বাড়িতে এসে গান গাইতে গাইতে স্নান করেছে। এত সময় নিয়ে স্নান সে করেনা খুব। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ সেজেছে। পারফিউম মেখেছে। শোবার ঘরটা সাজিয়েছে। নতুন চাদর বিছিয়েছে বিছানায়। দুটো শুধু বালিশ ছিল, নতুন দুটো বালিশ যোগ করেছে। পুরোনো বনেদি বাড়ি চৈতালীর। নিচের তলায় বসার ঘর, খাবার ঘর, রান্নাঘর, ওপর তলায় চারটে শোবার ঘর। একটায় অপ্রয়োজনীয় অথবা কখনও প্রয়োজন হবে বা হতে পারে এমন জিনিস পত্রে ঠাসা। একটায় চৈতালী থাকে। আরেকটা অতিথির জন্য। আরেকটায় থাকে শকুন্তলা। শকুন্তলা পুরোনো কাজের লোক। জন্ম থেকেই এখানে আছে, একসময় তার মা কাজ করতো এ বাড়িতে। শকুন্তলা জিজ্ঞেস করেছে, আজ অশোকবাবু আসছে নাকি চৈতি, এত সাজগোজ করছো যে? শুনে বিরক্ত কণ্ঠে চৈতালী বলেছে, তুমি যে দিদি কী আবোল তাবোল বকো, অশোক বউ নিয়ে সুখের সংসার করছে, ও আসবে কেন?
–তাহলে, নতুন ভাগ্যবানটা কে শুনি?
চৈতালী হেসে বলেছে, এলেই দেখতে পাবে।
শকুন্তলা প্রচুর রান্না করেছে আজ। বিজয় আর চৈতালী ক্যাণ্ডেল-লাইট ডিনার করবে। তারপর শোবার ঘরে চলে যাবে, দরজা বন্ধ করে দেবে ঘরের। জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়েছে। বিছানা থেকেই আকাশ আলো করা চাঁদটা দেখতে পাবে। জোৎস্নায় ঘর ভরে যাবে, আর ওই আলোয় তারা শরীরে শরীর ডুবিয়ে স্নান করবে। সারারাত শোবার ঘরটীয় চৈতালী জুই এর সুঘ্রাণ ছড়িয়ে রাখে। নিজের গায়েও সুগন্ধী। বাড়িটায় যেন ফুলের উৎসব হচ্ছে। কণিকার রবীন্দ্রসঙ্গীত চালিয়ে দেয়। হৃদয়বাসনা পূর্ণ হলো গানটি বাজতে থাকে। চৈতালী গাইতে থাকে কণিকার সঙ্গে। কখনই খুব ভালো গাইতে জানে না চৈতালী, কিন্তু কণিকার গানগুলো বড় হৃদয় দিয়ে গায়। হৃদয় দিয়ে গাওয়া গান, গানের গলায় না গাইলেও, অত সুরেলা গলা না হলেও, বেশ ভালো শোনায়।
চৈতালী একটা নীল রঙের শাড়ি পরেছে। ইচ্ছে করেই খুব বড় গলার ব্লাউজ পরেছে। স্তনজোড়া উঁকি দিচ্ছে, দিক। লরিয়েলের কালো রং চৈতালীর চুলে। সামা ন্যই পেকেছে যদিও, চৈতালী মুছে ফেলেছে সাদার চিহ্ন। চল্লিশের টান টান শরীর, কিন্তু চুলে বার্ধক্য, ঠিক মেলে না। এমনিতে কালো সাদায় তার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু সেক্সবয়ের সঙ্গে সাতটা দিন ঘনিষ্ঠ সময় কাটাবে, বয়সের চিহ্ন এসে না হয় এই সাতটা দিন না বিরক্ত করুক।
বিজয় ফোন করেছে দমদমে নেমেই। ব্ল্যাক লেবেলের একটা বোতল আর দুটো গ্লাস এনে শোবার ঘরের খাটের পাশে রাখে চৈতালী। এরকম অ্যাডভেঞ্চার আগে কখনও করেনি সে। এরকম উত্তেজনাও আগে সে বোধ করেনি। একটা অচেনা মানুষের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হলো, তার সঙ্গে যৌনসম্পর্কে যাওয়ার জন্যই সব আয়োজন দুজন করছে, কোনও প্রেম হলো না, কেউ কারও জন্য ভালোবাসি শব্দটা উচ্চারণ করলো না, যৌনতা ছাড়া জগতের অন্য কোনও বিষয় নিয়ে কোনও আলোচনা হলো না। দুজনের কিন্তু কারওরই মনে হচ্ছে না খুব বিচ্ছিরি কোনও কাজ তারা করছে। দুজনই প্রাপ্ত বয়স্ক। দুজনই একা থাকে। কোনও স্বামী বা কোনও স্ত্রীকে ঠকিয়ে কিছু করছে না তারা, শরীর চাইলে শরীর তারা তবে কেন মেলাবে না!
