এখন উচিত খুনের বেলা যে আইন সেইটে চালানো। তিনজন লোক যদি পিস্তল নিয়ে কাউকে খুন করতে গিয়ে, মাত্র একজন গুলি চালায় এবং তার একটা গুলিতেই লোকটা মরে তবে তিনজনেরই ফাঁসি– আদালত শুধোয় না, কার গুলিতে অকু-টা ঘটল। ভেজালের বেলাও তাই হওয়া উচিত। অর্থাৎ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের আদ্যন্তমধ্য– Managing Director থেকে চাপরাসি পর্যন্ত– সক্কলেরই তখন জেল-জরিমানা হওয়া উচিত।
এবং জানেনা, এখনও আইন– ভেজালের যে জিনিস পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছিল সেটা ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী না হলে ফেরত দিতে হয়!
আরও কত কী!
ক্ষিতিমোহনবাবুর শেষ রসিকতা! বর্ধমান হাসপাতালে মৃত্যুর দু দিন আগের কথা। তাকে দেখতে এসে এক বন্ধু শুধালে, রবীন্দ্র-শতবার্ষিকীর ব্যবস্থা কী হচ্ছে? তিনি বললেন, সিলেট অঞ্চলে শ অক্ষর উচ্চারণে হ হয়। কাউকে শতায়ু হও বলতে গেলে হয়ে যায় হতায়ু হওয়া।
বাকিটা তিনি আর বলেন নি। হতবার্ষিকীই হবে বলে মনে হচ্ছে।
গুরুদেব বলে গেছেন তার শতবার্ষিকীতে ২৫ টাকা খরচ হবে। শত বার সিকি, চার আনা x ১০০ = ২৫ টাকা।
তোমার বয়স কত?
কী পড়?
ভাই-বোন কটি?
তাদের বয়স কত?
—আশীর্বাদ জেনো।
সৈ. মু. আ
কাটিঙটা ফেরত চাই?
.
(৫)
C/o Inspectress of Schools,
P.O. Ghoramara, Rajshahi. E. Bengal.
স্নেহের দীপংকর,
হঠাৎ যেন চোখের সামনে একটা বিরাট সমুদ্র শুকিয়ে গেল।
যবে থেকে এখানে এসে খবর পেয়েছি, আমার নিজের মনই কিছুতেই সান্ত্বনা মানছে না। আমি যেন কিছুই ভেবে উঠতে পারছিনে। এখানে রওনা হওয়ার আগের দিন সন্ধ্যার সময় রাজশেখরবাবুকে সভাতে দেখে কী আনন্দই-না হয়েছিল। ইনি তা হলে অনেকটা সুস্থ হয়েছেন সভাতে যখন আসতে পেরেছেন। এবারে তা হলে রাজশাহী থেকে ফিরে এসে নির্ভয়ে দেখা করতে যেতে পারব। এখানে এসে এই খবর। আমার স্ত্রী কাগজ এনে দিলেন। তিনি শ্রীযুক্তা আশা* পালিতের সঙ্গে এক ক্লাসে পড়েছেন।
[*রাজশেখর-দৌহিত্রী]
এত দিন ধরে রোজই ভাবছি, তোমাকে লিখি। কিন্তু কী লিখি? পরমাত্মীয় বাড়ির মুরুব্বি গত হলে কী হয় সে কি আমি জানিনে? তার ওপর তার সেই বিরাট ব্যক্তিত্ব। বাড়িখানা যেন ভরে থাকত। আর আমার চোখের সামনে তিনি অহরহ ছিলেন প্রত্যক্ষমাণ। কতবার ক্ষোভ করে ভেবেছি, যদি ওঁর মতো একটা গল্পও লিখতে পারতুম।
বাঙলা দেশের সব লেখক একজোট হলেও তার মতো একটি ছত্রও লিখতে পারবে না। তিনি চলে গেলেন। এখন এই অর্বাচীনদের রাজত্বে বাস করতে হবে।
আজ থাক। আমার সত্যই কোনও কথা বেরুচ্ছে না।
কলকাতায় ফিরেই তোমার খবর নেব। তোমাকে আমার প্রাণ খুলে সব বলব। ইতিমধ্যে তোমাকে একটি কথা বলি। আমি পৃথিবীর কোনও সাহিত্য আমার পড়া থেকে বড় একটা বাদ দিইনি। রাজশেখরবাবু যে কোনও সাহিত্যে পদার্পণ করলে সে সাহিত্য ধন্য হত। একথা বলার অধিকার আমার আছে।
—আশীর্বাদ জেনো
সমশোকাতুর
সৈয়দ মুজতবা আলী
[এই পত্রটি রাজশেখরবাবুর পরলোক গমনের সংবাদ পেয়ে লেখা।]
.
