অধ্যাপক ভিটানিস ১৯০২ খ্রিস্টাব্দ থেকে বরাবর ১৯৩৭–তার পরলোকগমন অবধি আগেই থেকে যান।
তিনি ছিলেন জাতে, ধর্মে ইহুদি।(১) ইহুদিরা কোনও জায়গায় পত্তন জমালে সেখানে যেসব ইহুদি পরিবার আছে তাদের সঙ্গে মিলেমিশে এমনই এক হয়ে যায় যে পরে ভিন্ন জায়গায় উৎকৃষ্ট সুযোগ-সুবিধা পেলেও এদের ত্যাগ করাটা নিমকহারামি বলে মনে করে। এই একই কারণে ইজরায়েলের শত ক্রন্দনরোদন সত্ত্বেও আমেরিকার লক্ষ লক্ষ ইহুদি পরিবার-সমাজ-দেশ ছেড়ে ওই দেশে যেতে চায় না।(২)
প্রাগ শহর বড় বিচিত্র শহর। সেখানে চেক আছে, জর্মন আছে, ইহুদি আছে, আরও কত জাত-বেজাতের লোক আছে এবং বড় মিলেমিশে থাকে।
আর, পূর্বেই বলেছি, শহরটি বাস্তবিকই বড় সুন্দর।
মধ্যিখান দিয়ে মলডাও নদী চলে গিয়েছে। ঠিক যেরকম ভিয়েনার মাঝখান দিয়ে ড্যানুয়ব, প্যারিসের মধ্যিখান দিয়ে শেন, বুড়াপেস্ট-এর মাঝখান দিয়ে ড্যানুয়ব।
অধ্যাপক ভিনটারনিৎসকে নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাব।
হোটেলওলাকে শুধোলুম, হোথায় কোন ট্রামে বা বাসে যেতে হয়।
সেদিন কী-একটা পরব ছিল। ভিড়ে ভিড়ে হুজুন।
অতএব বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চয় বন্ধ। কিন্তু একটা স্কেলিটেন স্টাফ থাকবে তো! তারা নিশ্চয়ই অধ্যাপকের বাড়ির ঠিকানা দিতে পারবে।
ইতোমধ্যে এই হুজুম না কাটা পর্যন্ত ট্রাম-বাস তো চলবে না।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ডান হাত দিয়ে ঘাড়ের বাঁ দিকটা চুলকোচ্ছি, এমন সময়ে এক অপরূপ সুন্দরী এসে আমাকে শুধোল, আপনার কি কোনও সাহায্যের প্রয়োজন?
এ শুধু প্রাগেই সম্ভবে!
অন্য দেশের মেয়েরা পুরুষকে মদত দেবার জন্য এরকম এগিয়ে আসে না।
———-
১, আমি শুনেছি তিনি যখন শান্তিনিকেতনে ভিজিটিং প্রফেসাররূপে ছিলেন তখন কলকাতার ইহুদি সম্প্রদায়ের নিমন্ত্রণে সেখানকার ইহুদি ধর্মমন্দিরে তাদের বাৎসরিক পূজায় উপস্থিত থাকেন।
২. অন্য কারণও হয়তো আছে। ১৯৩৪ সালে যখন আমি প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের কেন্দ্রভূমি তেল আভিভ শহরে যাই তখন এক ইহুদি আমাকে বলেন– মশকরা করে, না কি, বলা কঠিন– কাকে কাকের মাংস খায় না। সব ইহুদি, সব কাক, এক জায়গায় জড় হলে তো উপবাসে মরতে হবে। দুনিয়ার কুল্লে জাত স্বজাতের সঙ্গে থাকতে চায়। আমরা ব্যত্যয়।
ব্রেন-ড্রেন
যারা এদেশে গবেষণা করার সুযোগ পান না, তাদের অনেকেই ইংলন্ডে চলে যান। আবার বিলিতি খবরের কাগজে প্রায়ই দেখতে পাবেন, সেখানেও ওই একই ব্যাপার; মেধাবী বৈজ্ঞানিক তার জুতো থেকে ইংলন্ডের ধুলো ঝেড়ে ফেলে মার্কিন মুলুকে চলে যায়। সেখানে বেশি মাইনে তো পাবেই, এবং তার চেয়েও বড় কথা, সেখানে গবেষণা করার জন্য পাবে আশাতিরিক্ত অর্থানুকুল্য। অধুনা গৌরীসেন মার্কিন সিটিজেনশিপ গ্রহণ করে সেখানেই ডলার ঢালেন।… জর্মন কাগজেও মাঝে মাঝে দেখতে পাই, ওদের তরুণ বৈজ্ঞানিকদেরও কিছু কিছু মার্কিন-মক্কায় চলে যাচ্ছে।