সকাল থেকেই শরীরে বান ডাকছে। চৈতালীর মনে হতে থাকে সে নিতান্তই ষোলো বছর বয়সী এক কিশোরী। না হয় সে ষোলো বছর বয়সীই। ষোলো বছর যখন বয়স, তখন সে কঠিন কঠিন বই পড়ে কাটিয়েছে, চল্লিশ বা পঞ্চাশ বয়সীরা যা করে। সেই ষোলোটা ফেরত পাওয়ার যদি সুযোগ হয়, তবে ফেরত সে নেবে না। কেন! কাউকে তো দিব্যি দেয়নি যে ফেলে আসা কোনও বয়স সে কোনওদিন ফেরত নেবে না।
চৈতালীর কাছে বিজয় সম্ভবত আস্ত একটি পুরুষাঙ্গ ছাড়া আর কিছু নয়। সে বলে কয়েই সাতদিন শুতে আসছে চৈতালীর সঙ্গে। শুধু শরীরের আকর্ষণকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে একটা সম্পর্ক। চৈতালী ভাবে, সবসময় যে আগে মন, পরে শরীর হতে হবে তারই বা কী মানে, শরীর আগে, মন পরে হওয়াটাই বরং বেশি যৌক্তিক। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই নিশ্চয়ই বিজয় ওকে জড়িয়ে ধরে গভীর করে চুমু খাবে। তারপর সোজা শোবার ঘরে। দৃশ্যগুলো কল্পনা করে চৈতালী। আবেগে চোখ বোজে। শরীরে নিভৃতে গর্জন করে সুখের স্রোত। শকুন্তলাকে বলে রেখেছে, ঘরের দরজা বন্ধ করে যেন সে শুয়ে থাকে, দরকার হলে ডাকবে। কেবল খাবার সময় শকুন্তলার ডাক পড়ে। শকুন্তলা জানে নিয়মগুলো। অশোকের সময় এরকমই ঘটতো। চৈতালীর ডিভোর্সের পর শকুন্তলা বলেছে অনেকবার, এবার একটা বিয়ে। করো চৈতি। বিয়ে করবো না করবো না বলে কয়েক বছর পার করেছে। তারপর অশোকের সঙ্গে যখন প্রেম করছে চৈতালী, শকুন্তলা বলেছে, তাহলে একজন বন্ধু কেই পার্মানেন্ট করে নাও। কাউকে যে ইচ্ছে করলেই কিছু করে নেওয়া যায় না, তা শকুন্তলাকে শত বলেও বোঝাতে পারে না চৈতালী। শকুন্তলা চৈতালীর জন্মের সময় থেকে এই বাড়িতে আছে। বিয়ে করেনি। অথচ চৈতালীর বিয়ে না করা আর স্থায়ী সঙ্গী না নেওয়া নিয়ে তার দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। নিজের চেয়ে মনিবের পরিবারকে আপন করে দেখলে বুঝি এই হয়।
.
২. বিজয় এলো। ফটো দেখে বা স্কাইপেতে দেখে যেমন অনুমান করেছিল, তার চেয়ে অন্যরকম, যতটুকু লম্বা ভেবেছিল, তার চেয়ে বরং খানিকটা বেশি, যতটা মোটা লাগছিল, তার চেয়েও স্লিম, যতটা সুদর্শন ভেবেছিল, তার চেয়েও বেশি সুদর্শন বিজয়। দুজন হই বিজয়, হাই চৈতালী বলে হাত মেলালো। শোবার ঘরে নেওয়ার বদলে চৈতালী বসার ঘরে নিয়ে এলো বিজয়কে। দুসোফায় মুখোমুখি বসলো দুজন। একটুখানি দৃষ্টি বিনিময়। একটুখানি হাসি দুজনের ঠোঁটে। চৈতালী বসে আছে বিজয় উঠে এসে ঠিক স্কাইপেতে যেমন বলতো, ইউ লুক সো হট হানি। কাম অন, লেটস হ্যাভ সেক্স বলে কি না। বিজয় নিজেই কাপড় খুলে ফেলতো, ক্যামেরাকে নামিয়ে দিত উরুসন্ধির দিকে, আর চৈতালিও খুলতো বুকের কাপড়। বিজয় সেরকম কিছুই বললো না। বলুক বা না বলুক, দুটো যৌনকাতর নারী পুরুষ আজ মুখোমুখি বসে আছে। দুটো শরীরের কামনা আজ পূর্ণ হতে যাচ্ছে।