(৬)
C/o Mrs Rabeya Ali
Inspectress of Schools, P.O. Ghoramara
Rajshahi. East Bengal.
স্নেহাস্পদেষু,
রাজশেখরবাবু সম্বন্ধে আমি অফুরন্ত কথা বলতে পারি। কারণ তাঁর লেখা আমি এত শ্রদ্ধার সঙ্গে এত অসংখ্যবার পড়েছি যে, এমন একটা লাইনও কেউ বলতে পারবে না যেটার আগের এবং পরের ছত্র আমার অজানা। কিন্তু এ ব্যাপারে আমার একটা গভীর দুঃখ আছে যার ইতিহাস তোমাকে আমি বলি।
বছর পাঁচ পূর্বে দোল না নববর্ষ না কি যেন কিসের উপলক্ষে …যথারীতি আমার লেখা চায়। আমি উত্তরে জানাই- যদিও কোনও প্রয়োজন ছিল না যে আমি রাজশেখরবাবু সম্বন্ধে একটি প্রামাণিক লেখা লিখব। তখন ওই বিশেষ সংখ্যার সম্পাদক ছিল কে যেন এক গাড়লস্য গাড়ল। উত্তরে লিখলে, আমরাও জীবিত কোনও লেখক সম্বন্ধে আলোচনা করিনে; কারণ অন্যেরা চাপ দেয় ইত্যাদি। আমি তো রেগে টং। আমি ব্যাটাকে তখন হাতের কাছে পেলে তার গোঁফ ধরে কোদাল দিয়ে মুণ্ড চাচতুম– যদিও এটা ভীষণ মোগল যুগ নয় এবং আমিও কোফতা খান নই।
কী অদ্ভুত যুক্তি! তা হলে প্রথম রবিবাবুকে যদি আমি তাঁর জীবিতাবস্থায় তার সম্বন্ধে লিখতে চাই– ডাঙশ মেরে ঘায়েল করে তবে তাঁর সম্বন্ধে লিখতে পারব।
পরে অবশ্য জানতে পারলুম, এর পিছনে কী একটা ছুঁচোমি ছিল। আমি অবশ্য ওই শ্বশুরনন্দন (রাগ কর না, শশিশেখরবাবু তালেবর লোক ছিলেন; তিনি এর সাতগুণ লিখতেন) যতদিন সম্পাদক ছিল ততদিন ওদের চিঠির উত্তর পর্যন্ত দিইনি।
১৯৫৯-এর শেষের দিকে কী করে সাগর (-ময় ঘোষ– দেশ সম্পাদক) তাবৎ ব্যাপার জানতে পেরে আমাকে ওই প্রবন্ধ লিখতে বলে। রাজশেখরবাবুর দু একখানা বই আমার তখন ছিল না (প্রতি বই অন্তত তিনবার কিনেছি ও ধার দিয়েছি–যা দেখেছি–ও তদ্বৎ), তাই সাগর উদযোগী হয়ে কলকাতা ফিরে গিয়েই সেগুলো পাঠায়। আমি সব বই (মায় হিতোপদেশ) আমি যেখানটায় বসে দিনযামিনী কাটাই তারই পাশে রাখলুম। শবনম লিখি আর ওগুলো পড়ে পড়ে নোট নিই, ছকে ফেলি (যেমন ভণ্ডামি, বারি, কুসংস্কার, Commonsense vs. religious bunkum, Versatility in linguistics –বিহারি, মেডোর বাঙলা উচ্চারণ, দিলতোড়বাগ, কে রেভেজভুস (by the way আমার ছোট ছেলের নাম ভজু (৬.৫) আর বড় ফিরোজ (৮) : বড়টা প্রায়ই চা-রা-রা– ভজুয়াকি বহিনিয়া গান গায়, আপন সূরে অবশ্য দু জনার hot favourite সেই উচাটন মন্ত্র মারো জোয়ান হেঁইয়া আম্মো কোরাসে জোয়ান করি) etc.etc.