তুমি একবার এখানে এলেই পার, বাপধন! যা বলার বলে দেব, যা শোনার শুনে নেবে।
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় কার প্রভাব আছে, কার নেই সে নিয়ে বুদ্ধদেব* মাথা ফাটাফাটি করেছে। তার কতটা যুক্তিযুক্ত প্রাসঙ্গিক সে-কথা বাদ দিচ্ছি, কারণ it is all barking up the wrong tree. রবীন্দ্রনাথ অজরামর হয়ে থাকবেন তার গানের জন্য (সম্পূর্ণ অবান্তর নয় বলে বলছি, তিনিও সেটা জানতেন ও বহুবার দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন। তাই আলোচনা করতেই যদি হয়, তবে কর না তার গান নিয়ে। প্রথম, রবীন্দ্রনাথ বাঙলা গান কোন্ জায়গায় পেলেন, কোন্ জায়গায় পৌঁছালেন, দ্বিতীয় কীর্তন, বাউল, ভাটিয়ালি, ১৮৬০-৬১ সালের ব্রহ্মসঙ্গীত, তখনকার দিনের প্রচলিত অন্যান্য বাঙলা গান (ওস্তাদি এবং শব্দপ্রধান উভয়) থেকে তিনি কী নিলেন, তৃতীয়ত কোন্ কোন্ অনুভূতি প্রকাশ করলেন (লক্ষ করেছ কি, প্রেমের সবচেয়ে বড় বেদনা যে Jilted love– জোয়ান জিল্টার মনে আছে?) সেটাই সর্বপ্রধান স্থান পেয়েছে আমাদের হাজার হাজার পদাবলী কীর্তনে, মাথুর পর্যায়ে। রবীন্দ্রনাথ সেই অনুভূতি নিয়ে একটি গানও রচনা করেননি। তাঁর মূল সুর, আমি তোমাকে ভালোবাসলুম, তুমিও আমাকে ভালোবাসলে। তার পর তুমি মরে গেলে। এখন আমি কী করে এই বিরহ বেদনা সই? মাথুরের সুর, হে কৃষ্ণ, তুমি আমাকে ভালোবাসলে, আমিও তোমাকে ভালোবাসলুম। আমি কী দোষ করলুম, আমার প্রেমে এমন কী অসম্পূর্ণতা ছিল যে তুমি তাকে অপমান করে, পদদলিত করে চলে গেলে? আমার মনে হয়, jilted love সম্বন্ধে যে রবীন্দ্রনাথ লেখেননি তার একমাত্র কারণ আমরা খুব ভালো করেই জানি, তিনি কখনও jilted হননি, সে অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল না। সুদ্ধমাত্র কল্পনা দিয়ে এরকম একটা most eternally tragic অনুভূতি প্রকাশ করা যায় না। প্রেম নিবেদন করলুম, অথচ আমার দয়িত সেটা গ্রহণ করল, এ অনুভূতিও রবীন্দ্রনাথের নেই– একমাত্র গৃহপ্রবেশ (শেষের রাত্রি গল্পের নাট্যরূপ চিত্রাঙ্গদায় সামান্য) ছাড়া। ভালোবেসেছিলুম– কিন্তু প্রকাশ করতে পারলুম না, সমস্ত জীবন দগ্ধে মরলুম, এটাও নেই। কিন্তু এগুলো jilted love-এর কাছেই আসে না। অবশ্য এগুলো প্রকাশ করেননি বলে তিনি মহান কবি নন, এ বলাটা পাগলামি। তবু অনুসন্ধান করাটা Quite interesting! চতুর্থত, শেলি-কিটস থেকে তিনি যে অনুপ্রেরণা পেলেন সেটা তাঁর গানে কতখানি সঞ্চারিত হল? এবং পঞ্চমত, এমন ধারা বিস্তরতঃ প্রশ্ন আছে।
কিন্তু গান নিয়ে আলোচনা কর, গান নিয়ে। বেড়াল উঠেছে গাব গাছে, আর কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করছে উপরের দিকে তাকিয়ে জামগাছ তলায়।
