ইতোমধ্যে হিটলারের খাস চিকিৎসক ডাক্তার মরুল ধরা পড়েছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি যা বলেন সেটা আমাদের ভাষায় বলতে গেলে, হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ- এফা ব্রাউন আর হিটলার একসঙ্গে বাস করতেন বইকি — হেঁ হেঁ হেঁ হে– এবং কিছু একটা হতে হয়তো–হেঁ হেঁ হেঁ হে।
এ সময়ে হিটলারের উইল দলিলটি আবিষ্কৃত হয়। এটি তিনি তার বিবাহের পরমুহূর্তেই ডিকটেট করে টাইপ করান এবং আপন স্বাক্ষর দেন। তাতে অন্যান্য বক্তব্যের ভিতর আছে;
যদ্যপি আমার সংগ্রামের সময় বিবাহ এবং তজ্জনিত দায়িত্ব গ্রহণ করার মতো আস্থা আমার ছিল না, তথাপি এখন, আমার মৃত্যুর পূর্বে আমি মনস্থির করে একটি রমণীকে বিবাহ করছি। আমাদের ভিতর ছিল বহু বৎসরের বন্ধুত্ব (ফ্রেন্ডশিপ = জনে ফ্রয়েন্টশফট) এবং বার্লিন যখন চতুর্দিক থেকে শত্রুসৈন্য দ্বারা পরিবেষ্টিত তখন তিনি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় আমার অদৃষ্টের অংশীদার হবার জন্য এখানে এসেছেন। তিনি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় আমার স্ত্রীরূপে আমার সঙ্গে মৃত্যুবরণ করবেন। আমি জনসেবায় নিয়োজিত ছিলুম বলে যে ক্ষতি হয়েছিল (অর্থাৎ একে অন্যের সঙ্গসুখ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলুম–অনুবাদ) তার ক্ষতিপূরণ এর দ্বারা হবে। (১)
এই এফা ব্রাউন রমণীটি কে?
আমি ইতোপূর্বে হিটলারের শেষ দশ দিবস তথা হিটলারের প্রেম সম্বন্ধে নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ লেখার সময় উল্লেখ করি যে আমার জানামতে হিটলার তার জীবনে সবসুদ্ধ ১/২+১ + ১/২ = দুইবার ভালোবেসেছিলেন। প্রথম হাফ প্রেমকে ইংরেজিতে কাফ লাভ বলে। বাছুরের মতো ড্যাবডেবে চোখে দয়িতার দিকে তাকানো আর উদভ্রান্ত প্রেমের মতো গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলা বাঙাল দেশে যাকে বলে ঝুলে মরা। কারণ হিটলার তার হৃদয়েশ্বরীর সঙ্গে কখনও সাহসভরে আলাপচারী তো করেনইনি, এমনকি চিঠিপত্রও লেখেননি। হিটলার তখন ইংরেজিতে যাকে বলে টিনএজার। এ প্রেমটাকে সত্যকার রোমান্টিক পুতনিক প্রেম বলা যেতে পারে।
এর প্রায় বাইশ বৎসর পরে, যৌবনে, হিটলার পুরো-পাক্কা ভালোবেসেছিলেন গেলি রাউবাল নামক এক কিশোরীকে। এটিকে আমি পুরো এক নম্বর দিয়ে পূর্বোল্লিখিত হিটলারের প্রেম প্রবন্ধ রচনা করি। এটি স্থান পেয়েছে মল্লিখিত রাজা উজির পুস্তকে। এ অধম পারতপক্ষে কাউকে কখনও আমার নিজের লেখা পড়ার সলা-উপদেশ দেয় না, তবে যারা রগরগে রোমান্টিক প্রেমের গল্প ছাড়া অন্য রচনা পড়তে পারেন না, তারা এটি পড়ে দেখতে পারেন।
