কহাঁ আসমান কা সিতারা, ঔর কহাঁ——! কোথায় আসমানের তারা আর কোথায় পাছার পাঁচড়া! কোথায় শ্রীবিমল আর কোথায় আমি!
সাহিত্যিক রূপে খ্যাতি জমানো সর্বভূমিতেই সুকঠিন। কঠিনতম গুজরাত মারওয়াড়ে। ঝাড়া দশটি বছর আমি তৎ তৎ অঞ্চলে বসবাস করেছি এবং লক্ষ করেছি ওইসব ভূমিতে সাহিত্যিক নামক বস্তুটি কালোবাজারেও পাওয়া যায় না। অবশ্য শুনে তাক লেগে যাবে ওইসব অঞ্চলে কালোবাজার হেথাকার তুলনায় ঢের ঢের কম। সো কৈসন? উত্তরে সেই উর্দু প্রবাদটি স্মরণ করিয়ে দিই– মহল্লেকি রেণ্ডি মা বরাবর= আপন মহল্লার বেশ্যা মায়ের মতো, অর্থাৎ, ঢলাঢলি করবি তো কর, কিন্তু আপন মহল্লাতে নয়। তাই এদেশের মহাজনরা উভয়ার্থে– আপন আপন জন্মভূমিকে কর্মভূমিতে পরিণত করেননি। ঐসি গতি সনসারমে। তা সে যাক। বলছিলুম কী, ওদেশে সাহিত্যিক বস্তুটি ডুমুরের ঠ্যাং। যদিস্যাৎ সেই ব্রহ্মাণ্ডদুর্লভ প্রাণীটি এদেশে দেখা দেয় তবে তাকে কারও সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবার সময় বলে সাহিত্যিক ছে অর্থাৎ ইনি সাহিত্যিক। অন্য পক্ষ তখন মনে মনে বলছে বেচারা! না জানি, বউ বাচ্চা ক মাস ধরে অনাহারে আছে! এপক্ষ তখন গম্ভীরতম কণ্ঠে সুবে অহমদাবাদ-গুজরাত-সৌরাষ্ট্র কচ্ছকে বিস্ময়ে নির্বাক করে দিয়ে বলে গের বাঁধছে! অর্থাৎ ঘর বেঁধেছে? কী বললে? কী কইলে? সুঁ ব্যোলা? বরঞ্চ চিংড়ি মাছ হিমালয়ের চুড়োয় চড়ে আপস-চূড়া-প্রবাসিনী চিংড়িনীকে ডেকে তার সঙ্গে রসালাপ করতে পারে–সরু গলির এপার ওপার যেরকম নিত্যি নিত্যি হয় কিন্তু সাহিত্যিক আপন কামানো কড়ি দিয়ে বাড়ি বেঁধেছে! জয় প্রভু পরস্নাথ!
বিমলবাবু কড়ি দিয়ে কী কী কিনেছেন বলেননি। দাদখানি বেল মশুরির তেল থেকে শুরু করে নিশ্চয়ই গের= ঘর = বাড়ি!
এদিকে দেখুন, পাঠান মোগল ইংরেজকে তিনি কীরকম গুলে খেয়েছেন শ্রীমিত্র হয়তো বঙ্কিমচন্দ্রকে হারাতে পারেননি– কে-ই বা পারে– কিন্তু তাঁরা ইতিহাস চর্চা বঙ্কিমের চেয়ে কম নয়। সে যুগের তুলনায় আজ লাইব্রেরিতে ফারসি ইতিহাস ঢের ঢের বেশি। এবং সব চেয়ে বড় কথা, অর্বাচীনরা যখন ভেবেছিল, ঐতিহাসিক উপন্যাসের জমানা খতম, সাত হাত মিট্টিকে নিচে তখন শ্রীবিমল দেখিয়ে দিলেন, কোনও বিষয়বস্তু কোনও যুগ, কোনও আঁর = genre-ই চিরতরে লোপ পায় না। ঐতিহাসিক উপন্যাস আজও লেখা যায়– ঈশপের গল্প পাঁচ হাজার বছর পরেও লেখা চলবে, কলমের জোর থাকলে।
ওই কলমের জোরটাই আমাকে নিধন করেছে, সহযোগী মশাই, ওই পোড়া কলমের জোর।
