বাদবাকি কলকাতা এলে।
—প্রীতি জেনো
সৈ মু আলী)
.
(২০)
শান্তিনিকেতন
১২।৭।৬৪
স্নেহের দীপংকর,
আমার তো পাঁচ কলম ভোতা। তুমি কোন কালো কালিটা ব্যবহার কর জানিয়ে তো? সেটাও তো খুব ভালো বলে মনে হচ্ছে না। আমি যে bal point কালো ব্যবহার করতুম, সেটা ভি ফুরিয়ে গিয়েছে– refill এদেশে পাওয়া যায় না– কাজেই তুমি আর শোক করো না। Joneses donot have it either– যে কত বড় সান্তনা সেটা বিপ্লসন্তোষী হলে পরে জানাব।
আমি তোমাকে শুধিয়েছিলুম এবং তুমি আমার প্রশ্নটি বুঝতে পারনি যে, কোন ball point কলমের barrel-এর কালি হাফ ভরা থাকা সত্ত্বেও যদি সেটা শুকিয়ে যায়, অর্থাৎ flow বন্ধ হয়ে যায় তবে কি এমন কোনও substance আছে যেটা তার পশ্চাদ্দিকে ভরে দিলে তারই চাপে, কিংবা glycerine জাতীয় কোনও solvent কিংবা/এবং অন্য কোনও-কিছু জান কি, যার ফলে ফের flowটা সজীব হয়। Refill-এর প্রশ্নই ওঠেনি। অর্থাৎ সেই 1/10np-র barl-টা যদি খালিই হয়ে যায়, তবে সেটা refill করতে যাবে কে? অবশ্য সেই measure-এর refill size যদি এদেশে না থাকে তবে অন্য কথা।
আমার হয়েছে কী, কোনও জিনিস মনে থাকে না–লেখা-পড়ার কথা হচ্ছে না। এই তো, কিছুতেই মনে পড়ছে না, তোমার পত্রের উত্তরে পূর্বেই বলেছি কি না, আগে আমি একটা আরাম চেয়ারে দিনের ১৫।১৬ ঘন্টাটাক কাটাতুম। চতুর্দিকে হরেক রকম শেল ছিল। তারই উপর একখানা বইয়ে তোমার জন্মদিন– inter alia –অর্থাৎ ফিরোজ ভজু etc টোকা ছিল। সেটা মাঝে মাঝে দেখে নিতুম। গত ব্যামো থেকে এখন দিনের ২৩ ঘণ্টা কাটে বিছানায়। সে শেলফশুলো দূরে পড়ে আছে। তাই তোমারটা miss করেছি; যেমন ভজুরটা।
এবার ভাবছি ফিরোজকে তোমার বাড়িতে ২/৩ দিনের জন্যে পাঠাব। বড় হয়ে সে যখন কখনও সখনও-কলকাতায় আসবে, যেন তোমার খোঁজ নিতে পারে।
আমি মে মাসে ১৯ দিন কলকাতায় ছিলুম– চিকিৎসাধীনে। পাষণ্ড ডাক্তার কারওর সঙ্গে দেখাঁটি পর্যন্ত করতে দেয়নি বাড়ির লোক ছাড়া। তার অবশ্যি ইচ্ছা ছিল আমি যেন হোটেলে উঠি। Bar-এর ভয় ছিল না। সে কথা ডাক্তার জানত। কিন্তু তা হলে ১৫০০ নাগাদ খর্চা হত। সেটা যে সওয়া যায় না তা নয়, কিন্তু Great Eastem-এর খাওয়া দিন পাঁচেক পরেই আর রুচে না। তদুপরি, আমি ছিলাম– অন্তত কিছুটা পথিতে।
– রবীন্দ্রনাথের শুটিকয়েক কবিতা পেয়েছি, ilt১-ঠিকানা তবে তারই কাছাকাছি। শুনেছি বৈজ্ঞানিকরা বলেন একেবারে নাস্তি থেকে অস্তি হয় না– ভারতীয় দর্শন তো বলেই, এবং commonsense তো বলেই। তা হলে প্রশ্ন, সেটা রবীন্দ্রনাথ দেখলেন কোথায়? পথে? তা হলে অত vivid হয় কী করে? skill ছিল বলে? মন সাড়া দেয় না। তিনি তো চিরকাল থাকতেন ivory tower-এ। আমরা যে অর্থে অন্তরঙ্গ সখা বুঝি তার তা কখনও ছিল না। জমিদারি করার সময় অতখানি tower-এ থাকা যায় না বলে জীবনের কিছুটা দেখেছন। কিন্তু মোটামুটি যে-সময় থেকে এখানে বাসা বাঁধলেন? ছোট মেয়ে রাণীকে আলমোড়া নিয়ে যাওয়া আসা ওই ধরনের ছিটোফোঁটা পথের বিপদ চতুর্দিকে– একে ওকে ধরাধরি।….
রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুশয্যার চতুর্দিকে তখন ধুন্দুমার। বেহ্মজ্ঞানী ফেম্মজ্ঞানীতে ছয়লাপ। ওদিকে হেঁদুাও রয়েছে। রামানন্দ আসছেন (অবশ্য তিনিও বৃদ্ধবয়সে হিন্দুমহাসভার প্রেসিডেন্ট হয় পূর্ব পাপ ক্ষয় করছেন) বেহ্মমন্তর পড়াতে ওদিকে হেঁদুরা এনেছে বিধুশেখর শারীকে। আমি থাকলে নিশ্চয়ই তসবি হাতে কলমা শুনিয়ে দিতুম। যাকগে! এসব বলো না। দু জাতে মিলে আমার মুণ্ডুটি চিবোবে।
—-আলী
.
(২১)
২৪/৫।৭।৬৪
স্নেহের দীপংকর,
তোমার মায়ের শরীর ভালো যাচ্ছে না, এ তো ভালো কথা নয়। তার বয়েস কীই-বা হয়েছে। ফিরোজের মায়ের চেয়েও ছোট; অর্থাৎ ৪৫। তারও কম হতে পারে। দেখায় আরও কম। আমি কী বলি, শোনো। মনটাকে তার কী প্রকারে প্রফুল্ল রাখতে পার তার জন্য deliberate throughout well-planned চেষ্টা দাও। বিলাতের বড় ২ হাসপাতালে এখন প্রত্যেক ward-এ একজনের ডাক্তার থাকে, specially to relieve pain & generate cheerfulness- সে রোগের treatment আদৌ করে না। এদেশের সর্বশাস্ত্র আছে, অপ্রসন্ন জনের কোনও সফল সিদ্ধি হয় না। এই যে যোগীদের (moden) photo দেখ, পুঁইডাটর মতো কাষ্ঠকঠিন শুষ্কমুখ– এটা হতেই পারে না। তার মুখ থেকে প্রসন্নতা ঠিকরে পড়ার কথা। মার্কিন জাতের প্রধান গুণ তাদের চিরপ্রসন্নতা : হার মানে না, বলে। Gee lets try again.
কই, তোদর সেই সস্তায় inserted letter –অর্থাৎ bearing post-এর চিঠি তো এল না? সেটাতে বুঝি ঠিকানা দিয়েছে, Ali, Heaven knows where, Sender-এর ঠিকানা না থাকলে পুরো ঠিকানায় চিঠি আসে না, থাকলে স্বল্প ঠিকানায়ও আসে– বেয়ারিং চিঠির বেলা।
… …
জর্মনে বলে good nerves কারে কয়? যে যত বেশি disorderliness সইতে পারে। তোমার ঠাকুর্দা disorderliness সইতে পারতেন না। তাই ভুগেছেন। তুমি এই বয়সেই সেটা এত বেশি রপ্ত করে বসে আছ যে, তোমাকে অনেক দুঃখ সইতে হবে। আমিও সয়েছি। এখন অনেকখানি চেপে যাই।
.
(২২)
4 Andrews, Santiniketan,
July, 29th, 64.