বিশাখা চৌধুরী—মিত্রা সেন ও অশোক রায়ের পরই গতরাত্রে বৈকালী সঙ্ঘে আসেন বিশাখা চৌধুরী। অর্থাৎ রাত ৮-১০ মিঃ থেকে ৮-২০ মিনিটের মধ্যে। অবশ্য যদি ৮-১০ মিঃ—শশী হাজরার স্টেটমেন্ট সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়। ৮-২০ মিঃ বিশাখা চৌধুরী নিজে বলেছেন, তিনি এসেছেন ৮-১৫ মিঃ থেকে ৮-২০ মিঃ-এর মধ্যে। অর্থাৎ শশী হাজরার ৮-২০ মিঃ স্টেটমেন্টের সঙ্গে প্রায় মিলই আছে। বিশেষ গরমিল নেই। হলঘরে ঢুকে তিনি একমাত্র অশোক রায়কে দেখতে পান। এবং প্রকৃতপক্ষে হলঘরে এসে গোঁজার পরই অশোক রায় হলঘর থেকে বার হয়ে যায় নীচের বাগানের দিকে। হলঘরে সেই সময় তৃতীয় আর কেউ নাকি উপস্থিত ছিলেন না। সেক্ষেত্রে বিশাখার সঙ্গে অশোকের কোন কথাবার্তা হয়েছিল কিনা তাও জানবার উপায় নেই। সম্ভবত হয়নি এবং বিশাখা যে তাকে বাগানে follow করছিল তাও অশোক জানে না বা টের পায়নি। এখন এই স্টেটমেন্ট থেকে একটা ব্যাপার বোঝা যাচ্ছে যে, অশোক বাগানে গিয়েছিল ৮-২৫ মিঃ থেকে ৮-৩০ মিঃ-এর মধ্যে খুব সম্ভবত। এবং বিশাখা বাগানে পৌঁছেছিল সম্ভবত ৮-৩০ মিঃ থেকে ৮-৩২।৩৩ মিঃ-এর মধ্যে, বড় জোর ৮-৩৫ মিঃ-এর মধ্যে। তাই যদি হয়ে থাকে,তাহলে শশী হাজরার টেটমেন্ট যোব হয় মিথ্যে নয় যে, অশোক ৮-৪৫ মিঃ নাগাদ সঙ্ঘ থেকে বের হয়ে যায়। বিশাখা চৌধু বাগানে আত্মগোপন করে থাকাকালীন সময়ে যে কোন এক নারীর কণ্ঠস্বর শুনেলিসে কে? আবার সে প্রশ্নটি মনে আসছে। কারণ তার স্টেটমেন্ট থেকে জানা যাচ্ছে সেই অপরিচিত কণ্ঠস্বর নারীর সঙ্গে অশোকই কথা বলছিল। অশোক তাহলে নিশ্চয়ই চেনে সে নারীকে।
শ্ৰীমন্ত পাল—তাঁর নিজস্ব স্টেটমেন্ট থেকে জানা যায় তিনি এসেছিলেন সঙ্ঘে ঐদিন রাত্রে, রাত সাড়ে আটটা নাগাদ। এবং তাঁর কথা যদি সত্য বলে মেনে নেওয়া হয়, ৮-৩০ মিঃ-এ তিনি আসবার পর অশোক রায় সেখান থেকে চলে যায়। তিনিও সোজা এসে হলঘরে প্রবেশ করেন। এবং হলঘরে প্রবেশ করে সেখানে দেখতে পান সুপ্রিয় গাঙ্গুলী, সুমিত্রা চ্যাটার্জী ও মীরজুমলাকে। অর্থাৎ ৮-৩০ মিঃ-এর সময় বার-রুমে মীরজুমলা ছিল না। সেখানে ছিল বিশাখা চৌধুরী ও রঞ্জন রক্ষিত। ৮-৩০ মিঃ থেকে ৮-৩৫ মিঃ-এর মধ্যে হলঘরে ঢেকে রমা, মনোজ দত্ত ও নিখিল ভৌমিক। এবং তার পরে দুনম্বর দরজা দিয়ে ঢুকতে দেখেন মহারানী ও বিশাখাকে রাত ৯টা নাগাদ। মহারানী আবার ৯-১৫ মিনিটের সময় ঘর থেকে বের হয়ে যান।
