ইতিমধ্যে সাগর ঘন ঘন চিঠি দেয়, আমারও উৎসাহের কমতি নেই কিন্তু কলম ধরতে গেলেই মুখ শুকিয়ে যায়।
ভাবি, আমার অন্য লেখা খুব সম্ভব তিনি পড়েন না বা অল্পই পড়েন, কিন্তু এটা তো দুশমন সাগর ওঁকে দেখাবেই, আর উনি পড়ে ভাববেন– সর্বনাশ, অন্য পাঁচজনকে ডেকে কী বলবেন– আরও সাড়ে সর্বনাশ! শশিশেখরবাবুর review লিখতে গিয়ে আমি একবার মার খেয়েছি আবার! আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওই review আমার too very worst performance। রাজশেখরবাবু ওটা আমায় review করতে বলেছিলেন (আসলে কিন্তু আমি আগেই কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে ওটা কিনে পড়ে সাগরকে লিখেছিলুম ওটার review আমি লিখব, বাজে লোক যেন না লেখে, আর রাজশেখরবাবু তো লিখবেন না), আমি এত nervous হয়ে যাই যে পরীক্ষার হলে যে রকম আকবর-আওরঙ্গজেবে গুবলেট হয়ে যায়, আমার তাই হয়েছিল। এখন আবার না তাই হয়। মার্চের গোড়াতে সাগরকে লিখলুম ১০।৩।৬০-এর ভিতরে ওটা তৈরি হবে না– ওর বাসনা ছিল ১৮।৩।৬০-এর সঙ্গে ওটা যেন সিনক্রোনাইজ করে শুনেছি, সাগর মাথার চুল ছিঁড়েছে, নিতান্ত অগ্রজসম বলে অভিসম্পাত দেয়নি। আমায় লিখলে, আপনি মহা অন্যায় করেছেন; জানেন না, উনি অত্যন্ত অসুস্থ, উনি আপনার লেখাটা পড়লে জানতে পারতেন অন্তত একটা লোক তার লেখার সঠিক সমঝদার, আপনার মতো ওঁর সম্বন্ধে আর কে লিখতে পারে–আরও কী সব আবোল তাবোল লিখেছিল আমাকে আসমানে চড়িয়ে এখন একমাত্র ভরসা আপনার যদি সুবুদ্ধি হয়, লেখাটা বিলম্বেও শেষ করেন, যাতে করে উনি অন্তত দেখে যেতে পারেন।
ইতিমধ্যে আমি চিন্তা করলুম, এ লেখা লিখতে না পারলেও উপস্থিত আমার পুরনো বাসনাটা পূর্ণ করি। একটা বই উৎসর্গ করার বাসনা, কিন্তু প্রত্যেক বই শেষ হলে বলি, না, এটাও পাতে দেওয়া যায় না–next-টা যদি ভালো হয়।
শবনম তখন শেষ হতে চলেছে। আমার পছন্দ হয়নি। তবু বললুম, আর তো অপেক্ষা করা যায় না। দুর্গা বলে ঝুলি। তোমাকে লিখলুম। ওই সময় ক্ষিতিবাবু চলে গেলেন। সবকিছু একেবারে তালগোলা পেকে গেল। জানো, সে শক আমার এখনও যায়নি। কঠিন কঠিন প্রশ্ন নিয়ে ওঁর কাছে তাঁর অপারেশনের দিন তিনেক পূর্বেও গিয়েছি। ওসব প্রশ্ন নিয়ে এখন কার কাছে যাই?