নইলে, স্মরণ করুন, কুবুদ্ধির তাড়নায় একদা আপনি স্বয়ং পঞ্চতন্ত্র ছাপাননি? মহাত্মা বিষ্ণুশর্মার জার পৃথিবীর কোন দেশে অপরিচিত? এই শৰ্মাই বা তাকে গুরু বলে স্বীকার করবে না কেন? কিন্তু আপনার-আমার জোড়া কপাল–দৈবের লিখন, আহা, খাইতে সাধ্য কার– গর্দিশের গেরোতে গেরনে গেরাস করলে।… শুনলুম, বইখানা আপনার হাতছাড়া হয়েছে। তা হলে মৌলা আলির উদ্দেশে ব্রতোপবাস করে, সেখানে আচারাত চতুর্দশ শাক নিবেদন করত চলে যান সোজা কালীঘাটে। সেখানে কালী কেলকেত্তাওয়ালীর পদপঙ্কজে বিবি শিরনি ছড়িয়ে– এর সমূহ বিধি বিধান নব্যস্মৃতিতে পাবেন–ব্রহ্মময়ী মা, ব্ৰজযোগিনী মা স্মরণ করতে করতে বাড়ি ফিরে পুজোপাটার বিশেষ বেশ গরদের ইজের-পাজামা ফের শিকের হাঁড়িতে রাখবেন। কারণ অধুনা তোমার বাহন যেটা, দুই সেই ইঁদুর ব্যাটা–
সোঁদর বনের বড়-মোর মুরশিদ, দক্ষিণ রায়ের ভ্রাতা গাজীপিরের ফিরলো প্রবেশ ছাড়পত্র ইভনিং-জ্যাকেটটির নিকুচি করেছে!
***
কিন্তু এই ওয়াটারলুর সামনেও আমার একটি বক্তব্য আছে।
শ্রীবিমল কখানা বই লিখেছেন আমি জানিনে বলে লজ্জিত। কিন্তু তার প্রত্যেক বই যেন অনার্জ সহ পাস সে তথ্য অজানা নয়। পক্ষান্তরে আমার চোদ্দটি সন্তান আপনাদের প্রদত্ত গ্রেস সত্ত্বেও হারাধনের দশটি ছেলের রাজেন্দ্রসঙ্গমে কপপুর! সবকটা বিলকুল না-পাস।
তাই শ্রীবিমল better কোআলিফাইড!
এই তো আপনার বুদ্ধি!
চৌদ্দ ব্যাঙ্ক যে ডকে তুলেছে সে সন্ধি সুড়ক বেশি জানে, না যে সগৌরবে বেশুমার ব্যাঙ্কের উন্নতি করেছে সে বেশি জানে? কালোবাজার, ট্রিপল একাউন্ট রাখা, ব্যাঙ্কের টাকায় তেজিমন্দি খেলা, ইনকমট্যাক্স দেওয়া দূরের কথা তাদের কাছে রিলিফ রূপে দাদন চাওয়া এসব না করতে পারলে আপনার সদ্য ভরা কালি সাহারা হয়ে যাবে না, আপনার কলম মুষলে পরিণত হয়ে যদুবংশ ধ্বংস করবে না। ঈশ্বর রক্ষতু!
তবু গাঁইগুঁই করছেন? অর্থাৎ, এটা বোঝার মতো এলেমও আপনার পেটে নেই। তা হলে মারি সেখানে বোমা!
এক বিশেষ সম্প্রদায়ের তালেবর ব্যবসায়ী ভাবী জামাতার সঙ্গে ব্যবসাতে বাবাজির তজরুবাহ-অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে মাত্র একটি প্রশ্ন শুধোন। উত্তর শুনে সোল্লাসে বললেন, ওয়াহ্, ওয়াহ্ বেটা জিতে রহো! ঔর ক্যা পঁছু? (আর কী শুধবো!) সাত দফে গণেশ উল্টায়া! কামাল কিয়া, কামাল কিয়া! বহিয়া দামাদ (জামাতা), উদা দামাদ!
এই কামাল্ কিয়া শুনেই কাজী-কবি মুস্তফা কামালের উদ্দেশে গেয়েছিলেন, কামাল। তুনে কামাল কিয়া, ভাই!
আমার নাম মুস্তফা নয়– বঙ্গসন্তান তবু আকছারই আমাকে ওই নামে চিঠি লেখেন, আমিও ওই নামের ধোকার টাটির পিছনে আশ্রয় নিই, পাওনাদারের হুনো খেয়ে