মিত্তিরকে*** বলো, এটা তো সরল। প্রথম করে এল বাখ-এর etc etc… তখন শব্দটা যে Bach, Bache (বাখে) নয় সেইটে বোঝাবার জন্য লিখলুম বাখ-এর। তার পর প্রতিবার বাখ-এর লেখার কী প্রয়োজন? বাখের লেখাতে বাধা কি?
এতসব সরল বস্তু যদি মিত্রাদি মিত্রের মতো সুবুদ্ধিমানরা না বোঝেন তবে লেখা চালু রাখি কোন ভর্সায়?
আজ থাক নারদে**** সঙ্গে ভেট হলে আমার বোহ বেবাহৎ সালাম- তসলিমাৎ জানিয়ো।
শুনতে পেলাম পূর্ব পার্কে প্রতিষ্ঠিত নব Harrow-Eton-এ ফিরোজভজৌ পুরোপাক্কা residential পে প্রবেশ করেছেন দুজনাই test-এ প্রথম হবার পর। তোমার মায়ের দোস্তনীটি বড়ই একা পড়ে গেল। কিন্তু মেয়েটার সর্ববিশ্ব ওই দুটো মর্কটকে নিয়ে।
–Love & blessings
সৈয়দ
[*ছেলেদের জন্যে ডাকটিকিট।
**১৯৬৬-র যুদ্ধের ফলে রাজশাহী থেকে শান্তিনিকেতনে চিঠি বন্ধের জন্যে তা ঘুরে আসতে হয়েছিল জর্মনি হয়ে।
*** মিত্তির- আমর পিসতুতো ভাই, দর্জিপাড়ার অনিল মিত্র।
****যতীন্দ্রকুমার সেন।]
.
(২৮)
০১.
C/o Mrs. R. Ali,
Inspectres of Schools
ফুটকি পাড়া
Po. Ghoramara, Rajshahi
East Pak, Dec. 25th 66
স্নেহের ভদ্র দীপংকর,
অনেক কাল তোমার কোনও খবর নিতে পারিনি।
এ বছরটা আমার আদৌ ভালো কাটেনি। দু দুবার নার্সিং হোমে ঢুকেছি। তবে সিংহের বিবর হতে দিনি সেই হোম-কে যদ্যপি একথা অতীব সত্য যে সেখানে বড় নিশ্চিন্দি কাটিয়েছি। ডাক, ফোন, ভিজিটর তিনই ছিল সৎ বারণ।
এক মাসের বাদে হেথায় এসেছি– ডাক্তারেরই আদেশে।
তোমার মাতর সখী পুত্রদ্বয়সহ সানন্দে দিন কাটাচ্ছেন। তারা উভয়েই থাকে হস্টেলে। রোজার পাঁচ সপ্ত হের ছুটিতে দ্যাশে ফিরেছে। যদিও তাদের residential school (ইটন হ্যাঁরোর হনুকরণে নির্মিত) মাত্র ১৫ মাইল দূরে।
কী জানি কী হয়েছে বোধহয় nerves-এর ব্যাপার একটি হরফ ত লিখতে ইচ্ছে করে না। প্রবন্ধাদি তো ন-সিকে শূকর-গো মাংস। তথাপি যখন আমার-আনা, তোমার-দেওয়া first day cover-গুলো বাবাজি ভজুরামকে দিলুম, সে সোল্লাসে একখানা অত্যুত্তম stamp তোমার তরে দিলে।
বু আলী সিনা, আবু সিনা Advicenna (লাতিনে আভিচেন্না; আভিসেনা উচ্চারণ) ছিলেন অসাধারণ পণ্ডিত বাগদাদে। তিনি তাঁর গ্রন্থে চরক সুশ্রুত ইত্যাদি উত্তমরূপে ব্যবহার Posilcatal- on the foundation of Greek medicine which the Arabs learnt from the Jews. দু শো বচ্ছর আগেও এর বই ইয়োরোপীয় Medical College মাত্রেই পড়ানো হত। গজনির মাহমুদ এবং তার সভাপণ্ডিত অলবিরুনি ছিলেন তাঁর সমসাময়িক।
তোমার মাকে ফিরোজ-ভজুর মার ভালোবাসা দিয়ে, তোমাকে আশীর্বাদ জানাচ্ছি আমরা উভয়ে।
—সৈ. মু. আলী
০২.
বিবর সম্বন্ধে।
বিভারলি নিকলস, মিস মেয়ো ইত্যাদির পলিসি ছিল মার্কিনি খবর-কাগজদের :- Kick up Hell, & Sell!