তার পর এই।
এখন শবনম যখন পুস্তকাকারে বেরুবে তখন যতদূর পারি সংক্ষেপে উৎসর্গপত্রে বলব যে উৎসর্গটা তার সদয় আশীর্বাদ পেয়েছিল। সংক্ষেপে এই কারণে, যে আমি ও রবীন্দ্রনাথ, আমি ও বাইশে শ্রাবণ এরকম মানুষ যখন মহাপুরুষের সঙ্গে নিজের নাম জড়াতে চায় তখন আমার বড় সঙ্কোচ বোধ হয়। ওদের আমি দোষ দিইনে, কিন্তু আমার করতে বাধে।
*** প্রথম ছত্রটা আমার খারাপ লেগেছে। রাজশেখরবাবু জীবনে ঈশ্বরকে কোনও importance দেননি। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সেটা এমনই মারাত্মক important হয়ে গেল যে তাই দিয়ে প্রবন্ধ আরম্ভ করতে হল! মরি, মরি! যেন রাজশেখর কলেজের ছোকরাদের মতো বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভগবানকে dare করে বেড়াতেন। তার attitude (লেখা থেকে যা জানি– ভগবান নিয়ে আমাদের কখনও আলোচনা হয়নি, ভূত নিয়েও হয়নি, স্বর্গের দেবদূত ছোকরারা ১১ মাঘের বেহ্মোৎসবের মতো বাসন্তী না বেগুনি রঙের উড়নি গায়ে দেয় তা নিয়েও হয়নি– এক শো বার দেখা হলেও হয়তো হত না) ছিল completed indiffer ence to things & concepts (70GT rationality-s TT i The rational par excellence ভগবানকে অতখানি importance দিতে অত্যন্ত লজ্জাবোধ করবে।
আর শেষ sentence রীতিমতো defamatory of course তিনি ঈশ্বরকে মানেননি। এবং বেশ করেছেন! কী যুক্তির বহর! শ্রীকে মানলে ভগবানকে মানা হয়। বটে! আর কুশ্রীকে মানলে? তখনও ভগবানকে মানা হয়, কারণ কুশ্রীও ভগবানের তৈরি (তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছে আকীর্ণ করি বিচিত্র ছলনা জালে which is কুশ্রী, ছলনা=অমঙ্গল=কুশ্রী = ভগবান–মহেশের মতো to= দিয়ে ইকোয়েট করতে পারলুম না বলে অপরাধ নিয়ো না)। আর যদি বল কুশ্রী ভগবানের তৈরি নয়, তবে তার independent seperate per se existence আছে। তা হলে তারও ভগবানের মতো প্রধান essence আছে সেটা existence, অতএব কুশ্রীও ভগবান। এবং A forteriori এ সংসারে কুশ্রীই বেশি, মানুষের আচরণ কুশ্রী, মানুষের চিন্তা কুশ্রী, কুশ্রী বই বেশি বিক্রি হয়,- ad infinitum! Q. E. D, a la Mahesh!…
***
বুজরুকি, বুজরুকি, বুজরুকি। কোনও জিনিস যদি রাজশেখর সত্যই ঘেন্না (ঘৃণা নয় ঘেন্না) করে থাকেন তবে সেটা ওই বুজরুকি। Be simple, be honest, কী ভয়? যা আছ তা স্বীকার করতে লজ্জা কী? For Heavens sake (রাজশেখর হয়তো বলতেন For mans sake) do not pretend! এই তো রাজশেখরের message যদিও তিনি স্যাকরার বানি ছাড়া অন্য কোনও বাণী দেওয়াটা রীতিমতো insolence বলে মনে করতেন– আমি যতটুকু বুঝেছি। আর আমি তো ভুল বুঝিনি। He was too great to be mistaken.
এ বছরে নববর্ষ সংখ্যা বসুমতী দেখেছ? ওতে মডার্ন আর্ট সম্বন্ধে আমার একটি লেখা বেরিয়েছে। ওটা রাজশেখরবাবুর নিশ্চয়ই খুব ভালো লাগত কারণ ওই বাবদে তার মতামত তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় (যষ্টিমধু না কী জানি একখানা কাগজে) একটি চিঠিতে প্রকাশ করেন। মডার্ন আর্টের প্রধান লক্ষণ, তার Obscurantism এবং রাজশেখর সর্বক্ষেত্রেই Obscurantism অত্যন্ত অপছন্দ করতেন। ফরাসিরা যে রকম বলে, ce qui nest pas claire, nest pas Francais- whatever is not clear is not French … WITTS 4 প্রবন্ধে অবশ্য বুজরুকির দিকটাই বেশি বিকাশ পেয়েছে।