পাশেই দাঁড়ানো অনামিকার দিকে তাকালেন এসিজি : ‘মা-মণি, তুমি আমার মেয়ের মতো। একটা কথা তোমাকে বলি। এই সর্বনাশা লোকটার খপ্পরে তুমি পোড়ো না। এই লোকটা রত্নাবলী মুখোপাধ্যায়কে শেষ করেছে, দেবারতি মানিকে শেষ করেছে—এরপর কার পালা কে জানে! আইনের খাতায় এদের শায়েস্তা করার কোনও ব্যবস্থা নেই। কারণ, কোনও প্রমাণ নেই আমাদের হাতে। তাই তোমাকে সাবধান করলাম।’
সঙ্গে-সঙ্গে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেল।
হাতের ফাইল নামিয়ে রেখে ভারি পায়ে রঞ্জন দেবনাথের সামনে এসে দাঁড়াল রঘুপতি। তারপর ঘরের সবাইকে চমকে দিয়ে বিরাশি সিক্কার এক চড় কষিয়ে দিল রঞ্জনের বাঁ-গালে।
রঞ্জনের মুখটা এক ঝটকায় ঘুরে গেল। ও চিৎকার করে গালাগালি দিল রঘুপতিকে।
রঘুপতি যাদব চিবিয়ে-চিবিয়ে বলল, ‘রাইটার রঞ্জনকো গুসসা কিঁউ আতা হ্যায়?’ এবং সঙ্গে-সঙ্গে চুলের মুঠি ধরে এক ঘুষি বসিয়ে দিল ওর মুখে। তারপর টান মেরে ওকে পেড়ে ফেলল মেঝেতে।
‘কী হচ্ছে, রঘুপতি!’ এসিজি চিৎকার করে উঠলেন, ‘তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে! ইউ আর ব্রেকিং দ্য ল!’
রঘুপতি তখন মেঝেতে পড়ে যাওয়া রঞ্জন দেবনাথকে যথেচ্ছ লাথি মারছিল। রঞ্জনের গোঙানির শব্দ শোনা যাচ্ছিল বারবার।
একসময় মারধোর থামিয়ে হাঁফাতে-হাঁফাতে রঘুপতি বলল, ‘একটু-আধটু ব্রেক না করলে সে আবার কিসের কানুন, স্যার। আর তো চান্স পাব না, তাই এখনই এই কামিনাকে থোড়াসা সবক শিখিয়ে দিলাম।’
অশোকচন্দ্র হাত ধরে টেনে নিলেন রঘুপতিকে। তারপর হাঁটা দিলেন দরজার দিকে। কনস্টেবল দুজনও ওঁদের অনুসরণ করল।
করিডর ধরে ওঁরা প্রায় লিফটের দরজার কাছে চলে এসেছেন, এমন সময় পিছন থেকে ডেকে উঠেছেন রূপেন মজুমদার। ওঁরা থামতেই রূপেন দ্রুত পা ফেলে কাছে চলে এসেছেন। ওঁর হাতে দুটো বই—সেই ‘ডাকিনীর হাতছানি’।
একটা করে বই রঘুপতি যাদব আর অশোকচন্দ্র গুপ্তকে দিয়ে রূপেন মজুমদার হেসে বললেন, ‘পড়ে দেখবেন, একেবারে ওরিজিন্যাল। অন্য রাইটারদের মতো ”সাহেব বলিয়াছেন” এরকম কোনও ব্যাপার নেই।’
বই হাতে নিয়ে লিফটে করে নামতে-নামতে এসিজি ভাবলেন, মানুষ সত্যি কতরকম হয়! মানুষ তাঁকে সবসময়ই অবাক করে—রংবেরঙের পাখির মতো।
রঘুপতি যাদব হাতঘড়িতে চোখ রাখল : রাত দশটা বেজে গেছে।