ভয়ঙ্কর কুৎসিত বীভৎস লেখো, কিংবা অথবা কোনও গাড়লস্য গাড়ল দেশ বা জাতিকে গালাগাল দাও। গাড়ল ক্রিটিকরা ভায়োলেন্টলি রিঅ্যাক্ট করবে, ফলে গাড়লতররা বইটা কিনবে; তোমার দু পোসা হবে। আমি এ পলিসির নিন্দা করিনে, কারণ টাকাই যদি কামাতে হয় তবে সেখানে মরালিটির প্রশ্ন ওঠে না–মেজর বারবারা (বার্নার্ড শ) ও চার্লির মসিয়ো ভের্দু পশ্য। তবে এর ভিটি হতে আমি রাজি নই; তথা এ পলিসির হিস্যেদার হতেও আমার নিতান্ত ব্যক্তিগত আপত্তি আছে। তাই যখন প্রকাশক তারাপুরওলা আমাকে নিকসের বইয়ের তুখোড় উত্তর লেখবার জন্য মোটা টাকা অফার করেছিল আমি রাজি হইনি।
তুমি লিখেছিলে এবং যদি লেখার মধ্যে সার কিছু থাকে তা হলেও সাহিত্যে নোংরা মিডিয়মের প্রয়োজনীয়তা কী? সার্থকতা কী?
ওইখানেই তো মামীর ব্যামো গল্পটা জানো কি? মারাত্মক অশ্লীল but with a point, তবু লিখলুম না।
তা হলে যে কার্যসিদ্ধি হয় না।
এ সুবাদে বলি :
সন্তোষ ঘোষকে একদা আমরা প্রায়-শিষ্যরূপে কাছে পেয়েছিলুম। সেই সময় সে একটা বীভৎস তথা অশ্লীল গল্প লেখে। আমি অবিশ্বাস্য শুদ্ধমাত্র ওর এবং ওই সম্প্রদায়ের পথপ্রদর্শনরূপে লিখি। ওতে খুন ব্যভিচার তাবৎ বাৎ আছে শুধু বোধহয় bestiality নেই। কিন্তু মিডিয়মটি পশ্য।
—আশীর্বাদ জেনো
সৈ. মু. আ
.
টেলিফোন : ৪৮-৩৫৯১
৭২, বকুলবাগান রোড, কলিকাতা-২৫
ডা. শ্রীযুক্ত সৈয়দ মুজতবা আলী
শান্তিনিকেতন
প্রীতিভাজনেষু।
আপনার ১৪।১-এর চিঠি পেয়ে আনন্দিত হলাম। আগামী ১৮ মার্চ আমার ৮০-তম জন্মদিন। আপার শুভেচ্ছা ২ মাস আগে পেয়েছি তা ভালোই, কারণ এর মধ্যে কী ঘটে বলা যায় না।
দৃষ্টি অতি ক্ষীণ, সেজন্যে পড়া খুব কমাতে হয়েছে, কিন্তু আপনার রচনা পেলে চক্ষুপীড়ন করেও পড়ি। আপনার বিচিত্র অভিজ্ঞতা বিচিত্র ভাষায় আপনি আরও লিখুন, এই প্রার্থনা করি।
আমার বয়স এমন ভয়ঙ্কররূপে বেড়ে যাচ্ছে তা সবসময় মনে থাকে না। শতায়ু হবার ইচ্ছা নেই। অহ বা পক্ষাঘাগ্রস্ত হয়ে বেঁচে থাকা জীবন্ত নরকভোগ। এর আগেই যাতে নিষ্কৃতি পাই সেই শুভেচ্ছা করুন।
–আপনার একান্ত অনুরক্ত
রাজশেখর বসু
[এটাই– যতদূর মনে পড়ছে– সৈয়দ মুজতবা আলীর কাছ থেকে পাওয়া শেষ চিঠি।
তবে আগের আরও কিছু ছিল। হারিয়ে ফেলেছি। তার মধ্যে একটাই বিশেষ করে মনে আছে, পুরশুরামের ভূষ পাল গল্প সম্বন্ধে লিখেছিলেন, … আশ্চর্যের বিষয়, তাঁর লেখা সমস্ত গল্পের মধ্যে এই একটিই, এবং একমাত্র একটিই করুণ রসের গল্প কী করে ছিটকে বেরোল। ও রস তিনি আর কখনও আনেননি।…