তোমার sentence ব্যাকরণের দৃষ্টিবিন্দু থেকে জমি। কিন্তু শরৎবাবু এ রকম বিস্তর sentence লিখেছেন। অর্থ পরিষ্কার। উহ্যটাও প্রাঞ্জল, কিন্তু
বড় তাড়াতাড়িতে লিখছি।
–আশীর্বাদ জেনো
সৈ. মু. আ.
.
(৮)
Santiniketan
১৬।৫।৬১
স্নেহের দীপংকর,
এবারে কলকাতায় মাত্র ২৩ দিন ছিলুম বলে সব ভণ্ডুল হয়ে গেল।
তুমি বুঝলে না ১০০০ টাকা নিয়ে আমি কোথায় যাব? এ্যান্ডে বার নেই? সেখানে অনেকক্ষণ ছিলুম।
রঞ্জন*, তুমি আমি একমত। সম্পূর্ণ একমত।
[*রঞ্জন– কথাসাহিত্যিক নিরঞ্জন মজুমদার, রঞ্জন ছদ্মনাম। এর শীতে উপেক্ষিতা গ্রন্থটি প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
দিল্লির পুরস্কার– আকাঁদেমি পুরস্কার। ১৯৬১ সালে সাহিত্য আকাঁদেমির পুরস্কার কমিটির বিচারে বাংলায় কোনও উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ না থাকায় পুরস্কার দেওয়া হয়নি।]
তার সঙ্গে যোগ দিই। এই দিল্লিওয়ালাদের ন্যাজ মোটা করে দিল কে?
তোমরা সাহিত্যিকেরাই। তবে এখন কেন?
এবং দিল্লি তো শুনলুম, বাঙলা দেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিকদ্বয়ের (কারা জানিনে) উপদেশেই তারা পুরস্কার না দেবার মীমাংসায় পৌঁছন।
এখানে যা হয়েছে তা অবর্ণনীয়। বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথকে কেউ স্মরণ করেনি। করেছে পোয়েট টেগোরকে। প্রধান পুরোহিত ছিলেন পণ্ডিতজি ও রাধাকৃষ্ণ। এঁরা তো সোনার বাংলার কবি রবিঠাকুরকে চেনেন না; এঁরা চেনেন গিট্যানজলি, চিট্রা, স্যাড়নার (সাধনা) লেখক মিস্টার টেগোরকে। আর তাবৎ কার্যক্রম ইংরেজিতে! আমি অবশ্য কোনও পরবে যাইনি– বেতারে যা শুনেছি তার থেকে বলছি।
অনেক কাজ, অনেক লেখা বাকি। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলি আর ভাবি শান্তি কোথায়? কাজ থেকে নিষ্কৃতি পাই কী কৌশলে!
কলকাতা আসার আশু সম্ভাবনা তো দেখছিনে।
তুমি একবার শান্তিনিকেতন হয়ে যাও না? Weekend-এ নয়! শনি রবি সোম আমি ব্যস্ত থাকি। অন্য যে কোনও দিন তিনেক। সঙ্গে শুধু toothbrush এনো। আর সব এখানে আছে।
আ—
.
