দেন, তাকে সংশোধন না করেন; আপনার বোন যদি বেপর্দা ঘোরাফেরা করে, তাকে যদি আপনি পরিবারের কর্তা হওয়া সত্ত্বেও সংশোধন না করেন; আপনার
স্ত্রী যদি তার মাহরাম নয় এমন পুরুষদের সাথে মেলামেশা করে, বেপর্দা তাদের সামনে যায়, কথাবার্তা বলে এবং তাকেও যদি আপনি সতর্ক না করেন, তাহলে আপনাকে বলা হবে দাইয়ুস। একজন দাইয়ুসের সবচেয়ে বড় শাস্তি হচ্ছে এই সে জান্নাতের খুশবু পর্যন্ত পাবে না, অথচ জান্নাতের খুশবু চল্লিশ হাজার বছরের দূরত্বে থাকলেও পাওয়া যায়![10] চল্লিশ হাজার বছরের দূরত্বে থাকলেও যার সৌরভ নাকে এসে লাগবে, দাইয়ুস ব্যক্তির নাকে সেই সৌরভের কণামাত্রও যখন পৌঁছাবে না, তখন ভাবুন তাকে জান্নাতের সীমানা থেকে কতখানি দূরে রাখা হবে!
দাইয়ুস ব্যক্তির আরেকটা চরম শাস্তি হচ্ছে–কিয়ামতের দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তার দিকে তাকাবেন-ই না।[11] সেদিন এমন অনেক গুনাহগার থাকবে, যাদের দিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁর রহমতের দৃষ্টি দেবেন এবং তাদের ক্ষমা করে দেবেন; কিন্তু দাইয়ুস, যে তার অধীনস্থ নারীদের পর্দার ব্যাপারে বেখেয়াল ছিলো, যে তাদের বেপর্দা চলাফেরায় কোনো সমস্যা দেখতো না, তার দিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাকাবেন পর্যন্ত না! তার রব তার দিকে তাকাবেন না–একজন মুসলিমের জন্য এর চাইতে বড় শাস্তি আর কী হতে পারে!
আপনি নিজ হাতে গুনাহ কামাচ্ছেন না, কিন্তু আপনার আমলনামায় গুনাহ লেখা হচ্ছে কেবল আপনার অধীনস্থ নারীকুলের বেপর্দা চলাফেরার কারণে। আপনার মনে হচ্ছে আপনি দোষ করছেন না, কিন্তু আপনার দোষ হচ্ছে এই–আপনি পরিবারের প্রধান অভিভাবক হওয়ার পরেও এহেন চলাফেরার জন্য তাদের সাবধান করেননি; বরং তাদের এমন চলাফেরায় আপনি অনুমতি, মৌন সম্মতি ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন–
যারা চায় যে মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। বস্তুত আল্লাহ জানেন আর তোমরা জানো না।[12]
পর্দা হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দেওয়া ফরয একটা বিধান। ফরযের আবশ্যিকতা এমন যে–এটা অক্সিজেন গ্রহণের মতোই। অক্সিজেন গ্রহণ না করলে যেভাবে আমাদের দেহের মৃত্যু ঘটে, তেমনি আল্লাহর নাযিলকৃত ফরয বিধান ত্যাগ করলে মৃত্যু হয় আমাদের অন্তরের। আর মৃত অন্তরে শয়তান গড়ে তোলে তার শয়তানির ইমারত।
