তা জানবে না কেন—তবে সে ভালবাসাটা তার ছিল একমাত্র অঙ্কশাস্ত্রের প্রতি।
আচ্ছা পুরীতে এর আগে কখনো তিনি এসেছেন বলে আপনি কিছু জানেন?
জানি না।
০৬. কিরীটী আবার জিজ্ঞাসা করে
কিরীটী আবার জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলছিলেন না, আপনার সঙ্গে গতকাল বিকেলে কালীসরকারের ফোনে কথাবার্তা হয়েছিল?
হ্যাঁ, বললাম তো—
তার সঙ্গে আপনার কি কথা হয়েছিল লতিকা দেবী?
সঙ্গে সঙ্গে লতিকা গুঁইয়ের ভ্রূ দুটো কুঁচকে ওঠে, সে বলে, কেন বলুন তো? আপনার তা দিয়ে কি দরকার?
প্রয়োজন আছে বলেই উনি কথাটা জিজ্ঞাসা করছেন মিসেস গুঁই। জবাব দিল এবারে মহান্তিই।
কোন দরকারই থাকতে পারে না ওঁর সেকথায়। তাছাড়া সে আমাদের নিজস্ব প্রাইভেট কথা। সে-সব ওঁকে বলতে যাবই বা কেন, আর উনিই বা কোন যুক্তিতে শুনতে চান? কণ্ঠস্বরে এবং বলবার ভঙ্গিতে লতিকা গুঁইয়ের রীতিমত বিরক্তি।
বেশ বলবেন না। কিন্তু আপনি পুরীতে এসেছেন কেন জানতে পারি কি? কিরীটী আবার প্রশ্ন করে।
আপনারা কি জন্যে এসেছেন এখানে? সবাই কি জন্যে আসে পুরীতে? আমিও সেইজন্যই। এসেছি। কিন্তু জিজ্ঞাসা করতে পারি কি, এসব প্রশ্ন আমাকে করছেন কেন আপনারা?
জবাব দিলেন এবারে মহান্তিই, প্রশ্নগুলো করার কারণ হচ্ছে কালী সরকারকে কেউ হত্যা করেছে। হি ত্যাজ বিন ব্রটালি মাড়ারড়।
কী-কী বললেন! তাঁকে ব্রুটালি হত্যা করা হয়েছে।
হ্যাঁ, মিস গুঁই। তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি বা তিনি আত্মহত্যাও করেননি-হি হ্যাজ বিন মার্ডারড়। মহান্তি আবার বলে আস্তে আস্তে, পরিষ্কার ভাবে।
কিন্তু হোয়াই–কেন তাকে হত্যা করবে কেউ-কেন?
তা জানি না—তবে যা ফ্যাক্টস্ তাই বললাম। মহান্তি আবার বলে, কিন্তু আপনি মিঃ সরকারের সঙ্গে যখন এত পরিচিত, তখন এখানে এসে এই হোটেলে না উঠে অন্য হোটেলে উঠতে গেলেন কেন?
লতিকা মহান্তির ওই প্রশ্নে একবার অদূরে দণ্ডায়মান হরডন বিশ্বাসের দিকে তাকাল, তারপর বললে, এই হোটেলটা আমার একটুও পছন্দ হয় না।
কেন? হোটেলটা নতুন হলেও বেশ সুনাম হয়েছে ইতিমধ্যে!
হোক, বাট আই হেট দ্যাট উওম্যান। আমি ঐ স্ত্রীলোকটিকে ঘৃণা করি।
কোন্ স্ত্রীলোকটি? কার কথা বলছেন? কাকে ঘৃণা করেন আপনি? কিরীটীই এবারে প্রশ্ন করে।
দ্যাট রেণুকা বিশ্বাস! এই হারাধন বিশ্বাসের স্ত্রীকে।
কেন ভদ্রমহিলা তো—
থামুন। ভদ্রমহিলা! সি ইজ এ ভাইপার।
আপনি তাহলে মিসেস বিশ্বাসকে চেনেন লতিকা দেবী?
চিনি না আবার–হাড়ে হাড়ে চিনি!
কতদিনের জানাশোনা আপনাদের?