সুপার ট্র্যাম্পকে নিয়ে বিপদে পড়েছি। তার প্রধান কাজ ছিল, নিছক পরোপকারার্থে সে জনপদবাসিনীদের দেহরঞ্জন করতে করতে এগোত, সেটা লিখি কী প্রকারে।
তুমি যে আমার লেখা অতুলনীয়, অপূর্ব এইসব বল, আর তো কেউ বলে না। আমি রোক্কা পয়সা ঢেলে একখানা দেশ কিনে নিরালায় ফিরলুম। পুটপুটি সেটা ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে পড়তে আরম্ভ করল, কড়ি দিয়ে কিনলাম।– পঞ্চতন্ত্রটার দিকে তাকালেই না।
আমার বঁধুয়া আন-বাড়ি যায়
আমার আঙ্গিনা দিয়া।
যদি রাগ না কর তো বলি। আমার প্রায়ই মনে হয়, তুমি (এবং হয়তো মিত্তির, অংশত) আমার ভালোবাসা পেয়েছ বলেই হয়তো আমার লেখার প্রশংসা কর। অচিন্ত্য বা বুদ্ধদেবের সঙ্গে এই সম্পর্ক স্থাপিত হলে তাদেরও হয়তো ওই কথাই বলতে। আবার মাঝে মাঝে ভাবি, আজকের দিনে রাজশেখরবাবুর nearest approach তো আমিই, অবশ্য diluted to .00000001-এর thinness-এ! তাই হয়তো লেখার প্রশংসা কর। তা হলে অবশ্য এর খানিকটে আমার প্রাপ্য।
Instalment-এর চাপ আছে বলেই তো আমার সব লেখা বেরোয়। একমাত্র দেশে-বিদেশে (তা-ও শেষের চাপটারগুলো তাই) এবং শবনম (অংশত) একনাগাড়ে লেখা। তাতেই লেখা ভালো হয়, কিন্তু আমার হাড়-আলসেমি ওরকম sustained effort করতে দিল কই।
৮ তারিখ পাটনা যাচ্ছি। ফিরে আসব এখানে। তার পর কলকাতা হয়ে রাজশাহী। কলকাতায় ক-ঘণ্টা থাকব, জানিনে। তবে খবর দেবার চেষ্টা করব। ফেরার মুখে দীর্ঘতর।
এখানেই উপস্থিত থাক। পুজোর লেখা এখনও একটাও আরম্ভ করিনি। ওদিকে পাওনাদারের ঠ্যালায় প্রাণ যায় যায়।
মিত্তির কুটিল অতি, না কি যেন, সে আমায় লিখবে কেন?
—আশীর্বাদ জেনো
মুজতবা
[অচিন্ত্য = কথাসাহিত্যিক অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত। বুদ্ধদেব = কথাসাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু। পেঁচি রায় = Dr. P C. Roy (আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়)। নিরালা = দক্ষিণ কলকাতায় লেখকের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি। পুটপুটি = প্যারিমোহনের এক কন্যা। পুটপুটি ডাকনাম।]
পেঁচি রায়ের (PC.Roy-কে আমরা তাই বলতুম) cover-এর জন্য অনেক ধন্যবাদ। ওটা আমার এক সুই বান্ধবীর কাজে লাগবে। পেঁচি রায় আমার autograph-এ লিখেনে– Islam, the most perfed equalizer of men. ভারি মাইডিয়র লোক ছিলেন। এখানে এসেছিলেন। যেই শুনলেন, আমি মুসলমান অমনি জাবড়ে ধরে যা পিঠ চাপড়াতে আরম্ভ করলেন। এবং বিরাশি সিক্কা মাপে।
.
(১০)
২।১০।৬১
স্নেহের দীপংকর,
আশা করি আমার দু খানা পি. সি.-ই পেয়েছ।