রঞ্জন রক্ষিত-রঞ্জন রক্ষিত বলেছেন, তিনি এসেছেন গতরাত্রে সঙ্ঘে রাত ৮-৩০ মিঃ নাগাদ। কিন্তু সম্ভবত কথাটা ঠিক নয়। কারণ শ্ৰীমন্ত পাল যখন ৮-৩০ মিনিটে এসে ৮-৩০ মিঃ-এ হলঘরে প্রবেশ করেন সে সময় রঞ্জন রক্ষিত হলঘরে ছিলেন না। ছিলেন বার-রুমে। তাতে করেমনেহয় তিনি আগেই এসেছিলেন। এবং বিশাখাচৌধুরীর পরে-পরেই। সম্ভবত ৭-২০ মিঃ থেকে ৮-২৫ মিঃ-এর মধ্যে কোনো এক সময়। এবং তিনি যে বলেছেন সে সময় বিশাখা চৌধুরী ও অশোক রায় ঘরে ছিল, কথাটা সম্ভবত সত্য। এবং বিশাখা বা অশোক রায় সে কথা জানতে পারেনি। এবং তিনি যে অশোক রায়কে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে দেখেছিলেন ঘরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই—কথাটা মিথ্যা নাও হতে পারে। তারপর তিনি বিশাখা চৌধুরী সম্পর্কে যে কথাটা বলেছেন সেটাও হয়তো সত্যই।
এই পর্যন্ত পড়ে কিরীটীর মুখের দিকে তাকালাম। সে দেখি সোফায় হেলান দিয়ে বসে চোখ বুজে আপন মনে ধূমপান করছে। এবার আমি কাগজের অপর পৃষ্টা ওল্টালাম। সেখানে শুধু একটি কথাই লেখা আছে:
মিত্রা সেনের মৃত্যু ঘটেছে সম্ভবত সন্ধ্যা ৭-৫৫ থেকে রাত্রি ৮টার মধ্যে কোনো এক সময় এবং নীচের বাগানেই তীব্র বিষের ক্রিয়ায়।
কাগজটা হাতে করে বসে নিজের মনেই কথাটা ভাবছিলাম। হঠাৎ কিরীটীর ডাকে চমকে তার মুখের দিকে তাকালাম।
কি রে, আমার বিশ্লেষণের মধ্যে কিছু ভুল আছে সুব্রত?
আর একটু বিশদ করে বললে সুখী হতাম।
২০. কিরীটী মৃদু হেসে বললে
কিরীটী মৃদু হেসে বললে, গতরাত্রে আমাদের বিশেষ আলোচ্য সময়টি হচ্ছে সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত আটটা—ঐ একটি ঘণ্টা অর্থাৎ সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত আটটা ঐ একঘণ্টা সময়ের মধ্যে ওখানে যারা যারা উপস্থিত ছিল বা আসা-যাওয়া করেছে, তাদের মুভমেন্টস্-এর ওপরই আমাদের মিত্রা সেনের হত্যা-ব্যাপারে যাবতীয় রহস্য ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে—এই কথাটা ধরে নিতে হবে। কিন্তু প্রত্যেকের আলাদা আলাদা statement থেকে যতটা আমরা আপাতত সংগ্রহ করতে পেরেছি তার মধ্যে দুটি প্রাণী ব্যতীত অন্য কাউকেই
ঐ সময়ের জালে আটকাতে পারছি না। তাদের মধ্যে আবার একজন নিহত। দ্বিতীয়জন। আপাতত পলাতক। নাগালের বাইরে। অর্থাৎ মিত্রা সেন ও অশোক রায়। কিন্তু একটা ব্যাপার নিশ্চয়ই তুই লক্ষ্য করেছিস, বিশাখার statement যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে প্রথমত অশোক রায় কিছুতেই হত্যাকারী হতে পারে না। এবং দ্বিতীয়ত যে নারী-কণ্ঠস্বরকে বিশাখা অশোকের সঙ্গে কথা বলতে গতরাত্রে শুনেছিল সে কার কণ্ঠস্বর?
তোর মতে তা হলে বুঝতে পারছি সেই অদৃশ্য নারী-কণ্ঠস্বরের অধিকারিনীই মিত্রা সেনের হত্যাকারিণী। অর্থাৎ এক্ষেত্রে মিত্রা সেনকে হত্যা করেছে কোন এক নারীই, পুরুষ নয়—তাই কি?