এই কিশোরী আত্মহত্যা করেন। হিটলারও হয়তো সেই শোকে আত্মহত্যা করতেন যদি না তার কতিপয় অন্তরঙ্গ বন্ধু–তার ফটোগ্রাফার বন্ধু, হমান প্রধানত যদি তাকে শব্দার্থে তিন দিন তিন রাত্রি চোখে চোখে রাখতেন।
এই দুটি—১/২+১ প্রেম হয়ে যাওয়ার পর হিটলার আরেক ১/২ প্রেমে পড়েন জীবনে শেষবারের মতো। এফা ব্রাউনের সঙ্গে। এটাকে আমি হাফ প্রেম বলছি এই কারণে যে, আজ পর্যন্ত উভয়ের কোনও অন্তরঙ্গজনই এদের ভিতর সঠিক কী সম্পর্ক ছিল সেটা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলতে পারেননি। একা ছিলেন অতিশয় নীতিনিষ্ঠ মধ্যবিত্ত ভদ্রঘরের কুমারী। হিটলার ভিন্ন অন্য কোনও পুরুষের প্রতি তিনি কদাচ আকৃষ্ট হননি। যে রমণী তার দয়িতের সঙ্গে সহমরণ বরণ করার জন্য স্বেচ্ছায় শক্ৰবেষ্টিত পুরীতে প্রবেশ করে, তাকে রক্ষিতা আখ্যা দিলে নিশ্চয়ই তার প্রতি অবিচার করা হয়।
পক্ষান্তরে এ তত্ত্বটিও নিষ্ঠুর সত্য যে, হিটলার সুদীর্ঘ বারো বৎসর ধরে একাকে বিয়ে করতে রাজি হননি। তিনি অবশ্য তার জন্য একাধিক যুক্তি দেখিয়েছিলেন। সেগুলো বিশ্বাস করা-না-করা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও রুচির ওপর নির্ভর করে। আমার মনে হয় তার সবকটা ভুয়ো নয়। এবং হিটলার সর্বদাই এ জাতীয় আলোচনার সর্বশেষে মধুরেণ সমাপয়েত করে বলতেন, জর্মনি ইজ মাই ব্রাইড = জর্মনি আমার (জীবনমরণের) বধূ। এরই ইঙ্গিত তিনি দিয়েছেন, তার শেষ উইল-এ।
অতএব এফা না ছিলেন হিটলারের রক্ষিতা, না ছিলেন তার বিবাহিতা স্ত্রী। সর্ব ঐতিহাসিক তাই বলেছেন, এ মোস্ট আনডিফাইন্ড স্টেট অর্থাৎ এদের ভিতর ছিল এমন এক সম্বন্ধ যেটা কোনও সংজ্ঞার চৌহদ্দিতে পড়ে না।
হিটলারের সঙ্গে এফার প্রথম পরিচয় হয় ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে। বাঘা ঐতিহাসিক (যদ্যপি আমার বিচারে তিনি ট্রেভার রোপার, বুলক, নামিরের ইত্যাদির কাছেই আসতে পারেন না) শয়রার যার নাৎসিদের সম্বন্ধে বিরাট ইতিহাসের ওপর নির্ভর করে নির্মিত একটা অতিশয় রসকষহীন ফিল ১৯৬৯-এর গোড়ার দিকে কলকাতা তক পৌঁছেছিল–ইনি বলছেন, যে গেলি রাউবালের সঙ্গে হিটলারের প্রণয় হয় তার আত্মহত্যার এক বা দুই বত্সর পর হিটলারের সঙ্গে এফা ব্রাউনের পরিচয় হয়। এ তথ্যটা সম্পূর্ণ বিশ্বাস্য নয়। কারণ একাধিক ঐতিহাসিক বলেন, আত্মহত্যা করার কয়েকদিন পূর্বে গেলি তার মামা (সম্পর্কে) হিটলারের স্যুট সাফসুরো করার সময় পকেটে হিটলারকে লিখিত এফা ব্রাউনের একখানা প্রেমপত্র পেয়ে যায়। গেলি আত্মহত্যা করার পর তার মা বলেন, এই চিঠিই গেলিকে আত্মহত্যার দিকে শেষ ঠেলা দেয়–অবশ্য একথা কারুর কাছেই অবিদিত ছিল না, গেলির মা এফাকে এমনই উৎকট ঘৃণা করতেন যে পারলে তার চোখদুটো ছোবল মেরে তুলে নিয়ে, রোস্ট করে তার প্যারা কুকুরকে খেতে দিতেন।