তা দিয়ে আপনার প্রয়োজনটা কি শুনি? আমি চললাম। বলেই অতর্কিতে লতিকা গুঁই যেন সমস্ত কিছুর উপরে যবনিকাপাত ঘটিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
আমরা সবাই ঘরের মধ্যে স্তম্ভিত হতভম্ব।
কিরীটীই প্রথমে কথা বলে, মিঃ মহান্তি, আপনি চট করে নীচে যান, সঙ্গে যে প্লেন ড্রেস কনস্টেবল আছে তাকে বলে আসুন-টু কিপ অ্যান আই—ওঁর উপরে যেন দৃষ্টি রাখে।
মিঃ মহাতি তাড়াতাড়ি নীচে চলে গেল।
কিরীটী এবারে হরডন বিশ্বাসের দিকে তাকিয়ে বলে, আপনারা ওঁকে চেনেন মিঃ বিশ্বাস?
হ্যাঁ। মৃদু কণ্ঠে জবাব দেয় হরডন বিশ্বাস।
আপনাদের কতদিনের পরিচয়?
আমার সঙ্গে ঠিক পরিচয় নেই মিঃ রায়, পরিচয় আমার স্ত্রীর সঙ্গে-মানে যে স্কুলে লতিকা টিচারি করে সেই স্কুলেই আমার স্ত্রী রেণুকা একসময় বছরখানেক চাকরি করেছিল। সেই সময় ওদের পরস্পরের পরিচয়।
লতিকা দেবী তাহলে একজন স্কুল-টিচার?
হ্যাঁ।
কোন স্কুলের?
জগমোহিনী সরকার গার্লস হাই স্কুল, বৌবাজারে।
স্কুলটার সঙ্গে কি কালী সরকারের কোন সম্পর্ক—
স্কুলটা তো ওঁর মার নামেই ছিল, আর কালী সরকার তো সেই স্কুলের সেক্রেটারি।
আই সি! তাহলে দেখছি আপনি ও আপনার স্ত্রী কালী সরকারকে বেশ ভাল ভাবেই চিনতেন?
হ্যাঁ–মানে—
কিন্তু আপনার স্ত্রী—কিরীটী ওর মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, বলছিলেন আপনারা নাকি কালী সরকারকে আদৌ জানতেন না।
সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয় হরডন বিশ্বাস, ঠিক, ঠিক বলেছে তো রেণুকা—ঠিকই বলেছে–
ঠিকই বলেছেন?
হ্যাঁ-মানে এখানেই তো এবারে পরিচয় আমাদের সঙ্গে ওঁর—
তাই যদি হবে তো তার জীবনের অত কথা জানলেন কি করে আপনি?
বুঝলেন না—ভদ্রলোক খুব মিশুঁকে ছিলেন তো! দুজনে আমাদের সন্ধ্যার পর খুব গল্প হত। গল্পে-গল্পেই সব বলতেন—বলেছেনও–
মিঃ বিশ্বাস!
বলুন?
আমি যদি বলি আপনি সত্যকে গোপন করবার চেষ্টা করছেন?
না, না—সে কি, তা কেন—তা কেন–
হ্যাঁ, আপনি বলছেন আপনি ও মিঃ সরকার প্রত্যহ সন্ধ্যার সময় গল্প করতেন অথচ আপনার স্ত্রী বলে গেলেন—তিনি কারও সঙ্গে বড় একটা মিশতেনই না। তাছাড়া মাত্র কদিন তো এসেছিলেন তিনি, এর মধ্যেই এত ঘনিষ্ঠতা আপনাদের হওয়াটাও কি একটু অস্বাভাবিক নয় যে তার জীবনের গোপন কথা পর্যন্ত আপনাকে বলে ফেলবেন!
না, মানে—
থাক, বুঝতে পেরেছি। আপনাকে আর কিছু বলতে হবে না। কিরীটী বাধা দেয়।
হরডন বিশ্বাস যেন একটু ব্রিত হয়েই অতঃপর চুপ করে থাকে।
কিরীটী একটু থেমে আবার প্রশ্ন শুরু করে পূর্বের মত হরডন বিশ্বাসকে, আচ্ছা মিঃ বিশ্বাস, আপনি যে বললেন আপনার স্ত্রী জগমোহিনী স্কুলের টিচার ছিলেন, সেটা কবে-কতদিন আগে?
আমাদের বিয়ের আগে।
বিয়ের আগে—মানে কতদিন আপনাদের বিয়ে হয়েছে?