যুগের জাহিলিয়াত এমন অবস্থায় পৌঁছেছে–এখানে পর্দা মানাটাই এখন নতুন জিনিস, পর্দা না করাটাই চিরাচরিত চলে আসা নিয়ম। পর্দা করলে, পর্দা মানলে আপনার চারপাশ থেকে মানুষ বড় বড় চোখ করে তাকাবে যেন আপনি বেশ অদ্ভুত ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী, ভুল করে এই তল্লাটে নেমে পড়েছেন! তাদের সমালোচনাকে, অদ্ভুত চাহনিকে পাত্তা দেওয়ার কোনো দরকার নেই। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গুরাবাদের জন্য সুসংবাদ দিয়ে রেখেছেন।[14] গুরাবা হচ্ছে তারাই, যারা ফিতনার সময়ে সঠিক ইসলামের ওপর দাঁত কামড়ে পড়ে থাকবে। গুরাবার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে অপরিচিত। আপনি যখন ইসলামের বিধি-বিধান নিজের জীবনে প্রয়োগ করা শুরু করবেন, আপনার চারপাশের লোকজনের কাছে তা বড্ড অপরিচিত, বড্ড বেখাপ্পা আর বেঢপ লাগবে। বিভ্রান্ত হবেন না। গুরাবা হিশেবে আপনার জন্য সুসংবাদ! তাদের চোখে হোক না নতুন, আমরা তবে গাহি
———
[1] দ্রষ্টব্য–সুরা কাসাস, আয়াত : ২৩-২৪
[2] সুরা কাসাস, আয়াত : ২৫
[3] সুরা মারইয়াম, আয়াত : ১৮
[4] জামি তিরমিযি : ২৭৭৮; সুনানু আবি দাউদ : ৪১১২; মুসনাদু আহমাদ : ২৬৫৩৭–হ্যাঁদিসটির সনদ সহিহ
[5] সুরা নুর, আয়াত : ২৭
[7] সুরা নুর, আয়াত : ২৭-২৮
[8] সুরা আহযাব, আয়াত : ৫৩
[9] শুআবুল ঈমান, বাইহাকি : ১০৩১০; আত-তারগিব ওয়াত তারহিব, খণ্ড : ৩; পৃষ্ঠা : ১৪৩-হাদিসটির সনদ সহিহ লিগাইরিহি
[10] সহিহুল বুখারি : ৬৯১৪; মুসনাদু আহমাদ : ৬৭৪৫
[11] সুনানুন নাসায়ি : ২৫৬২-হাদিসটির সনদ হাসান।
[13] সুরা নুর, আয়াত : ১৯
[14] সহিহ মুসলিম : ১৪৫; জামি তিরমিযি : ২৬২৯; সুনানু ইবনি মাজাহ : ৩৯৪৬; মুসনাদু আহমাদ : ৩৭৮৪; মুসান্নাফু ইবনি আবি শাইবা : ৩৪৩৬৬
০৪. পতনের আওয়াজ পাওয়া যায়
এক.
ইসহাক ইবনু রাহওয়াইহ রাহিমাহুল্লাহ খুব চমৎকার একটা ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলের সাথে তার শেষ হজে আমি সফরসঙ্গী ছিলাম। আমরা যখন মদিনার শেষ উপকণ্ঠে এসে পৌঁছাই, তখন আমাদের সামনে এক জরাগ্রস্ত বৃদ্ধ এসে উপস্থিত হলেন। বয়সের ভারে তার চোখের সু-যুগল পর্যন্ত সাদা হয়ে গেছে। বয়স্ক লোকটার সাথে তরুণ ও আধ-বয়স্ক মিলিয়ে আরো অনেকগুলো মানুষ ছিলো এবং তাদের একজন আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘আপনাদের মধ্যে আহমাদ ইবনু হাম্বল কে?’
তখন আমাদের দলে থাকা অন্য লোকেরা হাত উঁচিয়ে আহমাদ ইবনু হাম্বলকে দেখিয়ে দিলো। এরপর, জরাগ্রস্ত ওই বৃদ্ধ লোক, অন্য একজনের সহায়তায় কোনোমতে আহমাদ ইবনু হাম্বলের সামনে এসে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ‘তোমার নাম আহমাদ ইবনু হাম্বল?’
আহমাদ ইবনু হাম্বল বললেন, আমার আম্মা এমনটাই আমার নামকরণ করেছেন।