(৯)
শান্তিনিকেতন
৩।৮।৬১
বাবাজি,
তেতো দিয়ে ভোজন আরম্ভ করতে হয়; তাই শুরু কেচ্ছা আরম্ভ করি, চিঠি লিখি না কেন? যার যেটা পেটের ধান্দায় করতে হয়, সেটা তার Hobby হয় না। যেমন মনে কর জজ সাহেব মাটি কুপিয়ে বাগান করেন, কিন্তু চাষা শখের বাগানের জন্য মাটি কোপাতে একদম নারাজ। তদুপরি আমি আবার অনিচ্ছুক, পয়লা generation-এর চাষা। বাপঠাকুর্দা কেউই সাহিত্য রচনা করে পয়সা কামাননি। তার অর্থ, পেটের জন্যও যেটুকু মাটি কোপাই সেটাও অতিশয় অনিচ্ছায়। আমি সাহিত্য রচনা করে কোনও আনন্দ পাইনে। সেই অপ্রিয় কাজ সমাধান হওয়া মাত্রই, আবার পড়ি খ্রি, মুহম্মদ, বুদ্ধকে নিয়ে। ধর্ম এবং তত্ত্বজ্ঞানের জন্য নয়। এঁরা যে ঘোরতর সাংসারিক ছিলেন সেইটে সপ্রমাণ করার জন্য।
শুনেছি, সাঁওতাল ছোকরা সকালবেলা কাঁথার নিচের থেকে হাত বাড়িয়ে হাঁড়িতে হাত দিয়ে দেখে, চাল আছে কি না। থাকলে পাশ ফিরে ফের কথামুড়ি দেয়। আম্মা সকালবেলা চা খেতে খেতে চিন্তা করি, মানিব্যাগে যা আছে তাতে চলবে কি না। বাকিটা বুঝতেই পারছ।
পত্রোত্তর না দিয়ে আমি পৃথিবীতে যত শত্রু সৃষ্টি করেছি, দুর্ব্যবহার, গালমন্দ করেও অত সৃষ্টি করিনি। অমিশন যে কমিশনের চেয়েও মারাত্মক হতে পারে, এটা তারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
ঠিক সেই রকম আমি ভ্রমণ জিনিসটা যে কী রকম cordially detest করি সেটা শুধু আমিই জানি। গৃহিণী পর্যন্ত বুঝতে পারেন না। তাই গেছোদাদাকে আমি অতিশয় শ্রদ্ধা করা সত্ত্বেও তার পদাঙ্কানুসরণ করতে চাইনে– লিটারিলি ও মেটাফরিক্লি। জীবনে মাত্র একবার স্বেচ্ছায়, ব-হাল-ব-খুশ তবিয়তে বেড়াতে বেরিয়েছিলুম– কাইরো থাকাকালীন প্যালেস্টাইন বেড়াতে গিয়েছিলুম। (সেই কারণেই বোধহয়, ওই নিয়ে কোনও ব্যাপক ভ্রমণ-কাহিনী লিখিনি।) তারই খোয়ারি এখনও চলছে– খোয়ারিটা, by the way মাতাল অনিচ্ছায় করে, স্বেচ্ছায় নয়। সেই যে অমর খৈয়াম বলেছিলেন, মদ তো খেয়েছি বাবা, জীবনে কুল্লে একবার, বাকি জীবন তো খোয়ারি ভাঙতে ভাঙতেই গেল।
আমি ভ্রমণের খোঁয়ারি ভাঙ্গি মদ্যপান করে। সাদা চোখে পাটনা, কলকাতা, হেথাহোথা করা আমার পক্ষে সম্ভবপর নয়। অবশ্য স্পেশাল সলুনে যদি আমার কেতাবপত্র কেউ গুছিয়ে দেয় তবে অন্য কথা। কিংবা এবং যদি অসাধারণ কোনও গুণীর সঙ্গ পাই। তিনি তখন এমন সব কথা বলবেন যে আমার জ্ঞানবুদ্ধি-অভিজ্ঞতা তখন furiously তার সঙ্গে fight দেবে। অর্থাৎ আমার মনটা ভূতের মতো। তাকে সর্বক্ষণ কাজ না দিলে সে আমার ঘাড় মটকাতে চায়। তখন তাকে মদ খাইয়ে মাতাল করে দিই।
তোমাদের সঙ্গে যখন কথা বলি, তখন হয় কোনও কিছু নিয়ে তর্কাতর্কি করি, কিংবা কোনও ঘটনা বা বস্তুর সরেস বর্ণনা দেবার চেষ্টা করি। তাতে আমার চৈতন্য-ভূত কাজ পায়। কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ চালানো যায় না, পক্ষান্তরে বুদ্ধ চৈতন্য বলে যাচ্ছেন, আমি শুনছি, মনে মনে ঘুমোঘুষি হচ্ছে- আকছারই আমিই মারটা খাই সেইটেই আমার কাছে পরম আনন্দদায়ক। এটা আমার বিশেষত্ব নয়। আমার দুই দাদা ওই নিয়ে সমস্ত দিনরাত কাটায়। বড়দা তো আদপেই লেখে না– যদিও অতি সরল, সুন্দর, ছোট ছোট কাটা কাটা sentence-এ, প্রায় naive বলতে পার, বাঙলা লিখতে পারে। মেজদা লেখে প্রায় যখন সত্যই কোনও অন্ধকার জিনিসের উপর আলোক ফেলতে পারে, কিংবা মেলা লোক যেখানে ভালো-মন্দ শুচ্ছের কথা বলছে সেখানে ওগুলো sum up করে পতঞ্জলির মতো সূত্রাকার standardize করে দেয়।