তা বটে! আচ্ছা চৌধুরী মশাইয়ের গলায় কোন দাগ বা চিহ্ন কি ছিল যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে তাঁকে
না, এমন কোন চিহ্নই তাঁর গলায় ছিল না।
মৃতদেহের গায়ে কোন জামা ছিল না শুনেছি
না, একটা চাদর জড়ানো ছিল মাত্র।
কোন struggle বা ধস্তাধস্তির চিহ্ন তাঁর গায়ে পরিধেয় বস্ত্রে ছিল না?
না।
যেখানে মৃতদেহ পাওয়া যায় সেই আশেপাশের জমিতে কোন চিহ্ন বা
না, তাও ছিল না।
কোন পদচিহ্ন?
না।
আচ্ছা শুনেছি একপাটি জুতো মৃতদেহের পায়েই ছিল, আর অন্য পাটি জুতো কিছুদূরে ঘাসের উপরে পড়েছিল?
তাই।
হুঁ। আচ্ছা মনে করনে শ্বাসরোধ করেই যদি তাঁকে হত্যা করা হয়ে থাকে তাহলে সেই শ্বাসরোধের ব্যাপারটা কোথায় সংঘটিত হয়েছিল? মানে সেইখানেই যেখানে মৃতদেহ পাওয়া যায়, না অন্য কোথায়ও বলে আপনাদের ধারণা?
এ তো সহজেই অনুমান করা যায়, নিশ্চয়ই সেই নন্দনকাননেই!
কেন বলুন তো?
লক্ষীকান্ত এবারে যেন সত্যজিতের প্রশ্নে বেশ একটু বিরক্তই হয়েছেন তাঁর কণ্ঠস্বরেই বোঝা গেল, তা ছাড়া আর কি! নইলে কি আপনার ধারণা। শ্বাসরোধ করে তাঁকে হত্যা করে, হত্যাকারী শেষে মৃতদেহটা ঐ দীর্ঘ পথ বহন করে নিয়ে গিয়েছে বোকার মত!
সম্ভবত সেটা হয়ত হত্যাকারী করেনি, কারণ সেটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে আপনাদের রিপোর্ট শুনে মনে হচ্ছে সেই নন্দনকাননেই যে চৌধুরী মশাইকে হত্যা করা হয়েছে সেটাও বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না।
কেন বলুন তো? একটা ব্যঙ্গ ও তাচ্ছিল্য-মিশ্রিত কৌতূহলের সঙ্গেই যেন লক্ষ্মীকান্ত সত্যজিতের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলেন।
কারণটা হয়ত চট করে আপনাকে এখনি বুঝিয়ে বলতে পারছি না লক্ষ্মীকান্তবাবু, তবে সাধারণ বুদ্ধি যাকে আমরা common sense বলি তা থেকে মনে হয় মৃতদেহ ও তার আশপাশের যে বর্ণনা আপনারা দিচ্ছেন তাতে করে বরং উল্টোটাই মনে হয়—হত্যা করবার পর মৃতদেহ সেখানে নিয়ে গিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে।
এবারে লক্ষ্মীকান্ত হেসে ফেললেন, চমৎকার যুক্তি আপনার মশাই! কে এমন আহাম্মক আছে বলুন যে হত্যা করবার পর মৃতদেহটাকে অতখানি risk নিয়ে ঐ নন্দনকাননের মধ্যে গিয়ে ফেলে রেখে আসবে? কাজ হাসিল করবার পর অকুস্থান থেকে খুনী যত তাড়াতাড়ি গা-ঢাকা দিয়ে সরে যেতে পারে তাই সে যায় এবং সেটাই এযাবৎকাল স্বাভাবিক বলে জেনে এসেছি মশাই। এ লাইনে একটা জীবনই তো কেটে গেল।
