ভদ্র,
আমার মতো বুড়ো-হাবড়াদের সঙ্গে লেখালেখি করার ওই তো বিপদ। যাই বল না কেন, বুড়ো বলে ওসব জানা কথা।
রাজার প্লটটা জাতক থেকে নেওয়া। কিন্তু ঠাকুর এটাকে অন্যভাবে ব্যবহার করেছেন। রাজা= God, কেউ তাকে দেখতে পায় না। শুধু যে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে নাস্তিকদের নিন্দাবাদ না শুনে– এস্থলে রানি অর্থাৎ ভগবদভক্ত (খ্রিস্টও বলেছেন বোধহয় মোটামুটি Blessed are those who donot see, but believe!) তার কাছে রাজা = আল্লা অন্ধকারে হৃদয়ে হৃদয়ে, হৃদয়ের অন্তস্তলে দেখা দেন। আরও মেলা রূপক আছে, আমার মনে নেই। আসলে acting-এর সময় double meaning, অর্থাৎ face meaning and allegorical meaning দুটো সকলে বের করতে পারেন না। অলঙ্কারশাস্ত্র বলেন, নাট্য এমন হবে যে কেউ যদি allegory-টা আদৌ ধরতে না পারে, তার কাছেও যেন নাট্যটি charming মনে হয়। আবার ভক্তজন হয়তো শুধু allegory-টাই দেখল– পার্থিব দিকটা আদৌ লক্ষ করল না তার কাছেও যেন নাট্যটি equall charming মনে হয়। এবং প্রকৃত গুণীজন দুটোই চাখবে। তবে সার্থক acting very much, therefore, depends on how the actors express, pronounce their speech. colats 1607, avarage, normal সুবুদ্ধিমান যখন গোপন অর্থের কিছুটা আমেজ পেয়ে হাতড়ে মরেছ, তখন বুঝতে হবে ড্রামাটি দুই অর্থের মাঝখানে লিলিক করে মাঠে মারা গ্যাছেন। তুমি যদি allegory-র কোনও গন্ধটুকুন পর্যন্ত না পেয়ে শুধু face value-টুকুতেই আনন্দ পেয়ে বাড়ি ফিরতে, তবু বলতুম নাট্যটি সার্থক অভিনীত হয়েছে।
কীর্তনের বেলাও হুবহু তাই। রাধার বিরহ-বেদনা যদি যুবক-যুবতীর প্রেম অর্থে নাও তবে কিসটি আপত্তি নেই। যদি বল, আহা, যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি কদম্ববন-বিহারিণী বিরহিনী শ্রীমতাঁকে– বিলকুল দুরস্ত। পক্ষান্তরে যদি বল, এমন প্রেম, এমন ব্যাকুল্যা, এমন একাগ্রতা তো মানুষের তরে মানুষের হতে পারে না– এ তো আমার কাছে অন্য ভুবনের রূপরসগন্ধস্পর্শ এনে দিচ্ছে– সে-ও অত্যুত্তম। আর দুটোই যদি পাও, simultenously তবে তুমি সুরসিক,– কীর্তনিয়া সার্থক। এ দুনিয়াটাতে এখন আর কীর্তনিয়া নেই। ব্যাটারা শুধু আখর সারে, টেকনিকল skill দেখায়, মৃদঙ্গের খচখচানি শোনায়। আমি কেত্তন শুনতে যাইনে। ওই একটা জিনিস বড়ই miss করি।
আ—
[ঠাকুর্দা ভুলে লিখেছেন। বলতে চেয়েছেন দাদু (আসলে আমার মায়ের মাতামহ, রাজশেখর বসু)।]
.
(২৩)
১০/৮/৬৪
স্নেহাস্পদেষু,
তোমার insured letters এখনও পাইনি। তবে এই ভেজাল insurance-এর অপর একটা দোষ, দেরিতে আসে। তবে tempo ওদের bookpost-এর পিছনে। Bearing এবং Express দিলে কী হয়, জানিনে। তবে সেটা হবে ছাগলকে insure করা হাতির দাম দিয়ে। ভুল বললুম, সেটা হবে, ছাগল হারিয়ে গেলে হাতি মানত করা।
Bearing ছিঁড়ে ফেলা গ্রামাঞ্চলে প্রযোজ্য। তিন মাইল ঠেঙিয়ে ওটার জন্য কয়েক পয়সা রোজগার করতে পিয়ন নারাজ। সচরাচর তারা হাটবারে ওই গায়ের কাউকে (paid) চিঠিটা দিয়ে দেয়। সে লোক ও bearing-এর পয়সা দিয়ে নেবে কেন?
