শ্ৰীমন্ত পালকে চেয়ারে বসতে বলে সোজাসুজিই কিরীটী তার প্রশ্ন শুরু করে, আপনি আজ এখানে কখন এসেছেন মিঃ পাল?
আজ অন্যান্য দিনের চাইতে একটু তাড়াতাড়িই এসেছিলাম। বোধ হয় তখন রাত সাড়ে আটটা কি আটটা চল্লিশ হবে।
অন্যান্য দিন আরও দেরিতে আসেন?
হ্যাঁ, অফিসের কাজকর্ম সেরে আসতে আসতে প্রায় নটা দশটা বেজে যায়।
আচ্ছা আজ যখন আসেন তখন কাকে কাকে হলঘরে দেখেছিলেন, মনে আছে?
হলঘরে তখন তিনজন ছিল। সুমিতা চ্যাটার্জী ও সুপ্রিয় গাঙ্গুলী, আর ছিল ওয়েটার মীরজুমলা।
ওঁরা দুজন বুঝি গল্প করছিলেন?
হ্যাঁ, সুপ্রিয়র next production-এর নায়িকার রোলে অভিনয় করবার জন্য কনট্রাক্ট করেছে সুমিতা, সেই সম্পর্কেই ওঁরা আলোচনা করছিলেন।
আর মীরজুমলা তখন হলঘরে কি করছিল?
ওদের কোল্ড ড্রিঙ্ক দিতে এসেছিল। দিয়ে চলে গেল।
তারপর কতক্ষণ আপনি ঐ হলঘরে ছিলেন?
তা ঘণ্টা দুই হবে। সুব্রতবাবু আসা পর্যন্ত।
ঐ সময়ের মধ্যে একবারও আপনি হলঘর ছেড়ে অন্য কোথাও যাননি?
না।
ঠিক মনে আছে আপনার?
হ্যাঁ।
মহারানী সুচরিতা দেবী কখন হলঘরে আসেন, মনে করে বলতে পারেন?
বোধহয় তখন রাত নটা আন্দাজ হবে। সঠিক আমার মনে নেই।
আচ্ছা বাইরে থেকে কি তিনি হলঘরে এসে ঢোকেন?
না। মনে হচ্ছে দুনম্বর দরজা দিয়েই যেন হলঘরে এসে ঢুকতে তাঁকে আমি দেখেছিলাম।
সঠিক আপনার মনে আছে? ভেবে আর একবার ভাল করে বলুন মিঃ পাল।
মুহূর্তকাল ভেবে নিয়ে দৃঢ়কণ্ঠে মিঃ পাল এবারে বললেন, হ্যাঁ, আমার মনে আছে। দু নম্বর দরজা দিয়েই তিনি হলঘরে ঢুকেছিলেন।
হুঁ। একটু থেমে আবার প্রশ্ন করে, তারপর কতক্ষণ তিনি হলঘরে ছিলেন, মনে আছে?
তা মিনিট দশ-পনেরোর বেশী হবে বলে মনে হয় না।
আচ্ছা সুব্রত হলঘরে পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত আর কাকে কাকে তাহলে আপনি এখানে আসতে দেখেছেন মিঃ পাল?
এক এক করে সকলেই এসেছেন তারপর, রমা মল্লিক, মনোজ, সুধীরঞ্জন, নিখিল ভৌমিক–
আর কাউকে আসতে দেখেননি? মিত্রা সেন, অশোক রায় বা বিশাখা চৌধুরীকে?
অশোক রায় বা মিত্রা সেনকে দেখিনি, তবে বিশাখা চৌধুরী বোধ হয় আমারও আগেই এসেছিলেন মহারানীর মতই। কারণ মনে পড়ছে, তাঁকেও মহারানীর আগেই দুনম্বর দরজা দিয়ে হলঘরে ঢুকতে দেখেছিলাম।
আচ্ছা, ওদের দুজনের মধ্যে কে আগে হলঘরে ঢুকেছিল দুনম্বর দরজা দিয়ে মিঃ পাল, মহারানী না বিশাখা চৌধুরী?
আগে বিশাখা, তার মিনিট কয়েক পরেই মহারানী ঢোকেন হলঘরে।
আচ্ছা মিঃ পাল, আপনি কতদিন এই সঙ্ঘে যাতায়াত করছেন?
