আমি এখন কিছুদিন চিঠি লেখার পাট তুলে দিচ্ছি। তুমি তোমার মনে প্রশ্নের উদয় হলে টুকে রেখো। দেখা হলে উত্তর দেব। বলা সোজা; লেখা কঠিন। যে কারণে আমি controversy-তে ঢুকি না। Love & bliss!
—আ
[আমার মা হঠাৎ একদিন বলেছিলেন সব রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর আসলে দিনু ঠাকুরের দেওয়া। চমকে গিয়ে এর সত্যতা জানতে চেয়েছিলুম।]
.
(২৪)
C/o Inspectress of Schools
PO. Ghoramara. 22. 10. 64
স্নেহের দীপংকর,
বিজয়ার আলিঙ্গন গ্রহণ কর ও আশীর্বাদ জেনো। তোমার মাসীরও আশীর্বাদ জেনো। ফিরোজ ভজু ব্যাপারটা এখনও কী ঠিক বুঝতে পারেনি। তোমার চিঠি পেলুম। ওরা স্ট্যাম্প নিল।
এ বাড়িটার দশ হাত পরেই বিরাট পদ্মা। পাড়াটা উঁচু নয় বলে শহরের সবকটি প্রতিমা বিসর্জন হয় এখানে, মেলা বসে, তেলেভাজার গন্ধে আমার ঘরটা ম-ম করে। এ বাড়ির বারান্দায় বসে পদ্মার যে দৃশ্য দেখা যায় সেটি দেব-দুর্লভ। এর বর্ণনা আমার পক্ষে দেওয়া অসম্ভব। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও পদ্মাপারে, পদ্মার বুকে বহু বৎসর কাটিয়ে পারেননি। এর এমন একটা bewildering grandeur আছে যেটা মানুষের চৈতন্যকে মোহাচ্ছন্ন করে দেয়। এর সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বলা যায়, শুধু এই বিরাট grandeurটা কিছুতেই impart করা যায় না। আর পারা যায় না, যখন রাতদুপুরে নিরস্ত্র নৈস্তব্ধ্যের মাঝখানে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখবে চাঁদের আলোয় মাখা পদ্মার জল, অনেকদূরের চড়া, তারও অনেক দূরে চরবাসীদের দু একটি ক্ষীণ আলো অন্ধকার রাত্রে সেগুলো তারা না প্রদীপ ঠাহর করা যায় না– এবং তার পর যেন কুয়াশার যবনিকা। দিনের বেলা সেখানে দেখা যায় একটি আসমানি রঙের খেলা– যার নাম india; এপার পাকিস্তান। আর সমস্তটা সামনে বিস্তৃত বিস্তীর্ণ অর্ধচন্দ্রাকার– দুপুররাত্রে সাহারায় যে রকম দেখেছি। কী যে গভীর রহস্য, কেমন যেন আতঙ্কে ভরা। এই রহস্য, এই আতঙ্ক কিছুতেই কলমের ডগার একফোঁটা কালিতে প্রতিবিম্বিত হতে চায় না। গোম্পদ যে-রকম without effort অনন্ত আকাশ বিম্বিত করে, কলমের কালির ফোঁটা তেমনি পারে না কেন?
তুমি তোর পরীক্ষা নিয়ে যেরকম fuss করছ, সেরকম প্রথম গর্ভবতী সন্তান প্রসবের সময়ও করে না। আমার হাসি পায়, তার পরের কথা ভেবে। ধর তুমি 1st class-ই পেলে। তার পর প্রফেসরি পেলে। তার পর যে কোনও কারণ বা কারণ সমন্বয়ে হলে thoroughly disgusted তখন বললে, দুত্তোছাই, কেনই-বা মরতে 1st হলুম। IInd class পেলে এদ্দিনে অন্য কোনও ধান্দায় ডুবে গিয়ে এর চেয়ে ঢের বেশি আরাম পেতুম।
জীবনের big gambling battle-এর সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছ, এই M.Sc. পাসটা যেন one mighty big stake! Alas! It is one of the smallest. হাতের সামনে আপন হাতের বন্ধু মুষ্টি বিরাট হিমালয়কে ঢেকে ফেলে।
আসল বেদনা পরীক্ষা পাশের পর আরম্ভ হয়। এতদিন সামনে ছিল একটা সুনির্দিষ্ট aim– এর পর সামনে বিরাট ব্লাঙ্কো void! ওই সামনের পদ্মাটার মতো। ওপারের নীলাঞ্জন রেখাঁটিও দেখা যায় না। কিংবা তার পরে ঢোকো জাতিলের ভিতর along with millions & millions loossing completely all your indentity! স্কুল-কলেজের সহপাঠীদের ভিতরও যেটুকু individuality ছিল– for good or bad– সে-ও তখন কদুর!
And perhaps it is good so. লাওৎসে বলেছেন, আর পাঁচজনের যেটা নেই সে রকম কোনও বৈশিষ্ট্য যদি তোমার থাকে, তবে তোমার প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য সেটাকে প্রাণপণে লুকিয়ে রাখা। নইলে সবাই মিলে তোমাকে টেনে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে।
আমি বুঝি একটি কথা : a steady income from ancestors আর ঘরের এক কোণে বসে পুতুল সাজিয়ে, খেলনা গড়ে জীবনটা ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া। সেটা পছন্দ না হলে, আর কাড়া কাড়া foreign exchange থাকলে round the world trip-এর কোনও একটা জাহাজে বাকি জীবনের জন্য টিকিট কাটা। A bigger merry-go-round, round the world.
আশা করি এর থেকে খাঁটি তত্ত্বটি বুঝে যাবে।
পরিবারস্থগণকে সেলাম বিজয়ার জানিয়ো।*
–আ
[** এই চিঠির প্রথমাংশ এক অকল্পনীয় কাব্য।
পরের অংশে হঠাৎ প্রখর বাস্তবে এসে তার পর্যালোচনা করেছেন তার আকাশ-ছোঁয়া পণ্ডিত্যের দর্পণে।
এবং সমাপ্তি এমনই anti-climax-এ, যার একমার্থ পরিচয়, Logo- মুজতবা আলী।]
.
(২৫)
45. Quarters, Andrews Palli.
দীনবন্ধু পল্লী। আমি ইংরেজিতে লিখি
Andrews Shire,
বাংলায় দীনবন্ধু বস্তি। এটা ঠিকানায়
লেখবার দরকার নেই। যদি কখনও
আসো তার জন্য। ঠিকানা পূর্বের মতো;
Plain শান্তিনিকেতন।
25.3.65
স্নেহের দীপংকর,
কোনও খবর নেই। বিশ্বজগতের সঙ্গে আমার সম্পর্ক এতই কম যে তোমার শেষ পরীক্ষা কবে হল, তার পর কী হল কিছুই জানিনে। আমাদের common enemy-ও কেউ নেই যে অন্তত দুঃসংবাদটাও জানায়। আর friends সংসারে কম; common friend-এর কথাই ওঠে না। তবু mood-এ থাকলে খবর দিয়ো। পরীক্ষাতে ভালো ফল করে থাকলে ভালো, না করে থাকলে আরও ভালো। কেন, দেখা হলে বুঝিয়ে বলব। এত বড় gamble পৃথিবীতে মাত্র আর একটি আছে। বিয়ে। It is the only gamble which humanity has discovered where both parties can loose.