শাট আপ! গর্জে ওঠে লতিকা, আদেশ! কিসের আদেশ? আমি কি চোরছ্যাঁচোড় না খুনী যে আমাকে এমনি করে বেঁধে নিয়ে এল ওরা?
আপনি মিথ্যে উত্তেজিত হচ্ছেন। ব্যাপারটা আপনি বোঝবার চেষ্টা করুন লতিকা দেবী। মহান্তি বলে।
কি বুঝব, শুনি? বোঝবার এর মধ্যে আছেটা কি? বলুন, কেন আমাকে ধরে এনেছেন?
আপনাকে বলা সত্ত্বেও হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে হোটেল ছেড়ে চলে গেলেন কেন আপনি?
বেশ করেছি গিয়েছি। একশবার যাব।
বেশ, যাবেন। আপনাকে আমরা আটকাব না যদি আমাদের কতকগুলো প্রশ্নের ঠিক ঠিক জবাব দেন। কিরীটী এবারে বলে।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে লতিকা বলে, আপনি কি মনে করেছেন আমি কালী সরকারকে হত্যা করেছি?
কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে লতিকার গলার স্বরটা কেমন যেন ভার-ভার হয়ে ওঠে।
কিরীটী বলে, না।
তবে? তবে এসবের মানে কি?
বললাম তো, সেদিন ভাল করে আপনি আমাদের সঙ্গে কথাই বললেন না, তাহলে এ গোলমালটা হত না।
কি জানতে চান আপনারা?
ঠিক জবাব দেবেন তো?
ডোন্ট ওয়েস্ট টাইম! বলুন কি জানতে চান?
সেরাত্রে কখন আপনি হোটেল ছেড়ে চলে যান?
রাত একটার পর পিছনের দরজা দিয়ে।
হঠাৎ কাউকে না বলে চলে গেলেন কেন?
যাব না তো কি করব-কালীর মত মরে জলে ভাসব!
কি—কি বললেন? কিরীটী চমকে ওঠে যেন।
হ্যাঁ, হ্যাঁ–ঠিক বলেছি। না গেলে এতক্ষণে আমাকেও মরে সমুদ্রের জলে ভাসতে হত।
তাহলে আপনি বলতে চান, দেন সামওয়ান থ্রেটেও ইউ? ভয় দেখিয়েছিল কেউ আপনাকে?
লতিকা চুপ।
কি-বলুন? চুপ করে রইলেন কেন?
লতিকা তথাপি চুপ।
লতিকা দেবী।
আঃ, আমি কিছু জানি না—জিজ্ঞাসা করবেন না।
বেশ।
কিরীটী আবার কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। এবং চুপ করে থাকার পর আবার শুরু করে, লতিকা দেবী, রামানুজকে জানেন?
কে?
রামানুজ দাশ-রেণুকা বিশ্বাসের ভাই!
রেণুর ভাই?
হ্যাঁ।
আমি তো জানি না, রেণুর কোন ভাই কোনদিন ছিল বলে! কখনও শুনিওনি!
কিরীটীর কণ্ঠস্বরে যেন একটা সুস্পষ্ট উত্তেজনার ইঙ্গিত পাই।
কিরীটী যেন সোজা হয়ে বসে।
তীক্ষ্ণ কণ্ঠে প্রশ্ন করে অতঃপর, আর ইউ সিয়োর? আপনি যা বলছেন ঠিক বলছেন?
মিথ্যা বলব কেন?
কিরীটী আবার কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। কি যেন ভাবতে লাগল।
লতিকা দেবী, আপনার তো কালী সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয়। ডোন্ট টক অ্যাবাউট হিম এনি মোর! তিক্ত ঘৃণা যেন লতিকার কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়ে, ঐ নোংরা লোকটা সম্পর্কে কোন আলোচনাই আর আমি করতে চাই না। এখন বুঝতে পারছি, এই ওর প্রাপ্য ছিল। হি হ্যাজ বিন রাইটলি সার্ভড! যে ওকে গলা টিপে মেরেছে সে খুব ভাল কাজ করেছে।
এ আপনি কি বলছেন লতিকা দেবী! মহান্তি বিস্ময়ের সঙ্গে বলে।
ঠিকই বলছি। আমি আগে যদি ঘুণাক্ষরেও জানতাম ঐ মেয়েমানুষটা এখানে এসে হোটেল খুলেছে, আর সেই হোটেলে ও এসে উঠেছে, এখানে আমি কি পা দিতাম? কখনও দিতাম না। কিন্তু কেন—কেন আপনারা আমাকে এখানে জোর করে ধরে নিয়ে এসে এভাবে যন্ত্রণা দিচ্ছেন বলুন তো? কি করেছি আমি আপনাদের—কি করেছি!