Express চিঠির বেলাও তাই। বিশেষ করে কলকাতায়। গোটা দশেক চিঠি নিয়ে পিয়ন বেরুল। একটা পড়েছে ধরো একটু বেশি দূরে। সেটা সে ছিঁড়ে ফেলে। Ordinary letter-এর লো তা হয় না। কারণ তার beat-এর শেষ পর্যন্ত দু একখানা চিঠি থাকেই। তাই আমার কলকাতার বন্ধুরা পই পই করে বলেছেন, express যেন না লিখি। যদি লিখি তবে সঙ্গে যেন আরেকখানা plain লিখি। যেরকম Voltaire বলেছিলেন, মন্ত্রোচ্চারণ করে একপাল ভেড়া মারা যায় বইকি! তবে to make sure, আগে ঠেসে arsenic খাইয়ে দেওয়াই ভালো।
তোমার বুদ্ধি ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। Disorderliness সইতে পারার ক্ষমতাকে good news বলে –এটা একটা general principal. আমার চিঠি disorderly ছিল বলে বলিনি।
A propos আমার চিঠি, সেই general principal-টা বাতলে ছিলুম।
তোমার মাতা 100% না হলেও 99% wrong!* আমি নিজে দেহলী বাড়ির নিচের পাশের নূতন বাড়িতে ঝাড়া একটি বছর ছিলুম। রাত্রের অন্ধকারে কবিকে গুনগুন করে গান গাইতে গাইছে (সুর এবং কথা একসঙ্গে) এবং মাঝে মাঝে থেমে থেমে গিয়ে সেটা ওই অন্ধকারেই কাগজে টুকে নিতে (এটা inference–কারণ অন্ধকারে তার গলা শুনতুম, কিছু দেখা যেত না) দেখেছি; rather শুনেছি। পরের দিন সকালেই (সম্ভব না হলে বিকেলে) তিনি দিনুবাবু সঙ্গে সেইটি গুনগুন করে গেয়ে তাঁকে শিখিয়ে দিতেন। রবীন্দ্রনাথের ডজন ডজন গান একই সুরে আছে। বিশেষত বাউলে। কিন্তু প্রায় প্রতি গানেই কিছু না কিছু আচমকা twist থাকে; কিংবা তালে আড়ি থাকে (আপাত দৃষ্টিতে বেতালা– যার জন্য তার বদনাম, তিনি বেতালা) তাই দিনুবাবুকে সেটা রপ্ত করতে হত। দিনুবাবু না থাকলে প্রাচীন কালে অজিত চক্রবর্তী। একদিন তিনিও ছিলেন না, তখন বারো বছরের সুধীরঞ্জন দাশ (তস্য পুস্তক পশ্য)। শুনেছি very very rarely indeed, দিনুবাবু change in a very minor point suggest করতেন। ব্যস। দিনুবাবু এখানে আসেন about 1907. তার পূর্বে কে ছিল? জ্যোতিবাবু ২০/২৫ বৎসর রবিকে চরে খা বলে ছুটি দিলেন। মধ্যিখানে, কে, কারা? বিশেষত এই ভারতের tradition যে কথা রচে সে-ই সুর দেয়। রামপ্রসাদ, অতুলপ্রসাদ, জ্যোতিঠাকুর, নজরুল ইসলাম, লালন ফকির, হাসন রাজা, সত্যেন ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রনাথ, রজনীকান্ত, ব্রাহ্মসঙ্গীতে গণ্ডাগণ্ডায় কত বলব? মাথা ঘামিয়েও exception খুঁজে পাচ্ছিনে। এবং যেখানে অনন্য সুর দিয়েছে গোটা দুত্তিন by পঙ্কজ, শান্তি ঘোষ, পূর্ব যুগে জ্যোতিঠাকুর। সে তো পষ্টই mention করা আছে। জানো, তেজেশচন্দ্র সেন নামক একটি লোক এখানে ৫০ বৎসর বাস করেন। এর নাম কেউ করে না। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে শেষ রোগশয্যায় ইনিই তার সেবা এখানে করতেন। আমি অন্তত হলপ খেতে রাজি আছি, রবীন্দ্রনাথ তাঁর সেবা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন। যদিও কেউ তার নাম করে না। ইনিই আমার মতে রবীন্দ্রনাথকে সবচেয়ে বেশি অন্তরঙ্গভাবে চিনতেন। কখনও কাছে যেতেন না, না ডেকে পাঠালে। তাই নিয়ে কবি বিস্তর অভিমান করেছেন। কিন্তু তিনি ছিলেন তাঁর প্রতিজ্ঞায় অটল অচল। আমার সামনে বছর চারেক পূর্বে, কে যেন এই প্রশ্নটি (!) তোলে। তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে যা বলেন, তার সঙ্গে আমার বক্তব্য মেলে। আমি supplementary শুধোই, তিনি কি কখনও দিনুবাবুর কোনও suggestion accept করেন নি? পরিষ্কার বললেন, না। উনি করেননি। দিনুবাবুর চলে যাওয়ার পর এখানে ভূতের নৃত্য আরম্ভ হয়। যাদের হাতে দিনুবাবুর কাজ পড়ে তারা ছিলেন most thoroughly incompetent। ওই finer twistগুলো miss করে যেতেন। যার কথা পূর্বে বলেছি। তার পর আরম্ভ হয় regular জোচ্চুরি। শার্সদেব জানে।