
না।
ক্ষমা করবেন মিঃ রায়, কানাইয়ের মার অতর্কিতে পরশু রাত্রে নিরুর্দিষ্টা হবার ব্যাপারটা আপনাকে যেন নাড়া দিতে পারেনি বলে মনে হচ্ছে। অথচ এ ব্যাপারে তার evidenceগুলোও অন্ততঃ বিশেষ ভাববার ছিল না কি?
নিশ্চয়ই। তাতে কোন ভুল নেই সত্যজিতবাবু। তবে এই ব্যাপারে কানাইয়ের মা যতটুকু part play করতে পারতো, she already played it এবং তার নিকট হতে যতটকু information আমাদের পাওয়ার ছিল আমরা পেয়েও গিয়েছি, তাই বর্তমানে সে অবান্তর। হত্যাকারী তাকে spot থেকে সরিয়ে ফেলে খুব বুদ্ধিমানের কাজ করেছে বলে তো আমার মনে হয় না! বরং সে একটু দেরিই করে ফেলেছে আমার মতে। কিন্তু সর্বাপেক্ষা ভুল সে কি করেছে জানেন? শেষ পর্যন্ত ঐ কানাইয়ের মার ব্যাপারে তৎপর হতে গিয়েই। বেচারা বুঝতে পারেনি, হঠাৎ আচমকা এই case-এর evidence কতকগুলো নষ্ট করবার ইচ্ছায় কানাইয়ের মাকে না সরালে তার কাছে পৌঁছবার একটা নির্দিষ্ট পথ আমরা পেয়ে যাব। তবে এইটুকুই বলতে পারি সত্যজিতবাবু, কানাইয়ের মাকে হত্যা সে করেনি আর সেই কারণেই আমি কানাইয়ের মার নিরুদ্দেশ হওয়া সম্পর্কে খুব বেশী আকর্ষিত হইনি।
কিন্তু কি করে আপনার ধারণা হলো যে কানাইয়ের মাকে সত্যি সত্যিই হত্যা করা হয়নি?
যুক্তি দিয়ে এখনি আপনাকে আমি বলতে পারছি না সত্যজিৎবাবু তবে বলতে পারেন এটা আমার মনের একটা intuition, আমার মনের অনুভূতিই আমাকে তাই বলছে।
কিন্তু নায়েব কাকা সম্পর্কে কি করা যায় কিরীটীবাবু? এতক্ষণে সবিত্য কথা বললে।
একটু আগেই তো আপনাকে আমি বললাম সবিতা দেবী, লক্ষ্মীকান্তবাবু কতকটা জিদের বশেই বসন্তবাবুকে arrest করে নিয়ে গেলেন। আমি হলে arrest করতাম না। শেষের কথাটা কিরীটী যেন কতকটা অস্পষ্ট কণ্ঠে আত্মগতভাবেই উচ্চারণ করল।
সবিতা বা সত্যজিৎ দুজনের একজনও কিরীটীর কথার শেষটুকু তার উচ্চারণের অস্পষ্টতার দরুন শুনতে পায়নি, তাই সবিতাই প্রশ্ন করে, অ্যাঁ, কি বললেন মিঃ রায়?
না, ও কিছু না।
কিন্তু সে যাই হোক, যেমন করেই পারেন বসন্ত কাকাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আপনাকে আসতেই হবে মিঃ রায়।
দেখি।
না, দেখি নয় মিঃ রায়, মনে হয় একমাত্র হয়ত দারোগাবাবু, আপনার কথাই শুনলেও শুনতে পারেন। বলবেন না হয়, ওঁর জন্য জামিন হতে হলে আমিই হব। যা টাকার জামিন চান উনি, প্রস্তুত আছি।
কিরীটী সবিতার মুখের দিকে তাকাল, বুঝলাম, কিন্তু দারোগা সাহেব arrest করেই নিয়ে গেছেন। Arrest একবার কাউকে এইভাবে করবার পর, বিশেষ করে খুনের সন্দেহে, এখন জিলার ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া তো আর কেউই তাঁকে জামিন দেবার অধিকারী নন। তাহলে আপনাকে জিলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেই গিয়ে প্রার্থনা জানাতে হয়।
সত্যজিৎ এতক্ষণ চুপ করেই ছিল, এবারে সে মুখ খুললে, মিথ্যে কেন ব্যস্ত হচ্ছে সবিতা। ওঁর উপরে আমরা যখন সব কিছুতে নির্ভর করছি, যা ভাল বোঝেন উনি করবেন।