চো করে এক চুমুকে নিশ্বাসে বই পড়া কাকে বলে জান? তাই হল কাল আমার। মোড়ক খুলে এবং নিশ্বাসে পড়লুম, পরশুরামের কবিতা। কী চমৎকার অদ্ভুত বই। কবিতাগুলো এ বলে আমায় দ্যাখ, ও বলে আমায় দ্যাখ। তুমি যদি আমায় বেরসিক না ভাব, তবে বলব, সতীর তো কবিতা হয় না। মাইকেলের গাম্ভীর্য এবং রবীন্দ্রনাথের মাধুর্যের পিছনে অতি গোপন পরশুরামের দুষ্টু হাসি। সে হাসিটা কোন্ জায়গায় লুকনো আছে ধরতে পেরেছ, ভয় করি। তোমাকে লেখা কবিতাটির উপদেশ মেনে চলছ তো? তবে হ্যাঁ, সে-রকম গুণীজ্ঞানী কলকাতা কোথায়? আর আশ্চর্য ১৮৯৯- তখনও তিনি টীনে– কী বাহারে কবিতাই না লিখেছেন নিশ্চয়ই শ্বশুরবাড়িতে শালি-বাহন নাম সপ্রমাণ করতে! দুলাল, গৌতম, গোরাচাঁদ এরা সব কোথায়?
বাঙলায় বলে, বিবিজান চলে যান লবেজান করে। আমার বিবিজান আসি আসি করে, আসার বেলাতেই আমাকে লবেজান করে ছাড়ছেন। এখনও পাকা খবর পাইনি।
আঃ আঃ
এইমাত্র তোমার পি.সি. পেলুম। বিবি না এলে আমাকে যে রাজশাহী যেতে হবে সেটা ওই কলকাতা হয়েই যেতে হবে। কিন্তু নানাবিধ কঠিন কারণে ১৪।১০-এ তোমাদের বাড়ির প্রোগ্রামটা হবে না। তার আগেও হতে পারে, পরেও হতে পারে। সেটা তোমাকে যথাসময়ে জানাব। নিশ্চিত থাকো।
–সৈ. মু. আ.
.
(১১)
৩০।১১।৬১
ভ্রাতঃ,
তোমার পাঠানো কভার ঠিক সময়েই পেয়েছি। এটা আমার বান্ধবীর জানটা নিশ্চয়ই ত– করে দেবে। আগেরটা ফিরোজ মেরে দিয়েছে। বান্ধবীর দেওয়া জিনিস ব্যাটা মেরে দিলে এর রাজসিক উদাহরণ কাব্যলোকে আছে। ভিক্টোরিয়া (বিজয়া) ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথবে দেওয়া একখানা চেয়ার যখন বুয়েনোস আইরেস থেকে শান্তিনিকেতন পৌঁছল তখন রথীন্দ্রনাথ সেটি গ্যাড়া মেরে দেন–১৯২৬ খ্রি.-তে। তার ঝাড়া পনেরো বছর পরে ১৯৪১ খ্রি.-র মার্চ মাসে বাপ সেটা ব্যাটার কাছ থেকে চেয়ে নেন। শেষ লেখা পুস্তিকার চার এবং পাঁচ নম্বর কবিতা পশ্য। পাঁচ নম্বর কবিতার দোসরা লাইনে আছে খুঁজে দেব; কিন্তু হওয়া উচিত খুঁজে নেব। ওই সময়ে কবি আর লিখতে পারতেন না ডিটেট করতেন। তাই বোধ হয় গুবলেট হয়েছে। চেয়ারখানার ছবি পাবে (বৃহৎ) রবীন্দ্র রচনাবলীর পূরবী পুস্তকে। ফটোতে তিনি সেই চেয়ারে বসে, ভিক্টোরিয়া (বিজয়া) মাটিতে। বইখানা ওকেই উৎসর্গ করা হয়েছে, বিজয়া নামে।
আর্চ-ভবঘুরে আরও একটু পরে বেরুবে। দুটো চারটে উটকো লিখে নিই। একবার ওই দয়ে মজলে লবেজান। আসলে উচিত ভবঘুরে দেশে ও পঞ্চতন্ত্র আনন্দবাজার রবিবাসরীয়তে লেখা।
চাকরি নিয়ে ন্যাজেগোবরে। প্যোঁজপয়জার কথাটা জান? আমার হয়েছে তাই। অন্য কোনও প্রশ্ন মনে পড়ছে না, তোমার চিঠিতে।
আশা করি কুশলে আছ। আশীর্বাদ জেনো।
—সৈয়দ মু. আলী
.
