ধন্য, ধন্য যিনি এই শব্দটি বাঙলায় চালিয়েছেন। পাড়ার মস্তানদের কোনও গুণ এতে অবহেলিত হয়নি, বড় তামাকের কলকে পেয়েছে। ভূমা খন্বিদং ইত্যাদি উট উঁট শব্দ এঁয়ার কাছেই আসতে পারে না।
তারই দোহাই কেড়ে আপনাকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি :
আমাকে পত্রপাঠ সহযোগী অসহযোগী– অনারারি হলেও কণামাত্র আপত্তি নেই, কিন্তু খবরদার, সেস্থলে সেটা যেন পারমেনেন্ট হয়– কোনও একটা সম্পাদক যদি না করেন তবে ওই কথাই রইল! আপনার টুব লম্পোটির প্রতি আমার কিঞ্চিত্মাত্র জুগুপ্সা নেই। আমি দেখে নেব, আপনি কী করে যজমান বাড়িতে আতপ চাল আর কাঁচকলা পান– যার ওপরে ভরোসা করকে কারওয়ার বৈঠিয়েছেন অর্থাৎ কালি ও কলম যোগাড় করেছেন। পয়সায় তিনটে বাগচীর কালি বড়ি আর খাগড়ার কলম তো।
তা বেশ করেছেন।
কিন্তু মনে রাখবেন, ওই কালি ও কলমের হাফ হিস্যেদার আমি। কালি না হয় আশু-প্রত্যাশিত মা কালীর চর্মনির্যাস হতে পারে কিন্তু কলম* শব্দটি আরবি, যাবনিক। আরব নবী হজরত ছিলেন সম্পূর্ণ নিরক্ষর। তাই বোধহয় আল্লাপাক কুরান শরিফে বাণী দিয়েছেন তাঁকে (আল্লাকে) স্মরণ করে আবৃত্তি কর, তিনি কলমের মাধ্যমে জ্ঞান দান করেছেন।… আপনার পত্রিকার নামকরণের ওতে কলমকে স্মরণ করে আপনি আল্লা নির্দেশিত পথেই যাত্রারম্ভ করেছেন।
[* যদ্যপি কেউ কেউ বলেন ওটা নাকি মূলে গ্রিক।]
এ দৃশ্য দেখে গুণীজ্ঞানীরা বিস্মিত হবেন না। ভবিষ্য পুরাণের প্রক্ষিপ্তাংশে নাকি স্পষ্টাক্ষরে লিখিত আছে, কলিযুগস্য লক্ষণম্ কিং? থাক্ সংস্কৃত। মোদ্দা : কলিযুগে ব্রাহ্মণে যবনাচরণ করবে, আর যবন আর্যশাস্ত্র রচনা করবে।
আপনার পথ আপনি বেছে নিয়েছেন; আম্মে অধুনা গৌড়ভূমে যে নব্যন্যায় সৃষ্ট হয় তারই অনুকরণে একখণ্ড উপাদেয় নব্যস্মৃতি লিখেছি। আপনার শুভবুদ্ধি যদি আমাকে সম্পাদকমণ্ডলীতে ভূম্যাসনও দেয় তবে মল্লিখিত সেই স্মৃতিশাস্ত্র কালি ও কলম মারফত তাবল্লোকে শনৈঃ শনৈঃ প্রচারিত হবে। এই সুবাদে কিঞ্চিৎ পূর্বাস্বাদ সারভ করছি (ফরাসি মেনু-তে যে আইটি অর দ্য ভ hors d-oeuvre নামে সুপরিচিত); যেহেতু অর্বাচীন গৌড়সন্তান যাবনিক উপাহারলয়ে তথা ভোজন হর্মে পূৰ্বাভিজ্ঞতানটনবশত বংশারণ্যে ডোম্বাহ্মের ন্যায় আচরণ করত হাস্যাস্পদ হয়, সেহেতু মদ্গ্রন্থে ফিরপোতে হবিষ্যান্ন। নামক একটি বিশেষ উল্লাস আছে, তৃতীয় অধ্যায়ের চতুর্থ কল্লোলে। কোন কোন তিথিনক্ষত্রে ফিরপো গমনে যাত্রা শুভ তথা যাত্রা নাস্তি একাদশীতে তথায় ষণ্ডপুচ্ছযশ সেবন অবিধেয় কি না ইত্যাদি ইত্যাদি তাবৎ জটিল জটিল সমস্যার নিঘণ্ট তথা দফে দুফে সবিস্তর বর্ণন অধমাধমের