তা বছর তিনেক তো হবেই।
তাহলে তো দেখছি আপনি এই বৈকালী সঙ্ঘের একজন পুরাতন মেম্বার?
তা বলতে পারেন এক দিক দিয়ে। তবে আমার চাইতে পুরাতন মেম্বার এখানে আরো আছেন।
আপনার চাইতেও পুরাতন মেম্বার এখানে আর কে কে আছেন মিঃ পাল?
প্রথমেই ধরুন মহারানী। বলতে গেলে She is the oldest! তাঁর সমসাময়িক ছিলেন মিত্রা সেন। শুনেছি দু-চার মাস এদিক-ওদিক এখানে এসেছেন তাঁরা। তারপর শুনেছি মীরা চৌধুরী, তিনিও আমার আগেই এসেছেন এখানে।
মীরা চৌধুরী? তাঁকে কখনও এখানে আজ পর্যন্ত দেখেছি বলে তো মনে পড়ছে না মিঃ পাল! কথাটা এবার বললাম আমিই।
আমার দিকে ফিরে তাকালেন শ্ৰীমন্ত পাল। তারপর মৃদু হেসে বললেন, না সুব্রতবাবু, দেখেননি। কারণ তিনি মাস দুই হবে এখানে আর আসছেন না।
কেন? এ সঙ্ঘ কি তিনি ছেড়ে দিয়েছেন? প্রশ্নটা করলেন কিরীটী।
তা ঠিক বলতে পারি না, মিঃ রায়। আপনার এ প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারবেন আমাদের প্রেসিডেন্ট।
কি রকম? কাউকে এখান থেকে সরাতে হলে কি আপনাদের প্রেসিডেন্টই final authority?
সেই রকমই তো আমার মনে হয়। কিরীটীর প্রশ্নের জবাবে শ্ৰীমন্ত পাল বললেন।
কেন?
কারণ এখানকার ভাল-মন্দ শুভাশুভের জন্য আমাদের প্রেসিডেন্ট যতখানি দায়ী আর কেউ ততখানি দায়ী বলে তো আমার মনে হয় না।
আর একটা কথা মিঃ পাল, এই বাড়িতে প্রবেশের মেইন গেট ছাড়া অন্য কোন দ্বারপথ আছে বলে আপনি জানেন?
যতদূর জানি প্রবেশ ও নির্গমের এ বাড়িতে একটিমাত্র দ্বার ছাড়া দ্বিতীয় কোন দ্বারপথ নেই মিঃ রায়।
তারপর আবার কয়েকটা মুহূর্ত নিস্তব্ধতার মধ্যেই কেটে যায়।
উপস্থিত ঘরের মধ্যে সকলেই যেন অত্যন্ত চুপচাপ।
হঠাৎ আবার সেই স্তব্ধতা ভঙ্গ করে কিরীটীই কথা বলে।
বললে, হ্যাঁ, ভাল কথা মিঃ পাল, আপনি জানতেন কি মিত্রা সেন ও অশোক রায়ের বিবাহের সব স্থির হয়ে গিয়েছিল?
সে কি! কই না! রীতিমত একটা বিস্ময়ের সুরই যেন প্রকাশ পায় মিঃ পালের কণ্ঠস্বরে।
জানতেন না? শোনেননি?
না। এই প্রথম শুনছি। আর শুনলেও বিশ্বাস করতে পারছি না।
কেন বলুন তো?
মিত্রা সেন কাউকে কোনোদিন বিবাহ করতে পারতেন এ আমি ভাবতেও পারি না মিঃ রায়।
ভাবতেও পারেন না! কিন্তু কেন বলুন তো মিঃ পাল?
কারণ তিনি ছিলেন আমার মতে এমন এক জাতীয় মেয়েমানুষ যাঁরা ঠিক অনেকটা হংসের মত, সর্বক্ষণ জলে থাকলেও গায়ে জলবিন্দুটিও বসে না। পুরুষ জাতটার সব কিছুই তাঁর কাছে ছিল ঐ জলেরই মত।
হুঁ, আচ্ছা এবারে আপনি যেতে পারেন মিঃ পাল। হ্যাঁ, দয়া করে নীচের তলায় যে বেয়ারাটি থাকে তাকে যদি একবার পাঠিয়ে দেন! কি যেন তার নামটা?
আপনি শশীর কথা বলছেন? আচ্ছা পাঠিয়ে দিচ্ছি।