(১২)
শ্মশান, শান্তিনিকেতন
২৩।৪।৬৩
ভাই সাহেব,
সেন পিসিটি কে বটেন?
আমাদের গরমের ছুটি। ১৫ থেকে ৩০৬। আমি ৪ তারিখ নাগাদ কলকাতা আসব। আজকাল উঠি মনোজ বসু*, P. 560 Lake Road, Tel. 461054-এ, কিংবা Great Eastern-এ কিংবা যততত্র। অর্থাৎ এখন আর কিছু ঠিক নেই। খবর দেব। তার পর রাজশাহী যাব।
[*মনোজ বসু = কথাসাহিত্যিক মনোজ বসু]
ইতিমধ্যে আসতে পারবে কি? তা হলে রইল মাত্র ২৭২৮ এপ্রিল। কিন্তু না এলেই ভালো। ভীষণ গরম! বরঞ্চ বর্ষায় এস। জায়গাটি বর্ষায় তার সর্বশ্রেষ্ঠ রূপ ধরে।
Oscar Wild বলেছিলেন, আমাদের এমন অনেক কিছু আছে যা আমরা অবজ্ঞায় রাস্তায় ফেলে দিতুম, কিন্তু ফেলি না, পাছে অন্য কেউ কুড়িয়ে নেয়। তোমার দেখি তারই উল্টো পিঠ। অনেকেরই আছে, তাই এটা আমি রাখি কেন, ফেলে দিই। অর্থাৎ যদি ধরা পড়ে, আমি ডজন খানেক নববর্ষ শুভেচ্ছা কার্ড পাঠাই, তা হলে তুমি তোমারটা ফেলে দেবে। এই তো? না, ভুল বুঝলুম?
মোদ্দা কথা, তোমার কাছে আছে শুধু scarcity value. জল বাতাসা তোমার কাছে মূল্যহীন। কিংবা বলি, আল্লা যদি দুনিয়ার সর্ব বাতাস বন্ধ করে শুধু তোমাকেই দম নিতে দেন তবেই তুমি খুশি হবে।
আমি অন্য পন্থায়। একবার কুরান-পুরাণ ঘেঁটে দেখি, কাল গঙ্গাজল দুষ্ট হয়ে যাবে। খেলে মানুষ পাগল হয়ে যাবে। চাষাদের বারণ করলুম। তারা আবার শোনে নাকি। জানে, আমি পণ্ডিত বটি, কিন্তু আস্ত গবেট। পরদিন খেল সবাই জল। হয়ে গেল বদ্ধ পাগল।
আমি আর কী করি? ছুটে গিয়ে এক আঁজলা খেয়ে নিলুম। কারণ it is mad to be same in a mad world!
অতএব সঞ্চয় করবে শুধু তাই, যা অন্য সব্বায়ের আছে। তা হলে তোমাকে কেউ হিংসে করবে না। পছন্দ করবে ফিল্মি গানা, খাবে পাইস-হোটেলের খানা, বিয়ে করবে কানা।
ব্যস! safe as the Bank of England.
কী সব আপ্তবাক্য বলে গেলুম। আরেকবার বললে নিজেই বিশ্বাস করে ফেলব।
এক বন্ধু জানালেন, শনিবারের চিঠি আমাকে impotent বলেছে। মনে পড়ল, Von Platter নামক জনৈক লেখক একবার Heine-কে আক্রমণ করেন। উত্তরে Heine লেখেন–
It is good so, that Von Platter is an open enemy of mine in front of me. I would be genuinely alarmed if I were to know that he is a friend of mine behind my back.
Von Platter–বলা উচিত– homosexual ছিলেন।
কী অশ্লীল! তোবা তোবা বলেও তৃপ্তি হয় না।
—সৈয়দ মুজতবা