নব্যস্মৃতিতে যাবনিক সংস্কৃতে আলেকজানদ্রিয়ান ছন্দে গ্রন্থিত আছে। একাধিক আই সি এস কর্তৃক উচ্চ প্রশংসিত। তারা অবশ্য তাঁদের যবন পূর্বসূরিগণ কর্তৃক স্থাপিত প্রথা অনুযায়ী যথারীতি পুস্তক না পড়েই প্রশংসাপত্র দিয়েছেন কিন্তু এস্থলে পাণ্ডুলিপি পূর্বাহে অনধীত থাকাতে ক্ষতিবৃদ্ধি হয়নি– দি ক্যারাভান (চালিয়াতি উচ্চারণ কারাভ) পাসেজ কাফেলা অগ্রগামী। ইতোমধ্যে আমেরিকা-প্রত্যাগত স্বামী বিটলানন্দ (বিটেল নয়, Beatle) ও শ্রীদিদি স্বপ্নযোগে পাণ্ডুলিপি অধ্যয়ন করত আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মার্কিন বিটল সম্প্রদায়ের জন্য মারিযোয়ানা হশিশ-ভাঙ-চণ্ড ইত্যাদি মিশ্রিত পঞ্চরঙ (এটিই প্রকৃত অকৃত্রিম বস্তু- পঞ্চরসের অনুকরণে নির্মিত Punch নিরেস, নীরস ভেজাল) এবং বিশেষ করে মার্তণ্ড-তাপিত-বকযন্ত্ৰোগীৰ্ণ-ঋজুর-নির্যাস– শাহ-ইন-শাহ জহাঁগিরের সুপ্রিয় পেয় ডবল ডেটিলড়-এরে এই মহা-কারণবারিরই শ্বেতাঙ্গ দত্ত অভিধা– কী প্রকারে কোন শুভলগ্নে পান বিধেয় সবিস্তারে এ তাবৎ শ্লোকবদ্ধরূপে গ্রথিত আছে। সহজে প্রত্যয় যাবেন না, কিন্তু তৎসত্ত্বেও ঘোর সত্য যে যুক্তফ্রন্টের কমন-ইস্ট তথা প্রতিপক্ষ উভয় সম্প্রদায়ই এ স্মৃতি সোল্লাসে কামনা করেছেন। বাসনা ধরেন, খবরই প্রসাদাৎ বিধান, ফতোয়া, ফরতা প্রয়োগ করত একে অন্যকে স্মৃতিভ্রষ্ট জাতিচ্যুত করতে সক্ষম হবেন। আমেন– যাবচ্চন্দ্রদিবাকরৌ!
সম্পাদকতার পরিবর্তে এই দেবদুর্লভ গ্রন্থের কপিরাইট অতীব সুলভ। দ্যাখতোনাদ্যাখ আপনাদের বাক্-সাহিত্য তামাম বেঙ্গলকে তাক লাগিয়ে অবাক সাহিত্যে পরিণত হবে! বাঙলা কোন ছার, আপনি হেলায় লঙ্কা করিবা জয়।
এইবারে বলুন, শুধু মস্তানিই করি? উদারার খাদেও চড়াকসে নামতে জানি।
***
কিন্তু, যাই-বলি-যাই-কই, কিন্তু ব্যাকরণে একটা বিভীষণ ভুল করে বসে আছি আমি। সেটাকে আমার ওয়াটারলু পানিপথ গালিপলি আপনার প্রাণ যা চায় তাই তুলে বেইজ্জত করতে পারেন। আমার মন নির্ঘ ছিল, আপনি আপনার পেটুয়া কাকা মামা শালাদের কাউকে দুম্ করে সম্পাদকের দিওয়ান-ই-খাস-এর সগ-ই-মমর তখতে বসিয়ে দেবেন। ও হরি! কোথায় কী? বসিয়ে দিয়েছেন বিদগ্ধ দ্ৰ কুলীন সন্তান মিত্রজ শ্ৰীযুত বিমল মহোদয়কে। সর্বনাশ! আমার। আপনার তো সর্বরক্ষা! এ যে আমার কুল্লে ফরিয়াদের কী বেহ মুখ-তোড় জবাব তার জবাব কড়ি দিয়ে কেনা যায় না। কালির উপর বিমল! সোনার পাথর বাটি আপনিই সব্বপয়লা গড়লেন। কালি সরোবরে বিমল হংসকে ছেড়ে দিয়েছেন। কবীর (বেজোড়ের) বলেছেন, বিরল হংস। ম স্থলে র। তা ওই ম র ম র ম রা করে করেই শ্রীবাল্মীকি রামচন্দ্র পেয়েছিলেন।