থাকি মফস্বলে। কলকাতায় পৌঁছলুম ল্যাটে। তবু দেখি, পাড়ায় ব্যতম রক পুরানা সায়েবের মার্কিন নাগরিকতা গ্রহণ নিয়ে সরগরম, মালুম হল, মতভেদ ক্ষুরস্য ধারার ন্যায় সুতীক্ষ্ণ। রকের পলিফে-বেঞ্চ বলছেন, যে-যেখানে কাজের সুযোগ পাবে, সে সেখানে যাবে বাংলা কথা। পক্ষান্তরে তালেবর-বেঞ্চ যুক্তিতর্কসহ সপ্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, পুরানা মহাশয়ের উচিত ছিল দেশে থেকে দেশের সেবা করা। এবং উচিত-অনুচিতের কথাই যখন উঠল তখন বলতে হবে এদেশের কর্তৃপক্ষই পয়লা নম্বরের আসামি। নিজেরা তো কিছু করবেনই না, যারা করতে চায় তাদেরও কিছু করতে দেবেন না। একেবারে উগ অ্যানড দি ম্যানেজার
তালেবর পক্ষেরই এক ব্যাক-বেঞ্চার ক্ষীণকণ্ঠে শুধোল, প্রবাদটা কি ডগ অ্যানড দি মেইনজার নয়?
আলবৎ নয়। এখন এরা সব ম্যানেজার।
এর পর কর্তাদের নিয়ে আরম্ভ হল কটুকাটব্য। আমি প্রাচীনযুগের লোক—-ডাইনে-বাঁয়ে চট করে একবার তাকিয়ে নিলুম। টেগার্ট সায়েবের প্রেতাত্মা আবার কোথাও পঞ্চভূত ধারণ করেননি তো!
খলিফে পক্ষের এক চাঁই মাথা দুলোতে দুলোতে বললেন, সেই কথাই তো হচ্ছে। কাজ করতেও দেবে না। তবে শোনো আমাদেরই এক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নীতি যদিও সেটা তারা স্পষ্ট ভাষায় বলেন না ভিন্ন রাষ্ট্রের কাউকে আপন রাষ্ট্রে চাকরি দেবেন না। সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও এক সাবজেক্টে ঝাড়া বিশটি বছর ধরে কেউ মাস্টার্স ডিগ্রিতে ফার্স্ট ক্লাস পায়নি। বুড়ো-হাবড়া অধ্যাপকরা রিটায়ার করতে চান না। এদিকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েটে কাউকে লেকচারার তক নেবেন না–যদি ফার্স্ট ক্লাসের হরিন্নাম তার সঙ্গে ছাপা না থাকে। এদিকে চন্দনের বাটিটি বিশটি বছর ধরে তারা ঝুলিয়ে লুকিয়ে রেখেছেন সযত্নে। শুধোলে অবশ্য বলেন, ঘোর কলিকাল মোশয়, ঘোর কলিকাল। পাষণ্ড, পাষণ্ড, পাষন্দ্রে পাল। অধ্যয়নে কি এদের কোনওপ্রকারের আসক্তি আছে? পড়েননি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থানের প্রতিবেদন–স্পষ্টাক্ষরে প্রকাশিত হয়েছে ছাত্রসমাজে, বিশেষ করে ছাত্রসমাজে, মদ্যাদি সেবন দ্রুতগতিতে শনৈঃ শনৈঃ বর্ধমান!– এদের গায়ে কাটব হরিন্নামের ছাপ! মাথা খারাপ!
খলিফে পক্ষের আরেক খাজা বললেন, বিলক্ষণ! ভালুকের সব্বাঙ্গে লোম। এম-এর তেড়ি কাটবে কোথায়?