লতিকা গুঁই শেষ পর্যন্ত যেন ভেঙে গুড়িয়ে গেল। কান্নায় একেবারে ভেঙে পড়ল।
কিরীটী যেন অত্যন্ত ব্ৰিত বোধ করে, বলে, I am really sorry-অত্যন্ত দুঃখিত আপনাকে এভাবে cross করবার জন্য, কিন্তু জানবেন একান্ত অনন্যোপায় হয়েই আপনাকে বিরক্ত করছি।
মাথা নীচু করে বসে থাকে লতিকা গুঁই। এবং বুঝতে পারি, প্রাণপণে উদগত অশ্রুকে দমন করবার চেষ্টা করছে।
লতিকা দেবী, আর দুটি প্রশ্ন আমার আছে—
বলুন? ধীরে ধীরে আবার মাথা তুলল লতিকা গুঁই।
সত্যি সত্যিই কি আপনি সেদিন ট্রাঙ্ক কলে কালী সরকারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন?
লতিকা গুঁই একেবারে চুপ। যেন পাথর।
কি, চুপ করে রইলেন কেন, বলুন?
আমি—
আপনাদের পরস্পরের মধ্যে সেদিন অন্ততঃ ট্রাঙ্ক কলে কোন কথাই হয়নি আমি জানতে পেরেছি।
লতিকা পূর্ববৎ চুপ।
আর একটা প্রশ্ন—আপনি যে পুরীতে আসছেন কালী সরকার কি জানত?
এবারেও কোন সাড়া নেই শব্দ নেই লতিকার দিক থেকে।
কিরীটী অতঃপর কিছুক্ষণ লতিকার দিকে চেয়ে থেকে শান্ত কণ্ঠে বলে, আপনাকে আর আমরা ধরে রাখব না। আপনি যেতে পারেন। তবে অনুগ্রহ করে যদি অন্ততঃ আজকের রাতটা যে হোটেলে আপনি ছিলেন সেই হোটেলে থাকেন-কাল যেখানে আপনি যেতে চাইবেন, আমাদের লোক গিয়ে আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।
জলে ভেজা দৃষ্টি তুলে তাকাল লতিকা গুঁই কিরীটীর মুখের দিকে, কিন্তু–
ভয় নেই আপনার, কেউ আপনার গায়ে যাতে এতটুকু আঁচড় না কাটতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা করব।
কিন্তু আপনি–
আমি জানি লতিকা দেবী, কে আপনাকে সেরাত্রে প্রাণের ভয় দেখিয়েছিল।
আ-আপনি জানেন?
জানি—কিন্তু আর দেরি করবেন না। যান আপনি হোটেলে।
লতিকা গুঁই ধীরে ধীরে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
১১. গাত্রোত্থান করব মহান্তি সাহেব
কিরীটী বললে, এবারে আমরাও গাত্রোত্থান করব মহান্তি সাহেব। কিন্তু আজ রাত্রে আপনাকে একটু প্রস্তুত থাকতে হবে।
প্রস্তুত থাকতে হবে!
হ্যাঁ।
কি ব্যাপারে?
লতিকা গুঁইয়ের ভীতি বা আশঙ্কাটা মিথ্যা নয়। এবং আমার অনুমান যদি মিথ্যা না হয় তো নিশ্চয়ই হত্যাকারী তার ওপরে একটা অ্যাটেম্পট নেবে।
সত্যি তাই মনে করেন আপনি?
হ্যাঁ।
কিন্তু কেন?
আমার মনে হচ্ছে যেহেতু উনি হত্যাকারীর একটা পরিচয় জানেন—যেটা আমাদের কাছে ভাঙলেন না, জানি না বলে গোপন করে গেলেন, সেটা সর্বসমক্ষে প্রকাশ হয়ে পড়ুক এটা হত্যাকারী নিশ্চয়ই চায় না।