আপনার ও-কথার মধ্যে যুক্তি আছে বৈকি লক্ষ্মীকান্তবাবু, তবে কি জানেন, আপনিও হয়ত শুনে থাকবেন, এমনও বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, যে ধরনের risk-এর কথা আপনি বলছেন সেই ধরনের প্রচার risk থাকা সত্ত্বেও বিশেষ কোন উদ্দেশ্যেরই বশবর্তী হয়ে অনেক সময় হত্যাকারী হত্যা করবার পর অকুস্থান হতে মৃতদেহ টেনে বা বহন করে নিয়ে গিয়ে দূরবর্তী কোন স্থানে ফেলে রেখে এসেছে।
দেখুন মশাই, আপনার সঙ্গে অত চুলচেরা তর্ক-বিচার করবার মত পর্যাপ্ত সময় আমার হাতে বর্তমানে নেই। আমি case-এর investigation-এর জন্য সবিতা দেবীকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই একটু private-এ
সুস্পষ্ট বিরক্তি ও কতকটা তাচ্ছিল্যই যেন ঝরে পড়ল লক্ষ্মীকান্তর কণ্ঠস্বরে এবারে।
কিন্তু সত্যজিৎ কোন জবাব দেবার পূর্বেই সবিতা বলে উঠল, আমাকে যা আপনি জিজ্ঞাসা করতে চান লক্ষ্মীকান্তবাবু ওঁর সামনেই জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আপনাকে তো একটু আগেই আমি বলেছি উনি বাবার বন্ধুপুত্র ও আমাদের আত্মীয়েরই মত।
না না—তার কোন প্রয়োজন নেই সবিতা দেবী। বেশ তো, উনি যখন বিশেষ করে private-এ আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চান, আমি না হয় পাশের ঘরেই কিছুক্ষণের জন্য
সত্যজিৎ উঠে দাঁড়াল।
কিন্তু সবিতার দৃঢ় সংযত কণ্ঠস্বরে সহসা ও ফিরে দাঁড়াল, না, আপনি যাবেন না মিঃ রায়। এই ঘরেই থাকুন। ওঁকে জিজ্ঞাসা করতে দিন আপনার উপস্থিতিতেই উনি কি জানতে চান—
সত্যজিৎ ও লক্ষ্মীকান্তবাবু, দুজনেই যেন বেশ একটু সবিতার আচরণে ও কণ্ঠস্বরে বিস্মিত হয়ে একই সময়ে যুগপৎ সবিতার মুখের দিকে তাকায়।
সবিতা তার অর্ধসমাপ্ত কথাটা শেষ করে বলে, হ্যাঁ, যেহেতু বাবার এই হত্যা-রহস্যের মীমাংসার জন্য ওঁর সাহায্য ও সহানুভূতিও যেমন আমার প্রয়োজন তেমনি আপনার সাহায্য ও সহানুভূতিও আমার প্রয়োজন এবং সেই কারণেই আমি চাই গোড়া থেকেই যেন আমাদের তিনজনের মধ্যে একটা সহজ বোঝাপড়া থাকে।
ওঃ! তা বেশ। সত্যজিৎবাবু, আপনিও তাহলে বসুন।
পূর্বের মতই বিরক্তি-মিশ্রিত কণ্ঠে লক্ষ্মীকান্ত বলে ওঠেন।
সত্যজিৎ আবার পূর্বের আসনটিতে বসে পড়ল।
শুনুন লক্ষ্মীকান্তবাবু, আপনি জানেন আমার টাকার অভাব নেই। বাবার এই হত্যা-রহস্যের মীমাংসার জন্য আপনাদের ব্রাঞ্চের কোন বিশেষ অভিজ্ঞ ও নামকরা ব্যক্তিকেও যদি চান আনতে পারেন, তার যাবতীয় খরচও আমি দেব।
বেশ তো। আনন্দের কথা। তবে এক্ষেত্রে তাতেও কোন সুরাহা হবে বলে তো আমার মনে হয় না!
কেন বলুন তো? প্রশ্নটা করে সত্যজিৎ।
আমারও তো মশাই বিশ বছরের অভিজ্ঞতা এ লাইনে। খুনীর ধরাছোঁয়াও পাবেন না।
ধরা-ছোঁয়াও পাব না?
পাবেন কি করে! আমার যতদূর মনে হয় খুনী এক্ষেত্রে কোন বাইরের লোক। এ বাড়ির তো কেউ নয়ই, এ শহরেরও কেউ নয়। এ বিষয়ে আমি একেবারে স্থির সিদ্ধান্ত